পোস্টস

গল্প

কৃষ্ণকলি ও শুভ্রর প্রেমের গল্প

১৮ জুন ২০২৪

শাহ আমান উল্লাহ

কৃষ্ণকলি ও শুভ্রর প্রেমের গল্প

বৈশাখের ঝড়ের রাতে শুভ্রর প্রথম দেখা হয় কৃষ্ণকলির সাথে। ঢাকার ব্যস্ত শহরের এক কোণে, ঝড়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে শুভ্র একটি ছোট্ট কফিশপে আশ্রয় নেয়। কৃষ্ণকলি ছিল সেই কফিশপের গায়িকা, তার কণ্ঠে ছিল অবর্ণনীয় মাধুর্য। শুভ্রর হৃদয়ে যেন ঝড়ের থেকেও তীব্র ঝড় বয়ে যায় তার গান শুনে।

প্রথম দেখায় ভালোবাসার অদ্ভুত অনুভূতি শুভ্রর মনে জাগে। সে কৃষ্ণকলির দিকে তাকিয়ে ছিল, তার চোখে ছিল গভীর আকর্ষণ। কৃষ্ণকলি একবার চোখ তুলে দেখে শুভ্রর দিকে, এবং তাদের চোখের মিলনে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে।

শুভ্র প্রতিদিন সেই কফিশপে আসা শুরু করে, শুধু কৃষ্ণকলির গান শুনতে। একদিন শুভ্র সাহস করে কৃষ্ণকলির সাথে কথা বলে, এবং ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কফিশপের বাইরে তারা একসাথে সময় কাটাতে শুরু করে, জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলে। কৃষ্ণকলি তার জীবনের কঠিন সময়ের গল্প বলে, আর শুভ্র তার পাশে থাকে, তাকে সাহস যোগায়।

কিছু মাস পর, শুভ্র কৃষ্ণকলিকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। কৃষ্ণকলির চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরে, সে শুভ্রকে আলিঙ্গন করে। তাদের ভালোবাসা ধীরে ধীরে আরও গভীর হয়, তাদের প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে সোনালী স্মৃতি।

কিন্তু সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একদিন কৃষ্ণকলির শরীরে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দেয়। ডাক্তাররা জানায়, কৃষ্ণকলির হৃদপিণ্ডে সমস্যা আছে, আর তার বেশিদিন বাঁচার সম্ভাবনা নেই। শুভ্রর হৃদয়ে আঘাত লাগে, কিন্তু সে কৃষ্ণকলিকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে তার পাশে থাকবে, যতদিন বাঁচবে।

কৃষ্ণকলির শেষ দিনগুলো শুভ্রর সাথে কাটে, প্রতিটি মুহূর্ত তারা একে অপরের ভালোবাসায় পূর্ণ করে তোলে। কৃষ্ণকলি শুভ্রর জন্য গান গায়, তার কণ্ঠে ছিল মরণোত্তম ভালবাসার সুর। শুভ্র প্রতিদিন তাকে তার প্রিয় ফুলের তোড়া এনে দেয়, এবং তাদের একসাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তকে স্মৃতিময় করে তোলে।

কৃষ্ণকলির মৃত্যুর দিন শুভ্র তাকে আলিঙ্গন করে, তার কানে ফিসফিস করে বলে, "তুমি আমার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।" কৃষ্ণকলি মৃদু হাসি দিয়ে শুভ্রর হাত চেপে ধরে, এবং শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

শুভ্রর জীবন কৃষ্ণকলির স্মৃতিতে পূর্ণ থাকে। প্রতিদিন সে কফিশপে যায়, এবং কৃষ্ণকলির গানের সুর মনে মনে আওড়ায়। তাদের ভালোবাসা কখনও ম্লান হয় না, শুভ্র জানে যে কৃষ্ণকলি তার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে ভালোবাসা মৃত্যুরও পরেও জীবিত থাকে, এবং সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও শেষ হয় না। কৃষ্ণকলি ও শুভ্রর প্রেম চিরন্তন হয়ে থাকে, তাদের ভালোবাসার সুর বয়ে যায় কালের পরিক্রমায়।