পোস্টস

গল্প

দুটি শেয়াল এবং একটি কি দুটি শরীর

১৬ জুন ২০২৪

উজান ঠাকুর

 

                   (১)
    কি ও মনা মিয়া,কি করবা এহন?
    ছার,নাইল্লা ফালামু৷   
    নাইল্লা?
    মনা মিয়া ২বার মাথা নাড়ে,হু
    দ্যাশের পরিস্থিতি কিন্তুুক ভালা না, বুঝছ?মাষ্টার আকাশে তাকায় উদাস ভঙ্গিতে। ১টি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে-কি যে হইব!
    মনা মিয়া খানিকটা উদ্বিগ্ন হওয়ার চেষ্টা করে। ক্যান কি হইছে ছার?
    মাষ্টার বিরক্ত হয়ে তাকায় তার দিকে। আরে মিয়া, তুমি ত দেহি কিছুই জান না!
    মাষ্টার হাটে হনহনিয়ে। মনা মিয়ার ভয় হয়। এইসব শিক্ষিত মানুষ গুলারে নিয়ে এক সমস্যা,কারনে অকারণে গোস্বা করে।দ্যাশের অবস্থা ভালো না তো মাষ্টারের তাতে কি,আর তার নিজেরই বা কি!
    তয় মাষ্টার মানুষটা ভালো।সজ্জন।
    মনা মিয়া পড়েছে এক কেলাস পর্যন্ত। মাষ্টারই তাকে চিনিয়েছে অ,আ,ই—এখন অবশ্য এই তিনটাই মনে আছে।বাকি গুলো ঘাম হয়ে মাথা থেকে ঝরে গেছে অনেক আগেই।
    কিন্তু মাষ্টারের রহস্যটা কোনও ভাবেই শেষ হয় না৷ ক্ষেতের আল ধরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তাই ভাবে।তবে মাষ্টারের মনের চাইতে বেশি রহস্য কিন্তু তার ওই বইয়ের আলমারিটায়।বাব্বারে, কত্তো বই!মনা বেশ কয়েকবার চিন্তা করে দেখেছে, কি থাকতে পারে ওই বইগুলোতে?—পায়নি।তবে এটা মনা জানে, যে ওই বইগুলোতে আর যাই থাক শান্তি নেই।কত গল্প বলে মাষ্টার! কিন্তু কোন গল্পেই কোন সুখ নেই।খালি কিসের আন্দোলন, সংগ্রাম, রাজা মহারাজাদের মারামারি, কাটাকাটি খেলা।কোন গল্পেই সে আজ পর্যন্ত পায়নি,যে তার মত মানুষ সুখে আছে,বা থাকতে পারে।আর ভালোবাসারও যে গল্পগুলো বলে মাষ্টার–তাতেও শেষ পর্যন্ত কোন আনন্দ নেই। বিরহ,বিচ্ছেদ আর কষ্টে গল্পগুলো ভরপুর। 
    —এসব ভাবতে ভাবতেই এর মধ্যে সে ২বার উষ্ঠা খায়,১টা কেচোকে পারা মেরে প্রায় ভর্তা করে দেয় এবং সদ্য ত্যাগকৃত গোরুর গরম গোবরে তার পা ছুয়ে যায়।ঘাসে পা মুছতে মুছতে সে আরো জোরে হাটে।
    মকবুল চাচার সাথে দেখা হলে লম্বা সালাম দেয়।তারপর যতটা পারে বিগলিত হয়ে বলে-ছাছা,হার দুইডা দেওন লাগে এট্টু!
    ক্যারে, কি করবি অহন? 
    মনা মাটির দিকে তাকিয়ে বিনীত হয়ে বলে- নাইল্লা ফলামু ত!
    মকবুল চাচা হাসে।মনার মাথায় হাত রাখে।নিছ৷ তুই ছাইলে না করি ক্যামনে ক ত দেহি!
    এবার হাসে মনা মিয়াও।কাইল সহালে?
    আইছ।
    আবার হাটে। 
    হাঁটতেই থাকে।ইচ্ছা ছিল ময়না দের বাড়িটা পার হবে এদিক ওদিক না তাকিয়েই।মেয়েটা বেজায় বাঁদর। একবার দেখা হলেই কম্ম সারা! ভেংচি কাটবে, খ্যাপাবে,ঝগড়া করতে চাইবে— 
    অথচ দ্যাখো,বুবুর সাথে কি দুস্তিই না পাতে প্রত্যেক বার!আর বুবুটাও যা লাই দেয় ওটাকে!
    শেষ রক্ষা হতে হতেও হয় না। তেতুল গাছটার নিচ দিয়ে যাবার সময় তেঁতুল ছুড়ে মারে ময়না। 
    আঃ
    ময়না চোখ ট্যারা করে দ্যাখায়। কিরে বুলবুলি, কই যাস?
    মনা অবাক হয়।কিয়ের বুলবুলি? 
    ওই যে—তারপর মনার লুঙ্গির দিকে ইশারা করে। বেশ সাধ করে লাল লুঙ্গিটা মনা কিনেছিল হাট থেকে।
    ময়না হাসে খলখলিয়ে। হাসতে হাসতেই তারপর ছড়া কাটে —
     "বুলবুলি বুলবুলি, তর ফুটকি ক্যারে লাল
      আল্লা তালায় লেইখ্খা দিছে হিন্দু-মুসলমান"
    মনার ইচ্ছে হয় গাছ থেকে ওটাকে হিরহির করে টেনে আনে!
    তেঁতুল খাইবি?
    না।
    আরে খা না এট্টা!
    কইছি না খামু না!
    অ্যাহ,কইছি না খামু না!মুখ ভেংচে আবার তেঁতুল ছুড়ে মারে তার দিকে।তরে দেয় ক্যাডা।বুলবুলি ফক্কি!হি হি হি,হি হি হি৷ 
    হারামজাদি মারমু ছাক্কা!
    ময়না তেড়িয়া হয়ে বলে-আহারে, আমার বীর বাহাদুর আইছে!মার না, মার দেহি!
   কিন্তু হাঁটুতে লেগে ঠিকই ঘট করে ১টা শব্দ হয়৷ 
    ময়না হত্যদন্ত হয়ে নামতে থাকে নিচে৷ তুই খাড়া মনা, আজগা খাইছি তরে! 
    মনা হাসতে হাসতে দৌড়ে পালায়।


