Posts

গল্প

তাবিজ

April 19, 2024

আতাউল সাজ্জাদ রবিন

Original Author আতাউল সাজ্জাদ রবিন

156
View
রাত বারোটা পঁচিশ, বিছানার উপর মরার মতো শুয়ে আছি, ঘড়ির মতে আর চার ঘন্টা পয়ত্রিশ মিনিট বাকি। ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুম আসছে না। মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে একটু আগে দেখা টাইম ট্রাভেলের একটা ভিডিও। তারপর এলো তার আগে করা একটা কমেন্টের চিন্তা। তারপর ডিপার্টমেন্টের এক ছেলের বিদেশ চলে যাওয়ার পোস্টটা। মনে হচ্ছে সারাদিন যা করেছি সেটা এখন আমার মাথায় রিউইন্ড হচ্ছে। তারপর ননস্টপ সেটা চলেই যাচ্ছে, বিকেলে এক কাপ কফি খেয়েছিলাম, মনে হচ্ছে জিহ্বায় সেটার স্বাদ ফিরে এসেছে। অথচ আমার এখন ঘুমানো দরকার। সব চিন্তা বাদ দিয়ে মাথাটা ফাকা করে দিলাম। তারপর আস্তে করে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। অনেকক্ষন হলো চোখ বুজে আছি। ঘুম তো আসছেই না, এখন মাথায় ঘুড়ছে, সাড়ে চার ঘন্টা পর যেটা হবে সহ্য করতে পারবো তো। নাহ, আবার ঘড়িটার দিকে তাকালাম, ছোট একটা মেটাল চেইন ওয়াচ, মামার গিফট করা, টিক টিক করেই যাচ্ছে। এখন বাজে একটা চল্লিশ। আর মাত্র তিন ঘন্টা।

তারপর আবার ঘড়ি চেক, দুইটা পয়তাল্লিশ, এখন মনে হচ্ছে রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে চোখে, কিন্তু এখন ঘুমানো যাবে না। আর দুই ঘন্টা বাকি।

আবার ঘড়ি চেক, তিনটা পঁঞ্চান্ন, এখন কোন মতে জেগে আছি। আর মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিট।

ফোনের এলার্মে চোখ খুললাম। ঘড়িতে চারটা চল্লিশ।  

ফজরের আজান দিবে পাঁচটা পাঁচে, হাতে সময় পঁচিশ মিনিট। মাথার ডানপাশে রাখা টর্চ আর দড়জার আড়ালে রাখা কোদালটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম। কবরস্থান এখান থেকে পাঁচ মিনিট দূরে।  

হাটতে হাটতে মনে হলো পেছনে কেউ আছে, একটু একটু ভয় পাচ্ছি। যদিও ভয় পাওয়ার যে এক্সাক্ট কারনগুলো, যেগুলোতে সাধারন মানুষজন ভয় পায়, সেগুলোতে আমার বিশ্বাস নেই, তার পরও ছোটবেলায় মসজিদে আর মায়ের চেষ্টায় শেখা দোয়াগুলো মনের অজান্তেই পড়তে শুরু করলাম। হঠাৎ মনে হলো ঘাড়ের উপর কেউ গরম নিঃশ্বাস ফেলছে। সেই সন্দেহ দূর করতে নিজের হাতের কোদালটাকে পেছনে না ফিরেই তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুড়িয়ে আনলাম। নাহ, কিছু থাকলে তো সেটার সাথে লাগার কথা। নেই কিছু।

কবরস্থানে চলে এসেছি। গতকাল দেয়া নতুন কবরটা টর্চ জ্বালিয়েও খুঁজে পেতে একটু কষ্ট হলো। যদিও গতকাল অনেকক্ষন ধরে কবরটা দেখে গিয়েছিলাম যাতে রাতে চিনতে কষ্ট না হয়। তারপরও এখন চিনতে বেগ পেতে হলো।

