পোস্টস

গল্প

নয়নতারা ও রুদ্রের চিরন্তন প্রেম

১৮ জুন ২০২৪

শাহ আমান উল্লাহ

নয়নতারা ও রুদ্রের চিরন্তন প্রেম

শহরের কোলাহল থেকে দূরে, নিরিবিলি এক গ্রামে বসবাস করত নয়নতারা। তার নামের মতোই সে ছিল সুন্দরী, তার চোখে ছিল সমুদ্রের গভীরতা। নয়নতারা একজন বুনন শিল্পী ছিল, তার হাতে বোনা কাপড়ে যেন জীবনের সব রঙ ফুটে উঠত।

একদিন গ্রামের মেলায় রুদ্রর সাথে তার দেখা হয়। রুদ্র ছিল শহরের ছেলে, গ্রামে এসেছিল কিছুদিনের জন্য ছুটি কাটাতে। মেলার ভিড়ে নয়নতারার বোনা শাড়ির দোকানে তার চোখ পড়ে। শাড়ির নকশা দেখে রুদ্র মুগ্ধ হয় এবং সে এগিয়ে যায়। নয়নতারার সাথে প্রথম কথা বলার মুহূর্তেই রুদ্র তার হৃদয়ে কিছু একটা অনুভব করে।

নয়নতারা ও রুদ্রর মাঝে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা একসাথে গ্রামের পথে হেঁটে বেড়ায়, নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখে। নয়নতারা রুদ্রকে তার বোনা নকশার গল্প বলে, আর রুদ্র তার শহরের জীবনের গল্প শোনায়। তাদের এই বন্ধুত্ব অল্প সময়ের মধ্যেই গভীর ভালোবাসায় রূপ নেয়।

কিন্তু সুখ বেশিদিন থাকে না। রুদ্রর পরিবার তার জন্য শহরে একটি বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করে। রুদ্র যখন এই খবর নয়নতারাকে জানায়, তার হৃদয় ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে, তাদের ভালোবাসা সমাজের চোখে মেনে নেওয়া অসম্ভব। কিন্তু রুদ্র প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে নয়নতারাকে ছেড়ে যাবে না, তাদের ভালোবাসা অটুট থাকবে।

রুদ্র শহরে ফিরে যায়, কিন্তু নয়নতারা তার প্রতিটি দিনের শুরু এবং শেষ রুদ্রর চিঠি দিয়ে করে। প্রতিদিন তারা একে অপরকে চিঠি লিখে, তাদের অনুভূতি, দুঃখ, সুখ সব শেয়ার করে। নয়নতারা তার বোনা শাড়ির মধ্যে রুদ্রর জন্য ভালোবাসার নকশা তৈরি করে, আর রুদ্র নয়নতারার জন্য কবিতা লেখে।

কিছু মাস পর, নয়নতারা জানতে পারে যে তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে। তার জীবনের দিন গোনা শুরু হয়। সে রুদ্রকে তার অসুস্থতার কথা জানায় না, কারণ সে জানে রুদ্র তার কাছে ছুটে আসবে এবং তার নিজের জীবন বিসর্জন দেবে।

নয়নতারা তার শেষ চিঠিতে রুদ্রকে জানায় যে সে তাকে চিরকাল ভালোবাসবে, এবং সে চায় রুদ্র তার জীবন এগিয়ে নিয়ে যাক। চিঠি পড়ে রুদ্রর হৃদয় ভেঙে যায়। সে গ্রামের পথে ছুটে যায়, নয়নতারার কাছে পৌঁছানোর জন্য।

কিন্তু যখন সে পৌঁছায়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। নয়নতারা তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। তার হাতে ছিল রুদ্রর লেখা শেষ চিঠি। রুদ্র নয়নতারার বোনা শাড়ি ধরে কাঁদে, তার কণ্ঠে মিশে থাকে ব্যথা আর ভালোবাসার সুর।

নয়নতারার শেষকৃত্যে রুদ্র প্রতিজ্ঞা করে যে সে নয়নতারার স্মৃতিকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে। সে নয়নতারার প্রতিটি শাড়িকে সংগ্রহ করে রাখে, এবং তার কবিতায় নয়নতারার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা অমর করে রাখে।

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও মরে না। নয়নতারা ও রুদ্রের প্রেম সময় আর দূরত্বের বাধা অতিক্রম করে, তাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে। তাদের ভালোবাসার সুর বাতাসে মিশে যায়, এবং তাদের গল্প আমাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে যায়।