                   (২) 
    শেখের ব্যাটার দম আছে।ঘন ঘন একনাগাড়ে অনেকক্ষণ কথা বলার পর থামে নজরুল ভাই৷ তারপর আবার বলে- ব্যাডাডা কি,আঙুলটা তুলে যখন বলল—
    মনার হাসি পায় নজরুল ভাই কে দেখে।তবে হাসে না,পাছে নজরুল ভাই রাগ করে!চোখ মুখ শক্ত করে শেখের ভাষন এ্যাকটো করে দ্যাখায় নজরুল ভাই।
    নজরুল ভাইকে কিন্তু তার ভালোই লাগে। এমন ভাবে মনার সাথে কথা বলবে যেন সে নজরুল ভাইয়েরই সাথের কেউ!
    নজরুল ভাই ঢাকা থেকে ফিরেছে কাল রাতে।ঢাকার অবস্থা নাকি খুব একটা ভালো না। মিটিং, মিছিল, হরতাল নাকি লেগেই আছে।
    নজরুল ভাই আপন মনে গজগজ করতে থাকে।
    সাথে করে আনা অনেক গুলো পত্রিকার একটা তুলে চোখ বুলায়।
    নরজুল বাই, আমি জাইগা। 
    নজরুল মুখ তুলে তাকায়, চলে যাবে?
    মনা মিয়া মাথা নাড়ে।
    আচ্ছা যাও,আবার আইসো।
    আইচ্ছা৷ 
    সেখান থেকে এসে রহমত মাতুব্বরের পুকুর পাড়ে এসে বসে৷ মন চায় গোছল করে,কিন্তু পানি বেজায় ঠান্ডা বলে নামার সাহস করে না। অথচ ওপাড়ের লোকটা কি আরাম করেই না গোছল করছে!
    রাসেল পাগলা। সিজনাল পাগল৷ সরা বছর ঠিক,মাঘ মাসের শেষের দিকেই হঠাৎ দেখা দেবে মাথার গোলমাল। এখনও বোধহয় গোলমাল কিছু আছে।
    রাসেল পাগলা মগ দিয়ে একটার পর একটা পানি ঢালে।মাথায় পানি ঢালা শেষ হলে লুঙ্গি সামান্য ফাক করে উরু সন্ধির মাঝে এমন জোরে পানি ছুড়ে মারে—দেখে ভয় হয় মনার। ভেঙ্গেচুরে না যায় কিছু!
    মনার হাসি পায়। করেকি রাসেল পাগলা! একবার, দুবার, তিনবার—মোট নবার পানি ছুড়ে মারে ওখানটায়।
    পেছনে রহমত মাতুব্বর কখন এসে দাড়িয়েছিল কে জানে।শিমুল গাছটার দিকে তাকিয়ে ঘন দাড়ি গুলোকে হাতাতে হাতাতে বলে-মনা মিয়া,মাছ ধরবার পারবা? 
    মনা চমকে পেছনে তাকায়।কিন্তু তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- পারমু না ক্যান,খুউব পারমু।
    তাইলে নাইম্মা পড়।
    একটু ইতস্তত করে বলে- ঠেলাজাল হইব একটা?
    ঠেলাজাল? দাড়িতে আবার হাত বুলায় মাতুব্বর।তারপর ডাকে টাট্টুকে।
    ধুপধাপ করে দৌরে আসে সে।
    সুরমা রাঙা চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় হয় মনার।বাপরে!এই চোখ কে না ভয় পায় এ গ্রামে?
    পানি কম বলে অল্প দাপাদাপিতেই লফায় মাছ।
    বড় বড় মাছ দেখে খুশিই হয় রহমত মাতুব্বর। 
    তুইও নে এট্টা—
    না না না না না, আমি কি করুম মাছ দিয়া?
    আরে বেডা ধর।
    একটা বড় রুইমাছ হাতে আসে তার। সত্যি বলতে কি, খানিকটা লোভও কিন্তু হয়েছিল প্রথম প্রথম।মাছ ধরতে ধরতে লুঙ্গির কোচড়ে লুকিয়ে ফেললে দেখতে পাবে কোন শালা?কিন্তু ভয়ও হয়। সুরমা চোখের ভয়। সাথে অনেকটা ঘৃনা মেশানো।রহমত মাতুব্বর লোক সুবিধার না।
    মাছে হাতে বীর দর্পে বাড়ি ফেরে মনা। শেফালিকে দ্যাখায়।
    শেফালির মুখ ততক্ষণে হা হয়ে গেছে।সে অবাক হয়ে অতবড় মাছটা প্রানভরে দ্যাখে। বোধহয় প্রানটা ভরে গেলে মুখ খুলে-অতবড় মাছ ফাইলি কই?
    মনা মিয়া রহস্য করে হাসে।রহমত মাতুব্বরের পুরুষ্কুনিরত্যান ধরছি।
    আড়চোখে মাছটার দিকে তাকিয়ে গরম হয়ে শেফালি বলে-চুরি করছস?
    ইহ,আমার ঠ্যাকা লাগছে!চুরি করুম ক্যান?আমারে মাছ মারতে কইছিলো–ধইরা দিসি হের লাইগা দিছে।তারপর একটু হেসে বলে-বুবু মাছ ভাইজ্জা দেওনা! 
    শেফালি ঘর ঝাড়ু দেওয়া থামায়। মশল্লা থাকলে না!
    আইন্না দেই?
    টেকা পাইবি কই?
    আছে আমারত্যান।
    মনা তখনই আবুল মিয়ার দোকানে ছোটে।
    ফিরে মুখের বিস্তৃত হাসিটা সেরে নিয়ে বলে -শক্ত কইরা ভাজবা, হ্যা বুবু!
    যাঃ ভাজমুনে।