কবরটার কাছে গিয়ে কোদালটা উচিয়ে তুললাম, আমার কাজ বেশি না, কবর থেকে মাটি সড়িয়ে লাশের বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে লাগানো তাবিজটা খুলে নিতে হবে। তারপর আবার কবরটা ঢাকা দিয়ে চলে যাবো ।  এরজন্য যদিও নিজের উপর বিশ্বাস রেখে ভেবেছিলাম কাজটা করে ফেলতে পারবো, এখন মনে হচ্ছে মাত্র পঁচিশ মিনিটে কিচ্ছু হবে না। নিজের পাছায় কষিয়ে একটা লাথি মারতে ইচ্ছা করছে। দশ মিনিট চলে গিয়েছে। ঘড়ির সেকেন্ডের কাটা একটা একটা করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমিও আর দেড়ি না করে কোদাল চালাতে লাগলাম।

আজ থেকে তিনদিন আগে, রহুল কবিরাজের অধীনে থাকা জ্বীনেরা বিদ্রোহ করেছে । সবমিলিয়ে মোট এগারোটা জ্বীন ছিল তার কাছে । সবগুলো মিলে প্রতীজ্ঞা করেছে তাকে মেরে ফেলবে । রহুল কবিরাজও কম যায় না, ঝাড়ফুক করে নিজেকে বেঁধে ফেলে সে। তবে আর যাই হোক সারাজীবন নিজেকে তো আর বেঁধে রাখা যায় না। দুইদিন আগে, রাতের বেলা নিজের তৃতীয় বউকে দেখে, নিজের কামনা আর নিয়ন্ত্রন করতে পারেনি সে। অপবিত্র শরীরে বান কাজ করবে কেনো। তার বউয়ের রুপে থাকা জ্বীনটাই গলায় চেপে ধরলো তার। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু। তার সাগরেদরা রাতের মধ্যেই কবর দিয়ে দিল তাকে। কিন্তু তাড়াহুড়োর মধ্যে কবিরাজের বাম পায়ের তাবিজটা খুলতে ভুলে গেলো।

তবে সাগরেদদের মধ্যেও সন্দেহ ছিল, যার কাছে এই তাবিজ থাকবে তাকে কিভাবে মেরে ফেললো। তাদের ওস্তাদ কালী নদীতে সাত বছর বলি দেওয়ার পর এই তাবীজ পেয়েছিল। সেখানে তাদেরও কম খাটনি হয়নি, বছর বছর তো আর তাদের চাহিদা মতো মানুষ পাওয়া যেতো না। আর মানুষ নিখোঁজের পর থানা পুলিশের ঝামেলাও তো কম না। 

তবে যেভাবেই হোক, তাবীজটা ওস্তাদের শরীরে থাকা অবস্থাতেই অসাবধনতাবশত তাদের ওস্তাদ মারা গিয়েছেন। তাবীজটা তার কার্যকারীতা হারিয়েছে বলেও তার সাগরেদরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, কিন্তু কবিরাজের খাদেমদের মধ্যে কবিরাজের পরই যার স্থান, আব্দুল্লাহ, সে পরদিন জানালো, তাদের ওম্তাদ তাকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছে। তাবীজটা তার শরীরে থাকায় মৃতুর পর তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিভাবে সেটা খুলে আনতে হবে, তার দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। 

"অমাবশ্যার রাতে অবশ্যই কুমার, তুলা রাশি, এমন কাউকে যে সময়ে অশীরিরা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালি থাকে, সে সময়ে একা গিয়ে তুলে আনতে হবে। 

সাগরেদরা সবাই চন্দ্রমাস হিসাব করে দেখলো, সবচেয়ে নিকটবর্তী অমাবশ্যা আগামীকাল। তাদের মধ্যে, এখন পর্যন্ত নারী সঙ্গে আসে নি, তুলা রাশি, এমন লোকদের খুঁজতে শুরু করলো, তাদের মাজােরের আসেপাশে কয়েক গ্রাম খুজে তুলা রাশির , কুমার এরকম নয়জন পাওয়া গেলো। কিন্তু কেউই নিজের জীবন বাজি রেখে, কবরস্থানে যেতে রাজি হলো না।

