পবিত্র কোরআনের কোথাও সময় শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি। এখানে দিন এবং রাত ব্যবহার করা হয়েছে। দিনকে রাত দ্বারা আবৃত করা হয়েছে অথবা দিনকে রাতের ভেতর থেকে টেনে আনা হয়েছে। গ্রহ তারা চাঁদ সূর্য ইত্যাদির অবস্থা দেখে চক্রাকার ঘটনাকে আমরা ব্যখ্যা করি। ব্যখ্যা করতে বা পরিমাপ করতে বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করি। আমরা এর নাম দিয়েছি সময়। আমরা রাত বা দিনের সাপেক্ষে যে সময় রচনা করি তা আপেক্ষিক। মূলত সময় আমাদের মানসিক ভ্রম যার কোন অস্তিত্ব নেই। স্রস্টার সময় হচ্ছে সৃষ্টি আর সৃষ্টির সময় হচ্ছে স্রস্টা। অর্থাৎ তারা উভয়েই একত্রে সময়। স্রস্টা এবং সৃষ্টি মূলত অখণ্ড অবিভাজ্য। সময় স্থির। অবিভাজ্য। আপেক্ষিক। সৃষ্টি জগতকে বাদ দিয়ে সময়কে কল্পনা করা যায় না। সৃষ্টিকে কল্পনা করে বা কেন্দ্র করেই সময়কে ধারণা করা হয়। চক্রবর্তী স্রস্টা এবং সৃষ্টি চলমান। চলমান প্রক্রিয়াকে সময় দ্বারা পরিমাপ করা যায় না। আমরা জানি শিষ্য ছাড়া গুরু হয় না আবার গুরু ছাড়া শিষ্য হয় না। একই ভাবে সন্তান ছাড়া পিতা হয় না বা পিতা ছাড়া সন্তান হয় না। আরেকটু এগিয়ে চিন্তা করলে দেখা যায় সৃষ্টি ছাড়া স্রস্টার অস্তিত্ব নেই। উল্টোভাবে ভাবলে স্রস্টা ছাড়া সৃষ্টির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। সে হিসেবে গুরুর সময় হচ্ছে তার শিষ্য আর শিষ্যের সময় হচ্ছে তার গুরু। একইভাবে পিতার সময় হচ্ছে তার সন্তান আর সন্তানের সময় হচ্ছে তার পিতা। স্রস্টার সময় হচ্ছে সৃষ্টি আর সৃষ্টির সময় হচ্ছে স্রস্টা। সৃষ্টি থেকে স্রস্টাকে বা স্রস্টা থেকে সৃষ্টিকে বিচ্ছিন্ন করলে সময় অবশিষ্ট থাকবে না। সেকারণে সময় অবিভাজ্য, চক্রবর্তী ও স্থির। স্রস্টা এবং সৃষ্টি জগৎ চলমান। আমরা স্থানকে কল্পনা করে সময় কল্পনা করি। আমাদের অবয়ব এবং আশেপাশের সৃষ্টিকে স্রস্টার সাথে চেতনাগত বিচ্ছিন্ন ভেবে স্থির সময়কে একটি চলমান সময় হিসেবে কল্পনা করি। মূলত সময় প্রবাহিত হওয়া মনে করাটা মানসিক ভ্রম। স্রস্টার অবিরাম সৃষ্টি করে যাওয়া আর সৃষ্টির স্রষ্টাকে স্মরণ করতে থাকা একত্রে তাদের অখণ্ড অবিভাজ্য সময়। ভ্রমকে ত্যাগ করে অখণ্ড অবিভাজ্য সময়ের মাঝে ঢুকে যাওয়ার স্থির অনুভব একটি মানসিক অবস্থাকে নির্দেশ করে। এই মানসিক অবস্থা প্রচলিত সময়ের অধীন নয়।