পোস্টস

গল্প

কাকচক্ষু

২৪ জুন ২০২৪

জুনাইদ আওরঙ্গজেব

-আসমানডারে আজ কী সুন্দরই না লাগতেছে মা! চলো না,কোথাও দিয়ে উইড়া আসি?
-দেখিস না ,আকাশে মেঘ করছে? একটু পরেই দেখবি,ঝমঝমাইয়া বৃষ্টি নামবো। যাওনের কাম নাই
-বৃষ্টির পরে তো আবার রোউদ আইবই,তহন শুকায়া নিমু নে! ঝামেলা শেষ
-না,না,এই সময়টা খুবই খারাপ! তু্ই জানস না, আগের বার এই সময়েই তোর বাপজান একটা মরা বিড়াল দেইখা লোভ সামলাইতে পারে নাই।এত কইলাম,যাওনের কাম নাই__কে হোনে কার কথা? অম্নি উইড়া গেল আর ঠাডা খাইয়া মরল। হের পর থেইকা আমি বাঁইচা আছিই তোর লাইগা, এহন তুইও ঠাডা খাইয়া মরতে চাস?
-আহ মা! অমন কথা জপতে নেই। আচ্ছা মা,এমন জায়গায় যাওয়া যায় না?__যেইখানে আমরা বৃষ্টি দেখমু,কিন্তু বৃষ্টি আমাগাে দেখবো না!
-কিরে ,মানুষের মতো কথা শিখলি কবে থেইকা? তয় এমন জায়গা কী আছে নাকি জগতে?
-হু মা,শুনছি চিল মামু নাকি ঝড়-বৃষ্টির সময় ঐ মেঘের উপর যাইয়া বইসা থাকে। ঐখানে নাকি বৃষ্টি গায়ে লাগে না!
-তোর চিল মামু জমিদার মানুষ। হ্যায় যেহানে যাইবো,হেইখানে কি আমরার যাওয়ার সাধ্য আছে? আমরা হইলাম কালা কাউয়া। পাখি-জাতের কলঙ্ক!
-তয় মা একবার কইয়া দেহো না! যদি দিলে দয়া হয়...........
-আচ্ছা দাড়া ,কইয়া দেখি।
ও চিল ভাই! ও ভাই! তোমার কাউয়া বোনডার একটু আরজি শোনো!
-কী কইবা তাড়াতাড়ি কও ,সময় নাই।
-আইজকা আমরার একটু মেঘের ঐপারে যাওনের সাধ জাগছে,তুমি কি একটু লইয়া যাইবা?
সোনালী চক্ষুজোড়ায় একটা কটমট ভাব এনে খানিকক্ষন ঘাড়টা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চিল বলল
-হু, তা নেওয়া যাবে। নেব না কেন? আমরা কি তোদের মত হাড়কিপটা নাকি? তবে একজনের বেশি নিতে পারবো না
মা কাকটা শুনে মনে মনে বলে “ ক্যান বাপু ,আইজকা মনে হয় খাওন-দাওনে কম পইড়া গেছিল। তোগো তো আবার জ্যান্ত হাস-খরগোশ না খাইলে নাকি পাংখাই খুলে না”
-কোন সমস্যা নাই ভাই। আমরার কি এখন আর এসব সাধ-আহ্লাদ আছে? 
বুইড়া হয়ে গেছি । ঠিক মতো পাংখাডাও তো মেলতে পারি না এহন! তয় ভাই আমার এই মাইয়াডারেই লইয়া যাও।
চিল মামার চক্ষুজোড়া চকচক করে উঠলো।“ আহ কতদিন পর ,আহ কতদিন পর!” চিলমামা ধীরে ধীরে তার মাজা মাজা খয়েরি আলিশান পাখাটা মেলে ধরলো আর বলল
-আসো সোনামনি আসো! আমার পাংখাটায় উঠে বসো।
কাঁচা তরুণী এক কাককে পাখায় নিয়ে শাঁ শাঁ করে চিল মামা উড়ে গেল মেঘের ওপারে।

একটু আগেই ছোটখাটো একটা বৈশাখি লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে নগরটাকে। মা কাকটি আশ্রয় নিয়েছিল আমাদের সামনের বিল্ডিংয়ের সানসেটে। এতবড় একটা ঝড় বয়ে গেল কিন্তু কাকটাকে একটুও ক্লান্ত ঠেকাচ্ছে না । কারণ সে অপেক্ষা করছে। অপেক্ষা কখনো কাউকে ক্লান্ত করে না বরং অক্লান্ত করে তোলে। কাকটিও অক্লান্ত হয়ে আকাশের পানে বারবার চায় আর ডাকে -কা-কা-কা-কা।
কখন ফিরে আসবে তার মেয়েটি ? কখন সে তার মেয়ের মুখ থেকে শুনবে ওপারের গল্প? এই অপেক্ষায় অধির দিনরাত কাটায় কাকটি।

সপ্তাহ-মাস-বছর ঘুরে-ফিরে আসে-যায়। কাকটি দেখা পায় না তার মেয়েটির । আর সেই চিল মামু তো কত আগেই  লা-পাত্তা!
একসময় সে ভেবে নেয়-”এইবার বুঝি বাপটার মতোন মাইয়াডাও ঠাডা খাইয়া মরল!”
আসলেও কি তাই? কে জানে?
চিল মামার চোখের সেই চকচকানির অর্থ আমরা বুঝলেও কাককে তো আর সেই সামর্থ দেয়া হয়নি।