তখনই তারা আমার দেখা পায়। গতকাল আমার সকালে দুটো ক্লাস ছিল। আজকেও ছিল, তবে টিচাররা স্ব-ইচ্ছায় আমাদের ভেকেশন দিয়ে দিলেন তিনদিনের, মানে আগামী বৃহস্পতিবার ক্লাস হবে, তবে যা মনে হচ্ছে, সেদিনও কোন ক্লাস হবে না। 
তাই আমিও হলে থাকা ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে এসেছিলাম। কোথায় যাবো সেটাই ভাবছিলাম, একবার মনে হলো বাড়ির দিকে যাই, তারপর আবার কি মনে করে বাড়িতে যাইনি, এমনিতেই ভিসিতে বসে ছিলাম হঠাৎ একটা বাস এলো সবাই দেখলাম হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠছে, আমিও উঠে পড়লাম। তারপর বাস কোন দিকে যাচ্ছে সেটাও খেয়াল করিনি। হঠাৎ একসময় দেখি পুরো বাস খালি সবাই নেমে গিয়েছে আর বাসটা ইউটার্ন নিচ্ছে, একবার ভাবলাম ক্যাম্পাসেই ফিরে যাই, তারপর নিজেকে জোড় করে বাস থেকে নামালাম। আরেকটা বাসে উঠে পদ্মা পাড় হয়ে চলে এলাম। তবে বাসে বসে একটু মন খঁচ খঁচ করছিল, ভার্সিটির বাসটার নামটা অন্তত দেখা দরকার ছিলো, তাহলে এখন লিখতে পারতাম। যাইহোক, পকেটে হাত দিয়ে দেখি একটা পাঁচশোর নোট আর শুধু ত্রিশ টাকা। এখন আমি যদি এমন কোথাও যাই, যেখানে ভাড়া ত্রিশ টাকার বেশি তাহলে পাঁচশর নোটটা ভাঙাতে হবে, আর আমার এই বাসের হেল্পারের উপর একদম বিশ্বাস নেই। ব্যাটা পাঁচশোর নোট নিয়ে বলবে পঁঞ্চাশ টাকা দিয়েছি। আমারতো আবার ক্যাম্পাসেও ফেরা লাগবে। তাই ভাড়া ত্রিশের বেশি হওয়ার আগেই হেল্পারকে ডাক দিয়ে বলেছিলাম ভাড়া ত্রিশের কোটা পূরন করলে যেনো আমাকে নামিয়ে দেয়। যাইহোক, ব্যাটা আমায় নামিয়েছিল এই মাজাড়ের পাশে। একটু খিদেও পেয়েছিল, তবে মাজারের তখন সিন্নি দিচ্ছে, সেটা খেয়েই এখন মাজাড়ের ভেতরে ফ্যানের নিচে বসে আছি। তখনই বুড়ো মতো একলোক মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
" বাবা তোমার নাম কি? " 
নাম বলার পর দেখি ব্যাটা জন্ম তারিখও জিজ্ঞেস করে। জন্মতারিখ বলার পর মুখটা কানের কাছে এনে জিজ্ঞেস করলো, কখনও নারীর সাথে রাত কাটিয়েছেন? 

মনে মনে বলছি, তুই এতসব জেনে কি করবি??
তোর বাপ লাগি?

আর উপরে শুধু মাথাটা ডানে বায়ে করলাম একবার। ব্যাটা উঠেই "পাইছি" "পাইছি"  বলে দৌড় শুরু করলো।

সেখান থেকেই ফেসে গেলাম। এমনভাবে চেপে ধরলো যে আর না করতে পারলাম না। আর মনের মধ্যে সুপ্ত সন্দেহটাতো আছেই, সুযোগ যখন আছেই একবার দেখে নিই কিছু আছে নাকি।

কোদাল চালাতে চালাতে মাটি সব সড়িয়ে ফেললাম, বাশের মাচাটা সড়াতে যাবো, ঘাড়ের সবকটা লোম দাড়িয়ে গেল। চোখের কোনায় একটা কিছু নড়াচড়া করাও টের পেলাম। চোখ ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখলাম, একটা মেয়ে মনে হচ্ছে সদ্য তার মাথাটা ধর থেকে আলগা করা হয়েছে। ঘাড় থেকে ছিটকে ছিটকে রক্ত বেরুচ্ছে।
" এখন আমার কি করা উচিত?? " নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম। জীবনের শেষ সূর্যটা কি গতকাল বিকেলেই দেখে ফেললাম। আজকের সূর্যটাও উঠতে আর ঘন্টাখানেক বাকি, ততক্ষন কি বেচে থাকবো, এটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে কিছু সময় পরও যখন দেখলাম সেটা শুধু দাড়িয়েই আছে কাছে আসছে না, তখন একটু সাহস পেলাম। আবার কোদাল চালাতে যাবো , একে একে সাতটা দেহ আমাকে ঘিড়ে দাড়িয়ে আছে। তবে কেউ কাছে আসার চেষ্টা করছে না।  আবার সবগুলো আমাকেই দেখছে, সাতটা দেহের সামনে এভাবে একা একটা কবরে কোদাল চালানো কতটা ভয়ংকর ব্যাপার, এই যায়গায় না থাকলে বোঝা যাবে না। মনে হচ্ছে আরেকবার কোদাল চালালেই সবগুলো ঝাপিয়ে পরবে আমার উপর।  হাতের কোদালটা ডান হাত থেকে বা হাতে নিলাম, শক্ত করে বাগিয়ে ধরলাম কোদালটা, একটা যদি এগিয়ে আসতে চায়, সেটার উপরই চালাবো। কিন্তু কোদালটা বা হাতে নিতেই বা দিকের ছেলেটা দুই পা পিছিয়ে গেলো। 

