পোস্টস

চিন্তা

একুশ শতকের অর্থনৈতিক অসমতা: দূর্নীতি ও বাংলাদেশ

২৩ জুন ২০২৪

Ashraful Islam Junnun

মূল লেখক Ashraful Islam Junnun

১৯৭৯ সালে পুঁজিবাদী ব্লকে প্রবেশ করার পর থেকেই বাংলাদেশ পুঁজিবাদের সুবিধার সাথে অসুবিধা কেও গ্রহণের পথ সুগম করেছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আয়ের অসমতা। কার্ল মার্ক্স তার ক্যাপিটালে পুঁজিবাদের ২ টা নেভার এন্ডিং সমস্যার কথা উল্লেখ করে গেছেন। প্রথমটা হচ্ছে মানুষের সম্পদ একীভূতকরণের অসীম ইচ্ছে এবং তার থেকে উদ্ভূত আয়ের অসমতা যা জেনেরেশন টু জেনেরেশন পাস হবে। 

 

আমরা যখন সমাজতান্ত্রিক ব্লকে ছিলাম তখনও দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি পুরো অর্থনীতি জুড়ে ছিলো। সদ্য জন্ম দেওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে যে যেভাবে পারে লুটতরাজ চালিয়েছিলো যার খেসারত দিতে হয়েছিলো শেখ মুজিব ও তার পরিবারকে। পুঁজিবাদী ব্লকে এসেও দেশের ভালনারেবল মানুষজন আরো বেশি ভালনারেবল হয়েছে। 

 

আসল কথায় আসি। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম ১০ বছরে যারা সম্পদ একীভূত করতে পেরেছে ওদের পরবর্তী প্রজন্ম ই আয়ের অসমতার চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছে। কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন যে আয়ের অসমতা একসময় কমতে থাকবে। প্রচুর সম্পদ একীভূত করার পরেও বাজারে প্রতিযোগিতার কারণে শিল্প কারখানা গুলো সম্পদ বাড়াতে পারবে না পুঁজিবাদী মুক্ত বাজারে, যেহেতু তারা অতিরিক্ত মূল্য চার্জ করতে পারবে না এডাম স্মিথের অদৃশ্য হাতের তত্ত্ব অনুযায়ী। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এই থিওরী একদম বাজেভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে একচেটিয়া ব্যবসায় ব্যবস্থা চালু থাকার কারণে। ইভেন প্রতিযোগী থাকলেও তারা মার্জ করে বাজার একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেছে। আমরা একটু ভালোমতো খেয়াল করলেই দেখবো পুরো বাজার কয়েকটা গ্রুপ অব কোম্পানির কাছেই জিম্মি। 

 

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হাইলাইটেড হয়েছে থমাস পিকেটির ক্যাপিটাল অব দ্যা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি বইতে। অথরের মতে মূলধনের আয়ের হার অর্থনীতির গ্রোথ রেইটের চাইতে বেশি। আসলেও তাই। আমার স্টুডেন্ট লাইফের সেভিংসের রিটার্ন ইকোনোমির গ্রোথ রেইটের চাইতে সিগনিফিক্যান্টলি কম। হার্ড আর্নড মানির মূল্য অর্থের সময়মূল্য থিওরী ফলো করে দিনদিন কমে যাচ্ছে দেখে খারাপ লাগাই স্বাভাবিক। কমে যাওয়ার কারণ কি? প্রথম কারণ হচ্ছে আমরা কোনো ট্রেডিং বা ব্যাবসায়ে ডিরেক্টলি ইনভলভ হতে পারতেছি না, সময় অথবা প্রয়োজনীয় মূলধন না থাকার কারণে। অন্যদিকে যাদের কাছে অলরেডি সম্পদ একীভূত করা আছে তারা একচেটিয়া ব্যবসায়ের সুবিধা নিয়ে ইচ্ছেমতো মুনাফা করতে পারতেছে৷ আর যারা ব্যবসায় করে না তারাও ভালো ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজার হায়ার করে ক্যাপিটাল রিটার্ন নরমাল যেকোনো মানুষের থেকে বেশি করতেছে। মোদ্দা কথা হলো, এর কারণে গরীব আরও গরীব, ধনী আরও ধনী হচ্ছে। পূর্ববর্তী প্রজন্মের অর্থনৈতিক উদাসীনতা ছাড়া আর কাউকে ব্লেইম দেওয়ার মতো অবস্থাও নাই৷ 

 

এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? থমাস পিকেটি প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সের কথা বলছেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড যেটা সম্ভব না৷ শুধু একটা দেশ প্রগ্রেসিভ ট্যাক্স চালু করলে শিল্পমালিকেরা অন্য দেশে গিয়ে ব্যবসায় করবে ট্যাক্স সুবিধা পাওয়ার জন্য যেটা আরো খারাপ। প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সের অপশন বাদ। আর দুটি অপশন আছে। সরকারি চাকুরীতে ঢুকে দুর্নীতি করা অথবা ইনোভেটিভ কোনো বিজনেস আইডিয়া নিয়ে বিজনেস করা। ইনোভেশন এর জন্য যেই ফ্রী থিংকিং এবং গ্রুমিং দরকার তার কোনেটাই ইকোনেমিক্যালি আন্ডার প্রিভিলেজড ছেলেপেলে পায় না। বাংলাদেশের টপ স্টার্টআপ এন্ট্রেপ্রেনার দের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করলেই এইটা বুঝা যায়। তাহলে একটাই অপশন আছে আমাদের হাতে আর তা হলে ৩০ বছর পর্যন্ত পড়াশোনা করে কোনোরকম সরকারি চাকুরিতে ঢুকে স্পিড মানি দিয়ে বড়লোক হওয়া। এই ব্যাপারটা করতে গিয়েই সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকতারা মিডিয়াতে আসে। তাদের আসলে কোনো দোষ নাই। সবাই তাদের ফিউচার জেনেরেশনের জন্য সবচয়ে ভালো সুযোগ সুবিধা এনশিউর করতে চায়।

 

কিন্তু আমরা প্রত্যাশা থাকবে সরকার ট্যাক্স সিস্টেম চেইন্জ করে দেশের ভালনারেবল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে, ফ্রি মার্কেট হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, এবং একইসাথে কেউ যাদে সম্পদ একীভূতকরণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করবে।