Posts

প্রবন্ধ

ফটোগ্রাফার ও ভিউয়ার।

June 21, 2024

সাইদ সুমন

একটা ছবি শরীরের জন্য ভিজ্যুয়াল ভ্রমণ, দেখা এবং প্রতিক্রিয়া হওয়া এইটাই নিয়ম, যে ছবি তে কিছু নাই শুধু শূন্য স্থান সে ধারণ করে কোন না কোন স্যেপ, এইবার আলোচনা করা যেতে পারে একটা স্থির- চিত্রে সবার মনে কি একি রকম ভাবে প্রতিক্রিয়া করে কিনা, সেটার সম্ভাবনা একদম নেই, এক একটা বিষয়ে ছবি এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে একেক জন এর মনে একেক ভাবে। 

একটা নির্দিষ্ট মুড একটা নির্দিষ্ট অনুভূতি সাজেশন দেয়, যুদ্ধের ছবি নিশ্চয়ই আমাদের হাস্য-রস পূর্ণ বা নীরব অনুভূতি দেয় না, যখন গোলাগুলির ছবি দেখা যায় সেখানে নিশ্চয়ই ভিউয়ার সাইলেন্স অনুভব করে না, যেমন ভাবে অনুভব করে একটা নদী দেখলে বা সমুদ্র, অতএব ছবির কন্টেন্ট ভিউয়ার কে অনুভুতির ভ্রমণ প্রস্তাব করেন এবং এই অনুভূতি ভ্রমনের প্রস্তাব সু অথবা কু হতে পারে না, মানে শুধু ফুলেল ছবি সু প্রস্তাব আর টয়লেট এর ছবি কু অনুভূতি ভ্রমনের প্রস্তাব তাও নয়, কোন গল্পে কি অনুভূতি হয় তা ভিউয়ার ভেদ পার্থক্য হয় তবে হরর ছবি দেখে হরর অনুভূতি এবং শান্ত ছবি দেখে শান্ত অনুভূতি অনুভব করাটাই স্বাভাবিক আচরন।

 একএক ধরনের আলোকচিত্র ভিউয়ার কে একএক ধরনের অনুভূতি দেয়, স্ট্রীট ফটোগ্রাফ যদি তাকে দেয় Humor/Joy, যুদ্ধের ছবি হয়ত তাকে দেয় উদ্বেগ ও আতঙ্ক, তেমনি ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি বিস্ময়কর অনুভূতি যদি দেয় ভিউয়ার কে, হয়তো ন্যুড ফটোগ্রাফি তাকে উত্তেজিত করে , বলা যেতে পারে ছবির বিষয়বস্তু ছবির একটা পরিচয় তৈরি করে, একটা ছবি কিভাবে পাঠ হবে নির্ভর করে পাঠকের জ্ঞান এর উপরে। হাই প্রফাইল কোন ফ্যাশন ফটোগ্রাফার এর কোন ছবি কে কোন ভিউয়ার এর কাছে অশ্লীল মনে হতে পারে, আবার কারো কাছে একই ছবি সুপার আর্ট মনে হতে পারে। 

ফটোগ্রাফার ভিউয়ার কে অনুভূতি মিথস্ক্রিয়ার প্রস্তাব দেয়, ভিউয়ার এর একটা বিশয় সম্বন্ধে যে জ্ঞান ও তার সাথে ফটোগ্রাফার এর প্রদত্ত বিষয়ের জ্ঞানের মধ্যে মিথস্ত্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি হয়, ফটোগ্রাফির লক্ষ্য এই মিথস্ক্রিয়া তৈরি করা, ভিউয়ার ফটোগ্রাফি সম্বন্ধে একটা ধারণা রাখেন, সেই ধারনার সাথে না মিললেও তিনি বুঝতে অপারগ হন। জার্মান এস্থেটিকস ডেডপ্যান যদি সকল ভিউয়ার এর জন্য উন্মুক্ত করা হয় তাহলে সাধারন অনেক ভিউয়ার হয়ত ছবির মধ্যের নাটকীয়তা miss করবেন, যে নাটকীয়তা হয়ত সে স্ট্রীট ফটোগ্রাফি বা যেকোনো action ফটোগ্রাফির মধ্যে দেখে থাকেন।

 অতএব ভিউয়ার এর মধ্যে অনেক লেয়ার আছে, আর্ট নিয়ে জানাশোনা একধরনের ভিউয়ার, আর কম জানাশোনা ভিউয়ার, সেলফ ঠিক মতো জন্ম নেয়নি এমন শিশু দর্শক, বা রাস্তার পাগল আরও অনেক শ্রেণী করা যেতে পারে, এরা সবাই একভাবে একটা ছবিকে পাঠ করবে বলা মুশকিল।

 শিল্পের সাথে আস্বাদ এর সম্পর্ক আছে , ফটোগ্রাফি দেখার পর ভিউয়ার মানসিক স্বাদ নেন, এবং আমরা জানি স্বাদ ব্যাপারটায় অনেক মাত্রা আছে এবং ভিন্নতা আছে, এক একটা ছবি একএক মাত্রা আলোড়ন তোলা ভিউয়ার এর মধ্যে, এবং এক একটা বিষয় একএক ভাবে পাঠ করে ভিউয়ার, যুদ্ধের ছবি যিনি দেখেন তিনি যদি যুদ্ধ দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি হন একভাবে দেখেন আর যিনি যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত নন তিনি আর একভাবে দেখেন।

 যিনি পাহাড়ে থাকেন তার কাছে পাহাড়ের ছবি একধরনের অনুভূতি দিবে আর যিনি শহরে বিল্ডিং এ থাকেন তার কাছে পাহাড়ের ছবি আর এক ধরনের অনুভূতি দিবে, দুই জন একই ভাবে পাহাড়ের ছবি পাঠ করবে এইটা চান্স কম অতএব, ফটোগ্রাফার আলোকচিত্র পেশ করার পরে ভিউয়ার ক্যামন ভাবে তার ছবি পাঠ করবে তা নির্ণয় হবে ভিউয়ার এর উক্ত ফটোগ্রাফ সম্বন্ধ তার ধারনা অনুযায়ী, আর যে ভিউয়ার তার ধারনা কে পাশ কাটিয়ে ছবি দর্শন করেন তিনি আদর্শ ভিউয়ার, যাদের সংখ্যা অনেক কম।

Comments

    Please login to post comment. Login