কি হলো সেটা প্রথমে না বুঝলেও কোদালটার দিকে ভালো করে তাকাতেই বুঝতে পারলাম। কিছু আরবী লেখা জ্বলজ্বল করছে।

এবার মনের ভয় একটু দূর হলো, ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচটা তিন। মাচাটা একটানে সড়িয়ে কবরে নামলাম। সাতটা দেহ কবরটাকে ঘিড়ে দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিবে, আর এদিকে কবিরাজের লাশটা ফুলে গিয়েছে। জঘণ্য লাগছে দেখতে। কোদালটা উপরের দিকে তুলে কবর থেকে একলাফে বেড়িয়ে এলাম।
হাতের টর্চটা আরো আগেই ফেলে দিয়েছি । কবরটা মাটি চাপা না দিয়েই দৌড় শুরু করলাম ঘড়িতে দেখি পাঁচটা চার, আরো একমিনিট, একমিনিট আমাকে বেচে থাকতে হবে। পেছনে ওদের জ্যান্তব গর্জন শুনতে পাচ্ছি, পাঁচটা পাঁচ এখনও আজান শুরু হচ্ছে না কেন?
সাথে সাথে হোচট খেলাম। কোদালটা হাত থেকে ছিটকে গেছে। সাথে সাথে ওদের গতিও কমে এল। আমার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। শীকারকে বাগে পেয়ে গিয়েছে। তবে আমি জানি আমি বাচবো, এখনই আজান দিয়ে দিবে। আজানের সাথে সাথে আজকের মতো তারাও ভ্যানিশ হবে। 

সাথে সাথে আজানটাও পড়লো, অন্যদিন আজান শুনলে বিরক্ত লাগে, আজ মনে হচ্ছে আমাকে বাচানোর দূত হয়ে এসেছে।

ওখান থেকে উঠেই যে ঘড়ে আমাকে থাকতে দেয়া হয়েছিল, সে ঘড়ে গেলাম। কোদালটা সেখানেই ফেলে এসেছি , হাত ঘড়িটার কাচ ভেঙ্গে গিয়েছে, কিন্তু এখনও সময় দেখাচ্ছে, ছয়টা তেরো। আমার বারোটা বাজাানোর জন্য এই তেরোই যথেষ্ট। 

আব্দুল্লাহ ঢুকলো রুমে। তার এখানে আমার উদ্দেশ্য স্পষ্টতই বুঝতে পারছি। তার সব সাগরেদকে রাতে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে দিয়েছে। যাতে সবার আগে সে দেখা করতে পারে। এখন সে একটা জিনিসই চায়। "তাবীজটা"। 
সে মুখ খোলার আগেই বললাম, "তাবীজটা পাই নি, আর যা হয়েছে আমার সাথে, মনে হয় না জীবনে ভুলতে পারবো। " যতটা পারা যায় ভিক্টিম কার্ড খেলতে হবে এখন, আর যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বেরুতে হবে এখান থেকে। 

"আমি যাচ্ছি।" সাড়ে ছয়টায় এখানকার স্টেশন থেকে বাস যাবে ঢাকায়।

আব্দুল্লাহ কিছু না বলে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর আমার ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো, "চলেন আপনাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসি। অনেক কষ্ট দিলাম। 

"আই এম ফাকড। " মোক্ষম চাল, বাসে তুলতে গিয়ে যখন দেখবে সাড়ে ছয়টায় ঢাকার কোন বাস নেই তখনই আটক করবে আমাকে।

