Posts

চিন্তা

জগতের সকল প্রান সুখে থাকুক

June 23, 2024

ইউসুফ আহমেদ শুভ্র

74
View

কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেছে, চারপাশে রাতের আধার প্রায়। উড়ে যায় বকপক্ষী কোন এক অজানা গন্তব্যে, সাহসী কাক বসে আছে ইলেক্ট্রিক লাইনে ! আচ্ছা, এরা কী সুখে আছে? এই বেঁচে থাকাটায় কী কোন ভালো লাগা আছে? একে কী ভালো থাকা বলে?

মানুষের ক্ষেত্রে ভালো থাকা বিষয়টা আসলে আপেক্ষিক। কেউ অল্পতেই ভালো থাকে, আবার কেউ অনেক পেয়েও শুন্য। একটু চোখ বুলালেই দেখবো, আমাদের জীবনের পাওয়ার তালিকার প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই টিক মার্ক আছে, কিছু ক্ষেত্রে ক্রস মার্ক আর কিছু ক্ষেত্র আছে মার্কিং এর অপেক্ষা । এই টিক মার্ক আমাদের অর্জন, আমাদের গর্ব, নাতিনাতনিদের কাছে গল্প করার উপকরন। ক্রশ মার্ক আমাদেরকে কষ্টে পোড়ায় আর মার্কিং এর অপেক্ষায় থাকারা আমাদের কে বাঁচিয়ে রাখে! তাদেরকে টিক মার্কে পরিনত করতে আমরা যুদ্ধ করি, জীবন যুদ্ধ।

এখন যদি আমরা ক্রস মার্ক নিয়ে কথা বলি তবে দেখবো যে মানুষটাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসতাম সে আমায় ছেড়ে এখন অন্য কারো সংসারে। এইখানে আমার ক্রস মার্ক । জীবনে ভেবেছিলাম মন্ত্রী মিনিস্টার বাঁ ডিসি এসপি টাইপ কিছু একটা হবো কিন্তু এখন আমি নন-ক্যাডারে বেঁচে আছি। এইখানে আমার ক্রস মার্ক !ভেবেছিলাম এক জীবনে পৃথিবীর সব দেশ ঘুরবো কিন্তু এখনো নিজের দেশই ঘুরে শেষ করতে পারি নাই, এইখানেও একটা লাল ক্রস !!! আর ? আর ?? আর কী ক্রস আছে???

নাহ !!

এই তিনটা ক্রসই আমাদের হাজারো টিক মার্কের প্রশান্তিকে ম্লান করে দেয়। 
অথচ আমরা আমাদের প্রত্যাশার লাগাম বাস্তবতার নিরিখে একটু টেনে ধরলেই এইসব ক্রস গুলোও সবুজ টিক মার্কে পরিনত হয়। জীবন টা সুখের হয়। প্রশান্তির হয়।

আমাদের এই মধ্যবিত্ত কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থায় টিনেজ থেকে শুরু করে মধ্যবয়সীদের খারাপ থাকার অন্যতম কারন হচ্ছে ভালোবাসার মানুষটির চলে যাওয়া।

যে মানুষটা ছেড়ে চলে গেছে তার সাথে কাটানো সময়টাকে, স্মৃতিগুলো কে আর তাকে তার প্রাপ্য সম্মান যদি দেই তবে আমরা ভালো থাকবো।যখনই আমরা চলে যাওয়া মানুষটা কে দোষ দিবো প্রচুর তখন অবচেতন মনে এক ধরনের প্রেসার পরে কারন সেই চলে যাওয়া মানুষটাতো এক সময় আপনার সবচেয়ে পছন্দের,সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলো।অবচেতন মন আমাদের এই দ্বিচারিতা নিতে পারে না আর তখনই শুরু হয় মানসিক অশান্তি।

এর পরের ব্যাপারটাই আসে ক্যারিয়ার। ছোট্ট বেলা থেকেই মা চায় সন্তান ডাক্তার হবে আর বাবা চায় ইঞ্জিনিয়ার হবে। এই দোটানায় পরে ছেলে/মেয়ে একবার নিজেকে ডাক্তার ভাবে তো আরেকবার ইঞ্জিনিয়ার। কলেজে উঠে বাংলা স্যার বা ইংরেজি ম্যাডামের প্রেমে পরে ভাবে এবার টিচার হবো। টুকটাক কবিতা লিখা,শরৎ বাবুর দেবদাস পরে চোখ লাল করা এরপর নিজেকে সাহিত্যিক হিসেবে দেখার সুতীব্র প্রত্যাশা।

এভাবেই নিজের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা প্রফেসর, ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হতে থাকে।প্রত্যেকের গল্প এক না কিন্তু প্রত্যেকেরই স্বপ্ন ভাংগার পিছনে অনেক অনেক গল্প থাকে। মধ্যবয়সে যখন সংসারে তেল নুনের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হয় তখন শৈশবের সেইসব স্বপ্ন আমাদের মানসিক যন্ত্রনা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।

অতীতের সেই সব কল্পনাকে বাদ দিয়ে বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমরা যদি আমার চলমান সময় কে পরিকল্পিত ভাবে কাটাই তবে অনেক বেশি সুখি হতে পারবো।

জগতের সকল প্রানী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক ! বকপক্ষীর মতো উড়ে বেড়াক বা সাহসী কাকের মতো চুপচাপ বসে থাকুক, তবুও সুখে থাকুক।

Comments

    Please login to post comment. Login