পোস্টস

পোস্ট

কোরবানির দিনে এমন দৃশ্য হয়তো বিরলতম, যে কোরবানি দাতা সবটুকু মাংস নিজের গৃহে রান্না করে প্রতিবেশী'দের নিয়ে পুরো সপ্তাহ জুড়ে আমেজ করতে।

২২ জুন ২০২৪

মাহবুব আলম ফয়েজ (লিকছন)

#ঈদ-নিঃসন্দেহে আনন্দ বহিঃপ্রকাশের একটা মাধ্যম এটা নিয়ে কাহারও মতানৈক্য নেই,দোয়া কবুলেরও একটা মাধ্যম বৈ কি।প্রতিবছর দুই ঈদে মুসলমানরা মেতে উঠে স্ব -স্ব আনন্দে। আর এই আনন্দ যে কেবলই আত্মকেন্দ্রিক তাহা সমাজের চিত্র বাস্তবতায় ফুটে উঠে রঙিন ভাবে।

ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লীদের মধ্যে একটা নাটকীয় উপাখ্যান দেখা দেয়, যাহা ১-২ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য চিত্রকল্প। ১-২ মিনিটের জন্য সবাই অতীতের  সকল হিংসা, বিদ্বেষ ও অহমিকা ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কোলাকুলি করে কাঁধে কাঁধ মেলাতে দেখা যায় সকলকে।এটা নি:সন্দেহে শিল্পনৈপুণ্যময়।কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় হলো এই মেলবন্ধনের মিল হওয়ার কোলাকুলি কেবলই মসজিদের গন্ডিতে আটকা পড়ে থাকে।মসজিদের গন্ডির সিমানা অতিক্রম করলে আবার পুরনো হিংসা, বিদ্বেষ চওড়া হয়ে উথলিয়ে উঠে আমাদের মনে।

তাইতো ঈদের পুরো সপ্তাহ জুড়ে আত্মকেন্দ্রিক সেমাই, 
-সুজি আর রুটি-মাংসের আতসবাজি ফুটে আমার পাশের ঘরের ঈদ উৎসবে কোলাকুলি করার নাটকীয় উপাখ্যানে অভিনয় করা আমার অনেক শিল্পী ভাইয়ের।ঈদের দোহাই দিয়ে ১-২ মিনিটের কোলাকুলি করে যারা আপনার শরীরে উষ্ণতা ছড়ায় হয়তো তাদের এই উষ্ণতায় পুরো সপ্তাহ জুড়ে আপনি হিমালয়ের মতো গলতে থাকবেন তখন আপনার সেই ভাইকে হয়তো আপনার গলিত জলরাশির মধ্যে সাতার কাটতে দেখবেন খুবই নাটকীয়ভাবে।

পবিত্র আযহায় পশু কোরবানি একটি শ্রেষ্ঠ পূন্যের কাজ।পশু কোরবানির মাধ্যমে আমাদের মনের পশুত্ব কে কোরবানি করা আমাদের সকলের অন্যতম উদ্দেশ্য বৈ কি।সমাজের উচ্চবর্গের চিত্রে এটা লক্ষ্য করা যায় যে পবিত্র দিনে সমাজে হাজারো পশু কোরবানি হয়, কিন্তু আমাদের মনের পশুর কোরবানি হয় যতসামান্য।

চলুন একটা সমীক্ষা করে দেখা যায় -পশু কোরবানির পর কোরবানি দাতাকর্ণকে দেখা যায় মাংসের সমান তিনভাগের একভাগ মসজিদে একাভাগ তার সমাজের ভাইদের(তাদের ভাষায় গরীরদের) মধ্যে অন্যভাগ নিজের জন্য।

এবার চলুন তাদের বন্টনের পদ্ধতি লক্ষ্য করি,যখন তারা সমাজে কোরবানির অংশ বন্টন করে তখন দেখা যায় প্রথমে মাংসের অনেকগুলো পোটলা তৈরি করে,শেষে এগুলো গৃহে-গৃহে বিতরণ করে এই বলে এটা আমাদের কোরবানির মাংস।অথচ এই অল্প মাংস টুকু তাদের ২-৩ দিন খাওয়ার পরে ফুরিয়ে যায় কিন্তু কোরবানি দাতাকর্ণ কে পুরো সপ্তাহ জুড়ে মাংসের আমেজে থাকতে দেখা যায়।

আপনি যদি আপনার কোরবানি দাতা এক ভাইকে প্রশ্ন করেন, আচ্ছা কোরবানির ভাগের এক অংশ আপনার জন্য বাকি দুই অংশ কাদের জন্য? আপনার ভাই ভাবনাহীনভাবে আপনাকে উত্তর প্রদান করবে যে,বাকি দুই অংশ গরীবদের জন্য কিন্তু তাকে এটা বলতে শুনবেন না বাকি দুই অংশ আমার সমাজের অপর ভাইদের জন্য। অর্থাৎ তাহার মনে সবসময় উঁচুনিচু এই জাত্য ভেদ চওড়া হয়ে থাকে।

সমাজের এমন চিত্র হয়তো বিরলতম বা নেয় বললে চলে যে একজন কোরবানি দাতা তাহার কোরবানির সকল অংশ নিজ গৃহে রান্না করে পুরো সপ্তাহ জুড়ে তাহার অপর সামাজিক ভাইদের নিয়ে দাতাকর্ণের ঘরে আমন্ত্রণ করে একইসাথে একই কক্ষে রুটি-মাংসের আমেজ উপভোগ করেছে।

আত্মকেন্দ্রিক ঈদ আনন্দ হোক বর্জিত মানসিকতায়।
আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক ভাইয়ে-ভাইয়ে।
বন্ধন হোক সুদৃঢ় দূর হোক গ্লানি, হিংসা ও অহমিকা আছে যতসব।

 

#নিজডায়েরিরপাতাথেকে।