পোস্টস

সমালোচনা

কোরিয়ান মুভি Exhuma কেন দেখবেন??

১৭ জুন ২০২৪

লবেরু

মূল লেখক Facebook

#EXHUMA_MovieReview

Exhuma 2024
IMDB: 7.3/10
Genre: Horror, Mystery, Thriller 
Runtime: 2h 14m

⛔হালকা স্পয়লার⛔

প্লটঃ আমেরিকায় বসবাসরত ধনী ও সম্ভ্রান্ত কোরিয়ান পরিবার 'পার্ক ফ্যামিলি' একটি অতিপ্রাকৃত ও অশুভ শক্তি দ্বারা আক্রান্ত। আর এই অশুভ শক্তি দ্বারা প্রত্যেক জেনারেশনের প্রথম সন্তান মানে বড় জন আক্রান্ত হয়। পার্ক ফ্যামিলির বর্তমান প্রজন্মে জন্ম নেওয়া শিশুটির এই অশুভ শক্তির প্রভাবে মৃতপ্রায় অবস্থা। শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য তারা Hwa-rim (Kim Go-Eun) ও Bong-gil (Lee Do-hyun) নামে দুইজন শামানকে দায়িত্ব দেয়।

দুই শামান রহস্য উদঘাটন করতে কোরিয়ায় ফিরে আসে এবং বুঝতে পারে, এই ফ্যামিলিরই এক মৃত বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির অতৃপ্ত আত্মার কারণেই সবকিছু হচ্ছে। তাই তারা এই অশুভ শক্তি দূর করতে সাহায্য নেয় তাদের পূর্ব পরিচিত Kim Sang-deok (Choi Min-sik) এবং Young-geun (Yoo Hai-jin) এর। Kim Sang-deok একজন আধ্যাত্মিক ভূতত্ত্ববিদ (Feng shui) আর Young-geun একজন মর্টিশান (মৃতদেহ সৎকার ব্যবসায়ী)।

তারা সবাই বুঝতে পারে, অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে পার্ক ফ্যামিলির সেই বয়োজ্যেষ্ঠ মৃত ব্যক্তির শরীর কবর থেকে তুলতে হবে। আর এই লাশটি তুলতে গিয়েই পুরো কাহিনীর সূত্রপাত হয়। Exhume অর্থাৎ কবর খুঁড়ে লাশ তোলা শব্দ থেকেই মুভির নাম Exhuma হয়েছে। 🧟‍♂️

☃️ সত্যি বলতে মুভিটা সুন্দর..অভিনেতাদের অভিনয়ের ব্যাপারে কিছু বলার নাই। সবাই তাদের বেস্ট দিয়েছে, কিন্তু প্লটটাই কেমন জানি! যদিও মুভিটা ইনকামের দিক দিয়ে ট্রেইন টু বুসানকে পেছনে ফেলেছে!

আর মুভিতে বেশকিছু হিস্টোরিক/মিথিক্যাল ব্যাপার আছে, যা ডিটেইলসে বোঝানো নাই। যার কারণে আমাদের কাছে মুভিটা জটিল লাগতে পারে। কোরিয়ানরা সহজেই এগুলোর সাথে রিলেট করতে পারছে দেখেই সর্বোচ্চ ইনকামের লিস্টে চলে এসেছে।

আর হচ্ছে সাবটাইটেল! যেহেতু এটা অনলাইনে অফিসিয়াল রিলিজ না, তাই এখনকার সাবটাইটেল সুবিধার না। জাপানি কথাগুলোর তো সাবটাইটেলও নাই। 😑
যাই হোক, মুভির নেগেটিভ রিভিউ দিচ্ছি না। মুভিটা অবশ্যই ভালো, অফিসিয়াল সাবটাইটেল সহ রিলিজ পেলে হয়তো বুঝতে আরো সুবিধা হবে।

হ্যাপি ওয়াচিং 🤗

#EXHUMA_Details

Exhuma মুভিতে কোরিয়ান ইতিহাস, কালচার, মিথলজিক্যাল অনেক টার্ম আছে, যা মুভি দেখে বোঝা যায়না। এগুলোর একটু ব্যাখ্যা আছে স্পয়লারে।

