পোস্টস

সমালোচনা

মন মন্দির

২৪ জুন ২০২৪

বিপুল গুহ নিয়োগী

ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করলেন।  মানুষের ভেতর দিলেন এক মন্দির। নাম তার 'মন মন্দির'।

 

সেই মন্দিরের প্রথম কক্ষে স্থান পেলেন মা। রাধাকৃষ্ণের মত মা এর সাথে রাখা হলো বাবাকেও।ভগবানের আদেশ হলো যে, সর্বদা পূজনীয় এই দুজন মানুষ।

 

সময় গড়াতে থাকলো আর প্রকৃতি ক্রমশ জটিল হতে লাগলো। মন মন্দিরে তখন নতুন কক্ষে আরো নতুন প্রতিমা স্থাপনের তোরজোড়। পরিবারের পর আস্তে আস্তে বন্ধু, এরপর হয়তো প্রিয়জন এর প্রতিমা স্থান পেতে থাকলো। মন্দির মানেই তো পবিত্র স্থান।  তাই স্বাভাবিক ভাবে মানুষের 'মন মন্দির' ও পবিত্র। কেন জানেন? কারন মানুষ তার নিজের মনের কাছে সর্বদাই সঠিক। তার সকল সিদ্ধান্ত, চিন্তা, ধ্যান ধারণা যা ই চলুক ওই মন মন্দিরে। নিজের বিচারকার্যে কেউ কখনো যাবজ্জীবন দোষী সাব্যস্ত হয় না।

তা কোনো কক্ষে যখন মানুষ প্রতিমা স্থাপন করে, তখন সেই প্রতিমাকে সে নিজের সর্বস্ব দিয়ে পূজো করে। তার ধ্যান,জ্ঞান,বুদ্ধি সব তাকে উৎসর্গ করে। যদি জীবনের শেষ ওব্দি এভাবে চলতে থাকে তবে তো ভালোই। আর যদি হয় বিধিবাম!

সেই প্রতিমার প্রতি শুরু হয় তার বিষাদ। পূজায় আর তার মন থাকে না, ভক্তি থাকে না। 'মন মন্দির' এর সেই কক্ষে তখন ওই প্রতিমা বড্ড বেশি বেমানান ঠেকে তার কাছে। সে কি করবে এখন? স্বাভাবিক ভাবেই প্রকৃতির যা নিয়ম তাই করবে সে। পাঠক/পাঠিকা যদি ধরতে না পারেন কি করবে তবে বলে দিচ্ছি......বিসর্জন!  হ্যা, একদা সেই প্রিয় প্রতিমার  তখন বিসর্জন হবে।

মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যারা,যাদের মানসিক শক্তি পাহাড়সম অটল, যাদের ভক্তি দৃঢ়, তারা ইন্দ্রিয়র তাড়নায় নিজেকে বিচ্ছুরিত হতে না দিয়ে সাধনার দ্বারা নিজেকে কেন্দ্রীভূত করে। আমৃত্যু তারা সেই বিসর্জন হওয়া প্রতিমা কেই কল্পনায় ধরে রেখে নিত্য পূজার্চনা করে।

মহামানব হওয়া কি আর সবার সাধ্য হয়! 
মন্দিরের কক্ষ তো আর প্রতিমা শূন্য রাখা যায় না! খোজ শুরু হয় নতুন প্রতিমার। অনেক ঘটা করে আবার নতুন প্রতিমা স্থান পায় সেই বিসর্জন দেওয়া প্রতিমার স্থানে। পূর্ব নিয়মে পূজা শুরু হয়, আত্মার সাথে সেই প্রতিমার বন্ধন সৃষ্টি হয়। সকল ধ্যান, জ্ঞান, বুদ্ধি, আর সময় আবার সেই নতুন প্রতিমায় সমার্পিত হয়।