# আমি অভিশাপ দিচ্ছি #
* পার্থসারথি
সবে ঝড়-ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ রাত্রি পেরিয়ে ঊষা,
আকাশের বুকে পাখির উড়াউড়ি আর আলোর রেখা,
শহীদের শেষ-নিঃশ্বাস শেষ হয়নি ; প্রিয়তমার মুখ অদেখা,
বাতাসের বুক চিরে ভেসে আসে রক্তের ভাষা ।
প্রিয়তমা, আমি মরিনি কেঁদো না আর,
প্রিয়জনের অপেক্ষায় থেকে বাতাস ভারী করো না ,
ভয় কীসে তোমাদের রেখে গেছি মহাকাব্যের মহানায়ক,
উত্তাল সমুদ্র পেরিয়ে তুমি এখন দুর্বার ।
ফুলের সুবাস যেন দুর্গন্ধ না-হয়
আকাশের তারাদের জ্বলতে দিও
পাখির কোলাহল রেখো প্রাণবন্ত
আমি শহীদ আমার সালাম নিও,
আমি ফিরে আসবো যুগে যুগে সময় সময়
আসবো ফিরে বারবার তোমাদের জাগরণে
পিতার কন্ঠে ফিরে পাবে আমার জয়ধ্বণি
আমি ছিলাম, আছি , থাকবো তাঁরই স্বপ্নের বুননে ।
পিতা আমার লক্ষ নক্ষত্র, চাঁদ, তাঁরা, সূর্য
বিলিয়ে বিলিয়ে জীবনপত্র গড়েছেন এক দূর্গ,
সাত সমুদ্র পেরিয়ে আবার তের নদীর কান্ডারী
ভয় নেই তাঁর ভয় নেই রেখেছেন জীবন বাজী ।
বুক ফুলিয়ে বুক চিতিয়ে দেখিয়ে দেন তাঁর ;
রক্তের শিরা-উপশিরা আর আশা জাগানিয়া স্বপ্ন
কেউ বুঝেনি সেও বুঝেনি বেড়ে ওঠছে শকুনের দল,
তাঁরই ছায়ায় তাঁরই অন্নে তাঁরই আদরে ; লক্ষ্য বক্ষ্যস্থল
নেশায় বুদ করবে বিনাশ অংকুরে জুড়ানপুরের গল্প ।
হে মহানায়ক, মহাবীর, বিশ্বনায়ক তুমি
তোমার জন্মে স্বার্থক আমার এই জন্মভূমি,
তুমি ছিলে আশার আলো ধন্য তোমায় পেয়ে
শকুনের দল বেঁধেছে ঝাঁক তোমায় বধিবে বলে,
পেয়েছো তুমি ওদের গন্ধ আকাশে আর বাতাসে
ফুৎকারে সব উড়িয়ে দিলে পাখা মেলে বিশ্বাসে ।
তোমার ছায়ায় তোমার হাসি আর মুগ্ধ হৃদয়ের ;
আপনজন, প্রিয়জন এবং সবাই তোমার নিজের ;
সব জনতা , কুলি-মজুর বাদ যায়নি কেউ
ভালোবাসার মধুর টানে সবখানে মধ্যিখানে লেগেছে যে ঢেউ ।
পিতা, তুমি ছিলে ভয়হীন, ডরহীন মহীরূহ বুকটান
হাসি তোমার, কন্ঠ তোমার সদা জাগ্রত জয়গান
উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূব থেকে পশ্চিম জয় ধাবমান,
ভাষণে ভাষণে জেগে ওঠে শহীদের রক্তস্নাত ভূমি
গোপনে সংগোপনে সতেজ আবার মৃতপ্রায় বীরাঙ্গনা নারী,
চারদিকে জয়ধ্বনি , স্লোগানে স্লোগান শেখ মুজিবুর রহমান ।
আশা জাগানিয়া মহানায়ক, পিতা তুমি ভালোবাসার কাঙাল
বুঝেছো সবই বুঝতে দাওনি কারা শকুনের দল,
বিশ্বাসের আলোয় নিজেকে বিলিয়ে রয়েছো তুমি আড়াল ;
কেঁদেছো একাকী অন্ধকারে, নিঃশব্দ আঁখি ছিল সজল ,
স্বগোক্তি তোমার সন্তর্পণে দিয়েছো প্রাণ বিসর্জন
বুঝেছো আকাশ, পাখি আর বৃক্ষ ; বোঝনি দুর্জন ।
রাতের অন্ধকারে ভীতু শকুন আর জল্লাদের সহচর
শহীদের রক্ত আর বীরাঙ্গনার ক্ষত-বিক্ষত বক্ষ মাড়িয়ে
পিতা তোমার বুকে বুলেট ছুঁড়ে রক্ত ঝরিয়ে
ভেঙেছে পাখির ঘুম, ক্লান্তি আর শান্ত শহর ।
বুঝেনি ওরা হয়নি জয়ী তোমাকে ঝাঁঝরা করে ;
নিয়েছে প্রাণ শিশু রাসেলের , পত্নী তোমার সে-ও
তোমার ছায়ায় ঘুমিয়েছিল যারা রক্ষা পায়নি কেউ,
বুঝেনি মূর্খ ধূর্ত শেয়ালেরা কী হবে মেরে ;
দেহের ভেতর যাদের আলো সারা বিশ্ব জুড়ে,
একদিন না-হয় এক যুগ অথবা আরও পরে
ফিরে আসবে রাসেলের রক্ত প্রতিটি ঘরে ঘরে ।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি, ওই জাহান্নামের দুর্বল কীটদের
ওদের শ্বাস-প্রশ্বাসে নীল হবে ওদেরই বংশদর,
দাঁড়াতে পারবে না কোনদিন, ফুলের কাঁটায় কাঁটায়
ঘৃণার পাহাড় থাকবে চেপে জন্ম জন্মান্তর ।
***
Click & Read: বইটই-এ প্রকাশিত অসাধারণ রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস 'ভালোবাসার দ্বিতীয় প্রহর’ এর লিংক