কয়েক বছর পর আবার দু'জনে একসঙ্গে - হাজার হাজার স্মৃতি এসে জড়িয়ে ধরল। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড বদলে গেছে অনেকখানি। নিয়ন আলো আর সোডিয়াম বাতি মিশে গেছে হাহাকার মেশানো নিভৃত কোলাহলে। নিরবতা থামছেই না। মৌনতা গ্রাস করেছে চারপাশ। রবিঠাকুরের হঠাৎ দেখার পঙক্তিগুলো মনে করার প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছে মাহফুজ কিন্তু সময়ের বেলায় কিছুই মাথায় আসেনা। পুরোনো স্মৃতিগুলো রোমন্থন করতে করতে মাথাটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে দ্রুত পলক পড়ছে চোখের। ও কি এগিয়ে যাবে, একবার জিজ্ঞেস করবে কেমন আছো! স্বগত স্বরে বলে উঠল না থাক,তা কি করে হয়। টিএসসির গেটে ছোট্ট বটগাছটার নিছে প্রিয়তী আর ওর অজস্র স্মৃতি জমে আছে।
ক্যাফেটেরিয়াতে,ফুলার রোডের নিয়ন আলোয়, মল চত্বর দিয়ে হাটতে হাটতে কত স্বপ্নই না বুনেছিল ওরা। এখন তা স্মৃতির কালো ধোঁয়ায় হারিয়েছে অজান্তেই। মাহফুজের মনে পড়ছে একদিন ওর হাত কেটেছিল এক রিক্সার ধাক্কায়, সে নিয়ে প্রিয়তীর কত চিন্তা, মলম লাগিয়েছ কিনা, ডাক্তার দেখিয়েছ কিনা আরো কত কি।সামান্য কিছুতেই অভিমান করত প্রিয়তী। একবার বসন্ত বরণের দিন হলুদ পাঞ্জাবি না পড়ায় মুখ কালো করে উল্টো ঘুরে বসেছিল, কথাই বললো না। সে কত ফন্দি ফিকির করে শেষমেশ রাগ ভাঙিয়েছিলো মাহফুজ। আচ্ছা এসব কথা ওর মনে আছে? থাকবেই বা কেমন করে। এখন হয়তো ওর আকাশ ভিন্ন কোনো রঙে ভিন্ন কারো চাওয়ায় সাজে। মুচকি হাসে মাহফুজ। হাতের সিগারেট নিভে গেছে কখন সে খেয়ালটুকু নেই ওর-
-আরে মাহফুজ,কেমন আছো?
নীরবতা ভাঙে যেনো বজ্রপাতে। মোহনীয় রোমন্থন যেন কাচের টুকরোর মত শব্দ করে ভাঙে কোনো পরিচিত আঘাতে। ও কী ঠিক দেখছে,না ঠিকই তো!
-কি হলো তোমার,চিনতে পেরেছ আমায়?
- হ্যাঁ চিনেছি। কেমন আছো তুমি,কেমন চলছে সংসার?
- এইত আর বলোনা, আছি কোনোরকম। তোমার কি অবস্থা?
- আছি ভালোই
- অফিস শেষে ফিরছিলে বুঝি?
- হ্যাঁ হ্যাঁ!
আবারো নীরবতা। কিছু কিছু নীরবতা অসহ্য লাগে, খামচে ধরে শরীর। সেই চিরচেনা মোহনীয় শব্দ, চিরপরিচিত হাসি আজ কত অচেনা। নিজের চোখকে কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা মাহফুজের। সামনে দাঁড়ানো ও কি প্রিয়তী! - কতটা দূরত্ব ঘনিয়েছে ওদের মাঝখানে, কতটা আলাদা হয়ে গেছে দুজনের পৃথিবী।
-আসলে মাহফুজ, আমাকে যেতে হবে, বি আর টিসি ছেড়ে দিচ্ছে। মাহফুজ নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ওর দিকে। দুদণ্ড এদিক ওদিক তাকিয়েই চলন্ত বাসে উঠলো প্রিয়তী।
মাহফুজ হঠাৎ অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো -"এখন হয়তো তোমার আমার ভিন্ন আকাশ আছে,যেটুকু আকাশ আমাদের ছিলো যত্নেই রাখা আছে"!
প্রিয়তী হয়তো শুনলো, হয়ত শুনলোনা। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডের ভীড়ে হয়তো হারিয়ে গেলো শব্দের সুর। দ্রুতবেগে ছুটে চলা গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজান্তেই মাহফুজের চশমাটা ঘোলাটে হয়ে যেতে লাগলো।