                   (৩)
    ঢাকা শহরে নাকি পঁচিশ তারিখ রাতে বহু মানুষকে মেরে দিয়ে গেছে মিলিটারিরা।ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো নাকি বিরান করে দিয়েছে।যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই নাকি মেরেছে।নজরুল ভাই বলে এসব মনা মিয়াকে।কিন্তু তার মনে ১টা খটকা থেকেই যায়।মিলিটারি জিনিষটা কি?কোন জন্তু জানোয়ার? তবে কি অনেকগুলো জন্তু জানোয়ার নেমেছে ঢাকার রাস্তায়?
    ঢাকা শহর বিরান হলো মার্চের শেষে, কিন্তু গ্রামে মিলিটারি আসে মে মাসের শুরুতে।
    মনা মিয়া তখন তার পাট ক্ষেতে।হঠাৎ চিৎকার।মিলিটারি নামছে,মিলিটারি নামছে—চেঁচাতে চেঁচাতে ছোটে রমেশ নাপিত।মিলিটারিরা নাকি বাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। 
    মনা মিয়ার ইচ্ছে হয় গিয়ে দ্যাখে,কিন্তু এতদিনে মিলিটারি দ্যাখার সাধ তার কমেছে। সে জেনেছে ওগুলো কোন জানোয়ার টানোয়ার নয়, সাধারণ মানুষই৷৷ 
    মনার খটকা কমে না। মানুষ হলেও, ওরা কি পাগল?মাথা খারাপ?তবে এমন ভাবে ভাবে মানুষ মারে কেন?আর পাগল হলে ওদেরকে বেঁধে রাখলেই হয়!
    ওরাও কি রাসেল পাগলার মত সিজনাল পাগল?আর কোনদিন তো ওদের কথা শোনেনি!
    মিলিটারি এসেছিল ওই দিন,কিন্তু আসল উত্তাপটা টের পাওয়া যায় বেশ কয়েকদিন বাদে।যখন ওই পাগলদের সাথে গ্রামেরও কিছু সার্থপর মানুষ পাগল হলো।
    আগুন আগুন আগুন 
    হায় আল্লা,ঘরে আগুন লাগল ক্যামনে?ও আল্লা,ও বুবু কই গেলা,ও বুবু,ঘরে আগুন লাগছে—মনা চিৎকার করতে করতে রীতিমত মরিয়া হয়ে ওঠে,কিন্তু বুবুর কোন পাত্তা নাই।চোখ ফেটে জল বেরিয়ে যায় তার ঘরটার জন্যে। 
    পানি আনতে গিয়ে দ্যাখে,একসারে অন্তত দশটা ঘর জ্বলছে। অনেকগুলো কান্না ও আর্তচিৎকারও কানে আসে।
    মিলিটারিরা তাদের পাড়া জ্বালিয়ে দিয়েছে।  
    কিন্তু বুবু গেল কই।দুইজনে চাইলে এখনও ঘরের অনেকখানি বাঁচানো যায়।
    হঠাৎ কোত্থেকে কমলা ফুফু ছিটকে এসে পড়ে উঠানে।কাদে, আর হাপায়।ধইরা নিছেগা গো, ধইরা নিছেগা।
    মনা দৌড়ে তাকে তুলতে যায়৷ পারেনা।
    কি অইছে,কি অইছে?ও ফুফু!
    শেফালিরে নিয়া গ্যাছে,ও মনারে, শেফালিরে লয়া গ্যাছেগা ওরা।কমলা ফুফু বুক আর মাটি চাপড়ায় অনবরত। 
    ওয়াল্লা এডা কি কইলা ফুফু,ওয়াল্লা, শেফালিরে?ওরে নিছে ক্যান?