⚠️Spoiler Alert⚠️

১. পার্ক পরিবারঃ 
জাপান-কোরিয়া যুদ্ধের সময় কিছু কোরিয়ান মানুষ সম্পত্তি ও ক্ষমতার লোভে নিজের দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে জাপানের সাথে হাত মিলিয়েছিল। পার্ক পরিবারও এমন একজনের বংশধর। তাদের দাদা জাপানের সাথে হাত মিলিয়ে প্রচুর সম্পদ এবং ক্ষমতার মালিক হয়েছিল। দেশদ্রোহিতার কারণে অন্যান্য কোরিয়ান মানুষজন ওই ফ্যামিলিকে পছন্দ করতো না। তাই পরে তারা কোরিয়া ছেড়ে আমেরিকায় চলে যায়। 👨‍👩‍👦

২. দাদার প্রতিহিংসাপরায়ণ আত্মায় পরিণত হওয়ার কারণঃ 
কোরিয়ান বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির কবর সঠিক জায়গায় না হলে তাদের আত্মা প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠে। একেতো দাদার কবর পরিত্যক্ত পাহাড়ে একটা দানবের উপর দেওয়া হয়েছে, তার উপর তার নেক্সট জেনারেশন কখনোই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেনি, তার কবরে খাবার অফার করেনি, এইজন্য সে ক্ষেপে ছিল ও ক্ষুধার্ত ছিল, যা পরে আত্মাটার খাওয়া দেখে বোঝা যায়। এছাড়াও তার নেক্সট জেনারেশন তারই উপার্জিত সম্পত্তির কারণে এখন আরাম আয়েশে থাকছে কিন্তু তার পরিচয়কেই ঘৃণা করছে, দাদার আত্মা তার বংশধরদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছিল। অকৃতজ্ঞ বংশধর থাকার চাইতে না থাকাই ভালো। 😬

৩. Feng shui
একটি প্রাচীন চীনা বিশ্বাস আছে যে আপনার বাড়ি যেভাবে তৈরি করা হয়েছে বা আপনি যেভাবে আপনার ঘরের আসবাবপত্র সাজান, তা আপনার সাফল্য, স্বাস্থ্য এবং সুখকে প্রভাবিত করে। Feng shui- রা মূলত কোথায়, কীভাবে, কোন অ্যারেঞ্জমেন্ট করলে তা সৌভাগ্য নিয়ে আসবে তা ঠিক করে; এখন সেটা বাড়ি/ বিজনেস সাইট/ বিভিন্ন স্থাপত্য/ ফার্নিচার যেকোনো কিছুই হতে পারে। এমনকি কোথায় কবর দিলে মৃত ব্যক্তির আত্মা উৎপাত করবে না, শান্তি পাবে তাও ঠিক করে দেয়। Feng shui তত্ত্ব মতে পাঁচটি উপাদানের ভারসাম্য বজায় থাকলে ওই স্থানের সৌভাগ্য বজায় থাকে- wood, fire, earth, metal & water. এই পাঁচটি উপাদান Yin & Yang তত্ত্বের সাথেও জড়িত। 🪵🔥⛰️🔩💧

৪. Gisune:
Gisune হচ্ছে জাপানিজ Feng shui শামান। Gisune কে আবার kitsune বা Fox spirit ও বলা হয়। মুভিতে সাদা মুখের এক জাপানি পুরুষকে দেখানো হয়, সেই হচ্ছে Gisune. এই Gisune ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। সেই মূলত মুভির দানব বা Oni কে তৈরি করেছে। 🦊

৫. মেটাল রডঃ 
ধারণা করা হয় যে Gisune-র সাহায্যে জাপানিজরা কোরিয়ার বিভিন্ন জায়গায় একশটা মেটাল রড স্থাপন করে। এর ফলে জায়গাগুলো অভিশপ্ত হয়ে যায় আর ওখানকার সব পজিটিভ এনার্জি চলে যায়। 🔩