আমার সামনে সামনে হাটছে আব্দুল্লাহ। বাসস্ট্যান্ড পৌছে গিয়েছি। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্নই বলতে হবে। ঢাকার একটা বাস আছে সাড়ে ছয়টার। টিকিট কাটাও শেষ, টাকাটাও আমার দেওয়া লাগলো না। বাস আসার পর বাসে উঠতে যাবো। ঠিক তখনি আব্দুল্লাহ পেছন থেকে শক্ত করে হাতটা চেপে ধরলো, মনের কথা সহজেই বুঝতে পারলাম। 
মনে মনে বলছে, "হুজুড়,  সবকিছু সবার সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না। সাবধানে থাকবেন। " 
আমার মুখটা কালো হয়ে গেলো। ব্যাটা তাহলে সব জেনেই আমাকে বাসে তুলে দিলো। ভাবছিলাম জিতে গিয়েছি। হারিয়ে দিয়েছি ওদের।

বাসে বসেই আব্দুল্লাহকে দেখলাম এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মাথায় ঝড় চলছে অনবরত, ব্যাটা বুঝলো কিভাবে।

তখনই প্লট হোলটা মাথায় এল । মনে পরলো আব্দুল্লাহর আমার রুমে আসার সময়টা  "ছয়টা তেরো"।  প্রায় একঘন্টা। ব্যাটা নিশ্চয় সারারাত জেগেছিল।  আমি কবর থেকে চলে আসার পর ওই ব্যাটাও কবরে গিয়েছে,  ফোলা লাশটার পায়ের দিকটা চেক করেই তাবিজে লাগানো ছোট সুতলিটার দাগ দেখতে পেয়েছে। তারপরই চলে এসেছে আমার কাছে ওটা নিতে। তবে যখনই বুড়ো বুঝতে পেরেছে আমার সাথে পারবেনা, তার অন্য লোকেদেরও সে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে রেখেছে যাতে তাবিজটা তার হাতেই আগে আসে। তাই সুড় সুড় করে আমাকে বাস স্ট্যান্ডে দিয়ে গেলো। 

কিন্তু কিন্তু কিন্তু, একটা কিন্তু, তাদের সবই ঠিক ছিল যতক্ষন না তারা আমায় এটাতে জড়িয়ে নেয়। আমি এতটাও ভালো মানুষ নই যে, নিজের জীবন বাজি রেখে কিছু উদ্ধার করবো, সেটা আবার অন্য কাউকে দিয়ে দেবো।  

যেটার জন্য এত কষ্ট সেটার তো কিছুটা গুরুত্ব আছে। গুরুত্বটা টেরও পেলাম, যখন আব্দুল্লাহ ঘড়ে ঢুকলো আর সাথে সাথে তার অপর সাগরদদের ঘুমের ঔষুধ খাওয়ানোর ব্যাপারটা ব্যাটা চিন্তা করছিল। তবে আব্দুল্লাহও আমাকে ফাকি দিতে পেরেছে, পুরোটা সময় একবারও কবরে যাওয়ার কথাটা চিন্তা করে নি সে। হয়তো ওস্তাদের সাথে থেকে অনেক কিছুই লুকাতে হতো তাকে। সেটারই একটা বিশেষ ব্যবস্থা নিজেই বের করে ফেলেছিল। ওস্তাদকে তো অনেক কিছু ফাকি দিয়েছিলোই সাথে আমাকেও ঘোল খাইয়ে দিলো। তারপরও একটা প্রশ্ন রয়েই যায়, কবিরাজ ব্যাটা মরলো কিভাবে যদি তারকাছে তাবিজটা আগে থেকেই থাকে, তার তো সব জানার কথা।
এর একটাই উত্তর হতে পারে, তার সাথে তার পোষা জ্বীনদের ঝামেলা হয়েছিল, কিন্তু কি নিয়ে সেটা আমরা না জানলেও, মনে হচ্ছে কবিরাজ নিজেই নিজেকে স্বপে দিয়েছে মৃত্যুর হাতে।

বাসের জানালার পাশে বসে ভাবছি, ডিপার্টমেন্টে এবার দারুন একটা ক্যাচাল লাগানো যাবে।

Comments

    Please login to post comment. Login