পোস্টস

উপন্যাস

কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়

১৮ জুন ২০২৪

শাহ আমান উল্লাহ

কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়

শুরু

 

শান্তপুর গ্রামের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়া। বসন্ত এলে লাল ফুলে ভরে যায় সবকিছু, আর তখনই যেন নবীন আর মেঘলার গল্প শুরু হয়। নবীন ছিল গ্রামের এক সাধারণ কৃষক, যার স্বপ্ন ছিল নিজের খামারে সফলভাবে চাষবাস করা। মেঘলা, গ্রামের স্কুলশিক্ষিকার মেয়ে, ছিল গ্রামের সবার প্রিয়। তার মায়ের মতো মেঘলাও স্বপ্ন দেখত শহরে গিয়ে বড় কিছু করার।

প্রেমের সূচনা

বসন্তের এক সন্ধ্যায়, নবীন যখন তার খামারে কাজ করছিল, তখন মেঘলা সেখানে আসে। সে খামারের পাশে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে ছিল। নবীন আর মেঘলার চোখাচোখি হয়, আর তাদের হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে। সেই সন্ধ্যা থেকেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তারা দেখা করত, একসাথে সময় কাটাত।

প্রেমের গভীরতা

নবীন ও মেঘলার প্রেম ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। মেঘলা নবীনকে তার স্বপ্নের কথা বলত, আর নবীন তার খামারের গল্প শোনাত। একদিন মেঘলা নবীনকে বলে, "তুমি জানো, আমি শহরে গিয়ে পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না।" নবীন তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়, "তুমি যা চাইবে তাই করবে। আমি তোমার পাশে থাকব, যেখানেই তুমি থাকো।"

কঠিন বাস্তবতা

কিন্তু সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মেঘলার বাবা-মা তার জন্য শহরে একটি বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করে। মেঘলা নবীনকে জানায়, তার হৃদয় ভেঙে যায়। নবীন তাকে বোঝায়, "তুমি যা চাইবে তাই করবে, কিন্তু তোমার স্বপ্নের পথ থেকে সরে যেও না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, এবং সবসময় করব।" মেঘলা বিদায় নেয়, কিন্তু নবীনের প্রতিটি দিন কষ্টের মধ্য দিয়ে কাটে।

হারানোর বেদনা

মেঘলার বিয়ে হয়ে যায়, এবং সে শহরে চলে যায়। নবীন তার খামারে কাজ করতে থাকে, কিন্তু তার মন সবসময় মেঘলার কাছে থাকে। একদিন সে জানতে পারে, মেঘলা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার স্বামী তাকে কোনো যত্ন নিচ্ছে না, এবং মেঘলা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নবীনের হৃদয়ে কষ্টের আগুন জ্বলে ওঠে, কিন্তু সে কিছু করতে পারে না।

শেষ বিদায়

এক শীতের রাতে, নবীন তার খামারে কাজ করছিল। হঠাৎই সে মেঘলার শেষ চিঠি পায়। চিঠিতে লেখা ছিল, "নবীন, আমি আর বাঁচতে পারব না। কিন্তু আমি জানি তুমি সবসময় আমাকে ভালোবাসবে। আমি তোমার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকব।" চিঠি পড়ে নবীনের চোখে অশ্রু ঝরে, এবং সে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে কাঁদে।

চিরন্তন প্রেম

নবীন প্রতিদিন কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে মেঘলার স্মৃতিতে ডুবে থাকে। সে জানে মেঘলা তার কাছে আর আসবে না, কিন্তু তার হৃদয়ে মেঘলার প্রতি ভালোবাসা কখনও ম্লান হবে না। নবীনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মেঘলার স্মৃতিতে ভরা থাকে, আর সে জানে যে মেঘলা তার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

শেষ কথা

নবীন আর মেঘলার প্রেমের গল্প আমাদের শেখায় যে সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও মরে না। তাদের ভালোবাসা ছিল চিরন্তন, যা সময় আর দূরত্বের বাধা অতিক্রম করে। তাদের হৃদয়ে ছিল একে অপরের জন্য গভীর ভালোবাসা, যা তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে স্মৃতিময় করে তোলে।