পোস্টস

গল্প

নিম গাছ

২৩ জুন ২০২৪

Negat Sultana

তিন বছর আগের একটা ঈদ। সকালে সেমাই আর পায়েশ খেয়ে কর্তা গেলেন ঈদের জামাতে।সংসারের রান্না-বান্না সেরে ফেবুতে ঢুকেই জানতে পারলাম কর্তার সাবেক সহকর্মীর বাবা মারা গেছেন।সাথে সাথে কর্তাকে ফোন।সবাই ঢাকা থেকে আসছেন ওনাদের জেলা সদরের বাড়িতে । আমরাও প্রস্তুতি নিলাম জেলা সদরে যাবার।গেলাম---।সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১১/১১:৪৫ টা বেজে গেল।সারাদিন বুকের মধ্যে খচখচ করছিল।আজ একটা ঈদের দিন! অথচ আব্বা-আম্মার সাথে কথা হলোনা।বাসায় ফিরেই ফোন দিচ্ছিলাম।রিং বাজছিল কিন্তু আম্মা ফোন ধর ছিলোনা।ভয় ভয় করছিল।
মনে মনে অনুসূচনা হচ্ছিল,বলেই ফেললাম -"ফোন তো ধরছে না,আব্বার সাথে কথা তো হলো না।"কর্তা একটু জোড়েই বললো--"আচ্ছা তোমার কি কমনসেন্স লোপ পাচ্ছে দিন দিন?রাত পৌনে বারোটা বাজে,তুমি বয়স্ক দুইজন মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছ কেন?? সকালে ফোন দিও।" দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোন করা বন্ধ করে দিয়ে রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। ভাবছিলাম আজ ঈদের একটা দিন ,কিভাবে কাটালাম।করোনাকালীন বাসায় বন্দী অবস্হায়।কোথাও কোথাও রেড জোন।।এবার ঈদটা আব্বার সাথে করবো বলেছিলাম।কিন্তু অবস্হার পরিপ্রেক্ষিতে যাওয়া হলো না।আব্বা অপেক্ষায় ছিলেন ২৮ রমজান পর্যন্ত।শেষে আম্মা আব্বাকে জানিয়ে ছিলেন আমরা কোথাও যাচ্ছিনা।বাসাতেই থাকবো।অবশেষে  ঘুমিয়েও গেলাম। ঘুম থেকে জাগার পর জানতে পারলাম--আব্বা 
আর নেই।ড্রাইভার ঈদের ছুটিতে।অবশেষে ৩০/৪০ মিনিট পর ফোনে তাকে পাওয়া গেল। ইন্টারনেটের মাধ্যমে থানার পারমিশন নেয়া হলো গাড়ি বের করার জন্য। অনুমতিপত্র কপি করে গাড়ির সামনের গ্লাসে লাগানো হলো। ছুটলাম ৩০০ কিলোমিটার দূরের যাত্রায়।ফেনী পর্যন্ত (৩০ কিলোমিটার)গিয়েছি মনে আছে,ফেবুতে পোষ্টও করেছিলাম শোকবার্তা।কিন্তু তারপরে আমার আর কিছুই মনে নেই ------। যখন জাগলাম গ্লাস নামিয়ে দেখলাম।বললাম-"কোথায় আছি। আমি তো কিছুই চিনিনা"।কন্যা বলল ---এই তো তোমার বাড়ির কাছেই। আম্মু তোমাদের বাজার এটি।
গোরস্হানের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ঠান্ডা বাতাস অনুভব করলাম। বললাম--ফাহিম গাড়ি থামাও।গোরস্হানে যাবো।নামলাম। দেখতে পেলাম খেজুর 
গাছের ডাল পোতা সদ্য নতুন একখানা কবর। একটা নিমগাছের পাশেই।
নিমগাছ আব্বা খুব পছন্দ করতেন।

সেই থেকে আমার কাছে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।

 

নিম গাছ
রচনার সময়কাল:- ০৭/ ০৫ /২০২৩