৬. Grave robber:
Grave robber বলতে মূলত কবর ডাকাত বোঝালেও মুভিতে তারা একটা রিলিজিয়াস কাল্টের অংশ ছিল। যারা তাদের কোরিয়ার মাটি থেকে মেটাল রড সরানোর দায়িত্বে ছিল। 👥

৭. Oni/ Anima তৈরির কারণঃ
Gisune বুঝতে পেরেছিল যে, সাধারণ মেটাল রডগুলো যেকোনো সময়ে যেকেউ তুলে ফেলতে পারে। তাই সে রিচুয়ালের মাধ্যমে এক দুর্ধর্ষ জেনারেলের শরীরে জ্বলন্ত তলোয়ার ঢুকিয়ে রিচুয়ালের মাধ্যমে তাকে মেটাল রড বানিয়ে ফেলে এবং সাথেসাথে তাকে একটা দানবেও পরিণত করে, যা Oni/Anima নামে পরিচিত। এরপর জেনারেলের কফিনকে সেই নির্দিষ্ট জায়গায় মেটাল রডের মতো সোজা করে পুঁতে ফেলে জেনারেলকে ঐ সাইটের গার্ডিয়ান বানিয়ে দেয়। 👹

৮. দাদার কবরঃ 
Gisune-ই পার্ক ফ্যামিলিকে তাদের দাদার কবর সেই জায়গায় দিতে বলে। সে পার্কদেরকে বলে যে, কবর দেওয়ার জন্য এই জায়গাটাই সেরা। কিন্তু তার গোপন আশা হলো, এরকম পরিত্যক্ত, অন্ধকার পাহাড়চূড়ায় কবরের কথা কেউ জানতে পারবেনা আর যদি জানতেও পারে তাও তাদের দাদা অনেক ক্ষমতাসীন লোক হওয়ায় কেউ তার কবর খুঁড়তে পারবে না, কারণ ওখানে পাহারা থাকবে। আর Grave robber- রাও মেটাল রড সরাতে পারবে না। আর বাই চান্স এটাকে তুলে ফেললে নিজেরাই দানবের হাতে পটল তুলবে। 🌝

৯. The Fox split the spine of the tiger:
অবিভক্ত কোরিয়ার ম্যাপ দেখলে বোঝা যায় এটার আকৃতি অনেকটা বাঘের মতো। কোরিয়ানদের শক্তি, সমৃদ্ধি, ভাগ্যকে নষ্ট করার জন্য Gisune (aka kitsune, the fox) অনেক হিসাব নিকাশ করে Oni রুপী মেটাল রড স্থাপন করে যা পার্ক দাদার কবরে লেখা সংখ্যা দেখে বোঝা যায়, আর যেটা ম্যাপের বাঘের আকৃতির মেরদন্ড বরাবর পড়ে। ওই জায়গাটা ৩৮° অক্ষরেখার কাছে, যেখানে পরে উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়া ভাগ হয়েছে। 🇰🇷

১০. Oni কফিন থেকে বেরোনোর কারণঃ
প্রথমতই কফিনটা তার নির্দিষ্ট স্থানচ্যুত হয়েছিল। আবার
কবর খোড়ার সময় একটা সাপের মাথা কেটে ফেলা হয়েছিল। এটা কোনো সাধারণ সাপ ছিল না। এটাকে জাপানিজ রুপকথায় Nure onna বলা হয়, যেটার মাথা মেয়ের মতো। এটাকে পানির প্রতীক হিসেবেও ধরা হয়। ওখানে পাঁচ এলিমেন্টের মাধ্যমে Oni সিল করা ছিল। মাটি-কবরের মাটি, কাঠ-কফিন, পানি-সাপ, আগুন ও ধাতু যা ঐ জেনারেলের বডিতে ছিল। কবর খোড়ার সময় দুর্ঘটনাক্রমে সাপটি মরে যায় আর পাঁচ এলিমেন্টের সাইকেল ভেঙ্গে যায়। এরপর কফিনকে তার জায়গা থেকে দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই জায়গার গার্ডিয়ান হিসেবে Oni সেখানে ফেরত যেতে বাধ্য ছিল। তাই সে জেগে ওঠে। 🧟‍♂️