    চট করে মনার মনে পড়ে যায় নজরুল ভাইয়ের কথা গুলো।সে জানে এরপর শেফালির সাথে কি হতে চলেছে।
    সাথে সাথে এক ছুট লাগায় মনা। ছোটে,ছোটে।ইস্কুল ঘরে ওদের ডেরা, মনা প্রানপণে ছোটে।
    হঠাৎ নজরুল ভাই এসে জাপটে ধরে ফেলে তাকে।
    ছাড়ান দাও নরজুল বাই।ছাড়ো আমারে।
    আরে পাগল হলে নাকি? কই যাও?
    ওরা আমার বুবুরে ধইরা নিছেগা গো নরজুল বাই!মনা মিয়া হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
    আগে আমার কথা শোনো,এখন তুমি গেলে তোমাকেও মেরে দেবে। 
    মনা মিয়া অবাক হয়ে বলে-এডা কি কও নরজুল বাই?মরলে মরুম, আমারে যাইতে দ্যাও।মনা চিৎকার করে কাঁদে, ও বুবু গো!
    একটা ছোটখাটো ধমক দিয়ে নজরুল বলে-আরে,পাগল হলে নাকি?আগে একবার চল রহমত চাচার বাড়িতে যাই।
    ধমকে খানিকটা কাজ হয়। কিন্তু তারপরেও মনা একবার বলে-কিন্তু বুবু?
    আরে এসো আমার সাথে!
    রহমত মাতুব্বর হল সেই জাতীয় মানুষ, যারা পাকিস্তানি মিলিটারিদের সাথে সাথে পাগল হওয়া দেশীয় জানোয়ার।তার সাথে দ্যাখা হয় সন্ধারও বেশ পরে, তার বাড়িতে। হাউমাউ করে মনা তার পায়ে পড়ে।আপনে আমার ধম্মের বাপ গো রহমত ছাছা, আপনাগো খায়া মনুষ, আমার বুবুরে ছাড়ান দ্যান!মনা পাগলের মত তার পায়ে চুমায়,চাটে,মুখ ঘষে।
    ওদিকে রহমত মাতুব্বর বলে ভিন্ন কথা।মনাকে সরিয়ে পা ধোয়ার পানি আনতে বলে বিরক্ত হবার ভান করে। আরে বেআক্কল,মিলিটারি গুলান হইলো ব্যাটা মানুষ, ওরা কি আর রান্নাবারা করবার জানে?এরলাইগাই ত শেফালিরে লয়া গ্যাছে,রান্নাবারাডা কইরা এই কাইল পরশুর মইদ্যেই চইলা আসবো।
    কিন্তু নজরুল বুঝতে পারে সবই।
    কাইল পরশু না, শেফালির নগ্ন লাশটাকে পাওয়া যায় ১১দিন পর। অনেক মানুষের সাথে মেরে তাকেও যে গোরে ঠাসা হয়েছিল,সেখান থেকে ২টো শেয়াল কিভাবে জানি বের করে টেনে নিয়ে যায় ঝোপটার কাছে৷ মকবুল চাচাই সর্বপ্রথম দেখতে পায় লাশটা। তবে তার সাধ্য কি—শেয়ালের মুখ থেকে শিকার ছিনিয়ে আনে?যেখানে মানুষই পোশাকে ঢেকে রাখা শরীরটা না খেয়ে ছাড়তে চায় না, সেখানে সামান্য শেয়াল হয়ে তারা নগ্ন দেহটা কেমন করে ছেড়ে দেবে বল তো দেখি!
    তাছাড়া, যেখানে ভালোবাসা মানুষশেয়ালের মুখ থেকে ভালোবাসার বস্তু ছিনিয়ে আনতে জানে না, সেখানে জন্তু শেয়ালের মুখ থেকে বাহুবল কিভাবে কিছু ছিনিয়ে আনবে?
    আর যাই হোক, শেয়াল হিসেবে তো তারা সলিড, নাকি!

