পোস্টস

সত্তাশ্রয়ী

মাধুর্য উইড়া গেছে

২৪ জুন ২০২৪

রাব্বী আহমেদ

     বৃহঃস্পতিবার আসলে আগে একটা ফিল পাইতাম। এই ফিল প্রথম আসে স্কুল-কলেজে থাকতে। যেইখানে পড়তাম, ওইখানে শুক্কুরবার সকালে পিটি-প্যারেড করতে নামা লাগতো না। আর বৃহঃস্পতিবার রাতে আমাগো ভালো-মন্দ খাইতে দিত। ওইটারে আমরা বলতাম— স্পেশাল ডায়েট। (জেলখানার কয়েদিদের বিশেষ দিবসে যেইরকম খাবার খাইতে দেয়)। আর বৃহঃস্পতিবার রাতে মুভি-শো হইতো।  দল বাইন্ধা আমরা বিদেশি সিনেমা দেখতাম। যদিও ইলেভেন-টুয়েলভে সিনেমা না দেইখা, মোবাইলে তৎকালীন প্রেমিকার লগে কথা কইতাম বা পছন্দের জুনিয়র ডাইকা গান শুনতাম, গল্প করতাম, ডায়েরি লিখতাম। বৃহঃস্পতিবার আইলে মনের মইধ্যে একটা সুখ-সুখ ভাব হইতো। মনে হইতো কালকে ঈদ। সকালে একটু ঘুমাইতে পারবো। কিন্তু শুক্কুরবার সকালে স্বভাবসুলভ ঘুম ভাইঙা যাইতো, আর ঘুম আসতো না। 
 

        ভার্সিটি লাইফে বৃহঃস্পতিবার রাত কাটতো এসএম হলের ছাদে কিংবা হলের ক্যান্টিনের ছাদে। সেইখানে বইসা আমরা ক্যানাবিস কেন্দ্রিক ডিসকোর্স নিয়া আলোচনা করতাম আর কাউরে কাউরে ‘গাজাকার’ বা ‘গাজাউলিয়া’ বা ‘গাজ্জালি’ উপাধি দিতাম। রাতে খাইতে যাইতাম চানখারপুল বা পুরান ঢাকায়। একটা থ্রিল আছিল লাইফে তখন।  ভার্সিটির শেষ দিকে বিটিভির একটা প্রোগ্রামে কাজ করতে গিয়া শুক্কুরবার খুব সকালে ওঠা লাগতো। টেকা-পয়সা মোটামুটি যা পাইতাম, তা দিয়া চইলা যাইতো দেইখা শুক্কুরবার সকালে বেলা করে ঘুমানোরে বিসর্জন দিতাম। ভাবতাম, এইভাবে মরার মত ঘুমানোর চাইতে টাকা কামানো ভালো। সেই থেইকা বৃহঃস্পতিবার রাত আইলে পরদিন ঘুম থেইকা ওঠার একটা তাড়া ফিল করি। 
 

       কর্মজীবনে ঢুইকা দেখি আসলে সবার মইধ্যে একটা ঈদ-ঈদ ভাব চইলা আসে। এইটারে আমি উপভোগ করি। রিসেন্টলি প্রিয় রাইটারের একটা গল্প খুব টানছে, সেইটার নাম ‘পৃথিবীতে হয়তো বৃহঃস্পতিবার।’ যেইখানে দেখানো হইছে লাইফের পৌনঃপুনিকতাকে— শিস দিয়া বাড়ি ফেরা এক যুবকের বয়ানে। আমিও আমার বহু কলিগরে বৃহঃস্পতিবার আসলে এইরকম শিস দিতে দেখি৷ কিন্তু সেই শিস কানে না আসলেও অন্তত মনের মইধ্যে বাজে৷ আমি জন্মাইছে বৃহঃস্পতিবার। ফলে এইদিন আসলে আম্মা আমারে নিয়া ভয়ে থাকে। সে আমারে জানায় আমি বিশ্যুদবাইররা পোলা। বিশ্যুদবাইররা পোলাগো অনেক নিয়ম মাইনা চলতে হয়। যেমন, এইদিন নখ কাটা যাবে না। ঝাড়ুর শলা গায়ে লাগানো যাবে না। আরও অনেক কিছু যা আর মনে পড়তেছে না। তো, এইসব নিষেধাজ্ঞার মইধ্যে বড় হইয়া, এই বয়সে বৃহঃস্পতিবার আসলে আমার মধ্যে কেমন একটা সেল্ফ-সেন্সরশিপ কাজ করে। যে কথা বলতে চাই, বলা হয় না। যে কাজটা করতে চাই করা হয় না।
 

      তরিকাপন্থী মানুষদের কাছে বৃহস্পতিবার গুরুবার। এই দিনে তারা আগরবাতি-মোমবাতি জ্বালাইয়া রিচুয়াল পালন করে। আমিও কিছুদিন বৃহস্পতিবার অনুরূপ রিচুয়াল পালন কইরা আসছি। দেখছি, ওই সময়টা আসলে সপ্তাহের অন্য ছয়দিনের ক্লান্তি ভুলাইয়া দেয়। মাথার জাংক চইলা যায়। বহুদিন বৃহস্পতিবার ওই রকম গোল হইয়া বসি না। আল্লাবিল্লা করি না, দয়াল-মুর্শিদরে স্মরণ করি না। জীবন থেইকা মনে হয় মাধুর্য উইড়া গ্যাছে। ভাবতেছি আগামি সপ্তাহ থেইকা আবার গুরুবার পালন করবো। আমাদের প্রচুর পালন করা দরকার।