১১. Yin & Yang
Feng shui এর  Yin এবং Yang তত্ত্ব মতে বিশ্বের সকল বিপরীত শক্তিগুলো আসলে একে অন্যের পরিপূরক, যেমন আলো ছাড়া ছায়া থাকা অসম্ভব। আর এগুলো জোড়ায় অবস্থান করে, যেমন- আলো-অন্ধকার, আগুন-পানি। বিপরীত শক্তিগুলো যেমন একটি ছাড়া আরেকটি অচল, তেমনি একটি দ্বারা আরেকটিকে ধ্বংসও করা সম্ভব। ☯️ এই সাইনটি কিন্তু সাউথ কোরিয়ার পতাকাতেও আছে! 🇰🇷

১২. Oni/Anima কে যেভাবে মা* রা হয়েছিলঃ
 Kim Sang-deok টেম্পলে থাকা Grave robber-দের ডায়রি থেকে মেটাল রডের কথা জেনেছিলেন। Kim আগুনের গোলা উড়ার সময় একটা ভিশন দেখে বুঝতে পারে Oni হচ্ছে একটা মেটাল রড। তাকে বানানো হয়েছিল আগুন আর মেটাল দিয়ে। আগুনের বিপরীত পানি আর ধাতুর বিপরীত কাঠ। তাই সে রক্তভেজা কাঠ দিয়ে Oni কে মে*রে ফেলে। 🔥💧

১৩. Hwa-rim আর Oni-র প্রথম দেখাঃ
যখন Hwa-rim আর Oni-র প্রথম দেখা হয়, তখন Hwa-rim বাঁচার জন্য নিজেকে Oni-র অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়। আর Oni এটা পরীক্ষা করার জন্য তাকে Melon আর Sweet fish সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। জাপানের পূর্বাঞ্চলের সেনাদের প্রতীক ছিল Melon, আর পশ্চিমাঞ্চলের Sweet fish. Hwa-rim জানত এই Oni পশ্চিমাঞ্চলের, কারণ কোরিয়ায় যেসব জাপানি জেনারেল যুদ্ধে এসেছিল তাদের বেশিরভাগ পশ্চিমাঞ্চলের ছিল। Hwa-rim ঠিকঠাক উত্তর দিলেও পরে Oni বুঝতে পারে Hwa-rim একজন মানুষ। তাই পরে আক্রমণ করে। এরপরে অবশ্য ওরা দানবটাকে মারার টাইমে Sweet fish নিয়ে যায়, আর সুইট ফিশের লোভে Oni বের হয়ে আসে। 🐟

১৪. Hwa-rim এর দাদীঃ
Hwa-rim এর সাথে তার দাদীর আত্মাকে দেখানো হয়। Hwa-rim যেহেতু শামান, ধারণা করা যায় তার দাদীও পাওয়ারফুল শামান ছিল, যার কারণে মা*রা যাওয়ার পরেও তার আত্মা নাতনিকে প্রটেক্ট করছিল। Hwa-rim এর দাদীকে দেখে Oni চলে আসার কারণ হলো Oni- কে কোনো আত্মার সাথে ফাইট করার জন্য বানানো হয়নি। মানুষের থেকে মেটাল রডকে প্রটেক্ট করার জন্য বানানো হয়েছে। তাই Oni যখন বুঝতে পারে যে ওইটা একটা আত্মা আর তার জায়গাটা খোড়া হচ্ছে, তাই সে ওখান থেকে ব্যাক করে। 
আবার কোনো এলাকার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন গাছকেও পবিত্র আত্মারূপে মনে করা হয়। তাই Hwa-rim ওই গাছের আত্মা সেজে কথা বলছিল। Spirit/ghost এরা নিজেদের মধ্যে ফাইট করেনা। সব শত্রুতা মানুষের সাথে! 😐