    মনা বারবার অজ্ঞান হয়,কাদে,চিৎকার করে, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চায়।অনেক বুঝিয়ে ২দিন পর  তাকে নিয়ে নজরুল পাড়ি দেয় বর্ডারের দিকে।ওপাড়ে যাচ্ছে এমন অনেকের সাথে তার পরিচয় আছে৷


                   (৪)
     মনা আর নজরুল যখন গ্রামে আসে তখন প্রায় জুন মাসের শেষাশেষি। পাশের গ্রামের অপারেশনের পর, অনেকটা লুকিয়েই চলে আসে এ গ্রামে।
    নরজুল বাই,রহমত ছাছার বাড়িত যাওন লাগে এট্টু!
    নজরুল আঁতকে ওঠে!আরে বল কি, পাগল হলে তুমি? 
    কিন্তু মনা মানতে চায় না। এট্টু কতা ছিল তার সাতে,কতাডা কইয়াই চইলা আসবোনে—
    কিন্তু নজরুল রাজি হতে চায় না।সে ভালো মতনই জানে লোকটা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, এখন তার কাছে যাওয়া মানেই হলো নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। 
    অগত্যা, রাজি তাকে হতেই হয়।

                   (৫)
    রহমত ছাছা বাড়িত আছেন!
    কেডারে?
    আমি ছাছা।এট্টু বাইরে বারান....
    আমি কি রে হারামজাদা, নাম নাই?
    নজরুল আর মনাকে দেখে চমকে ওঠে রহমত মাতুব্বর।
    মানা বিগলিত হাসি হেসে বলে-ছাছা,অজু আছে?
    রহমত মাতুব্বর আতিপাতি করে কাদেরকে খোজে,গেল কই হারামজাদা!কিন্তু মুখে বলে-ক্যা—ক্যারে?
    মনা ষ্টেনগানটা বের করে তার ডগাটায় ময়লা ঝাড়বার মত আঙ্গুল দিয়ে মোছে।মুছতে মুছতেই বলে-আপনের আব্বাগোরে মাইরা দিছি ত,এইবার আফনের ফালা আয়া পরছে।এর লাইগা এট্টু কালমা পড়া লাগে যে ছাছা!
    মনা আবার হাসে।
    ঠ্যা–ঠ্যা–ঠ্যা–ঠ্যা–ঠ্যা—গুলি হয় পরপর পাঁচটা।পড়ে যায় রহমত মাতুব্বর।  ভেতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে তার বড় বৌ।গুলি লাগা ফোকর হওয়া জায়গা গুলো থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয়।তাই দেখে অজ্ঞান হয় বুড়িটা।
    ওদিকে মনা হাসে আকাশ বাতাস কাপিয়ে।গুলি বল আর কামানই বল,তা কি কোন চির প্রশান্তির হাসিকে ঢেকে দিতে পারে?

    আচ্ছা,হ্যা,ভালো কথা, শেয়াল ২টো আবার আসবে কখন?