পোস্টস

গল্প

ছোটগল্প-কল্পনায় ঈন্দ্রাণী (ভৌতিক)

২৭ জুন ২০২৪

মো: আলিম বিন মুছা

মূল লেখক মো: আলিম বিন মুছা

শীতের সন্ধ্যা, সময়টা মাঘ মাসের মাঝামাঝি। রাশেদ সাহেব তার শোবার ঘরের এক কোনায় বসে আছেন,হাতে কলম ও একটি খাতা,মুখে ধরানো সিগারেট,সন্ধ্যার সময়টাতে তিনি নানা বিষয়ে লিখে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।পুরো বাড়িতে একাই থাকেন।লন্ডন থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে একটি হাইস্কুলে দীর্ঘ সাত বছর শিক্ষকতা করেছেন।কিন্তু হঠাৎ করে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে তিনি লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যান।

 

 

দাদার জমিদারীর সূত্রে বিশাল বাড়িতে থাকেন রাশেদ সাহেব।সারাদিন একা একা পৈর্তৃক বাগানে ঘুরে বেড়ান আর গাছ-গাছালি নিয়ে কি সব গবেষণা করেন। একদিন বিকালে বাগানে ঘোরার সময় এক মেয়ে পিছন থেকে রাশেদ সাহবের পাঞ্জাবি টেনে ধরেন।মেয়েটি কৌতূহলী হয়ে রাশেদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করে-''আপ্নে আসমানের দিকে কি দেখেন?

রাশেদ সাহেব বললেন-''আসমান না রে মেয়ে গাছ দেখি,গাছ।

মেয়েটি আবার বলল-"আইচ্ছা! গাছ দেখলে কি হয়?

রাশেদ সাহেব এইবার আর কোনো উত্তর দিলেন না।শুধু মুচকি হাসলেন।

 

 

 

এরই মধ্যে সন্ধ্যা নামায় তিনি আবার ঘরে ফিরে প্রতিদিনকার মতো লিখতে বসলেন।হঠাৎ ঘরের রকিং চেয়ারে তিনি বিকেলের সেই ছোট্ট মেয়েটিকে দেখতে পেলেন,মেয়েটি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়া আছে।তিনি জিজ্ঞেস করলেন-"সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তুমি বাড়িতে না গিয়ে এখানে কি করছো?তোমার বাড়িতে চিন্তা করবে "। মেয়েটি বলল-"আমার কেউ নাই স্যার।আমি আপ্নের এহানে থাকি।আমি আপ্নের সক্কল কাম কইরা দিমু।আমারে খেদায়ে দিয়েন না"।

মেয়েটির চোখের দিকে চেয়ে আর রাশেদ সাহেব না করতে পারলেন না।মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতে সে বলল-" আমার কোনো নাম নাই স্যার,আপ্নে একটা নাম দেন"।রাশেদ সাহেব মেয়েটার নাম দিলেন-ইন্দ্রাণী।

 

 

এরপর অনেক দিন কেটে যায়।একদিন রাশেদ সাহেবের বাসায় তার বাল্যবন্ধু কায়সার দেখা করতে আসলেন। অনেকক্ষন দুই বন্ধুর মাঝে কথা হয়।কায়সার হঠাৎ বলেন-"বন্ধু তুই তো সারাদিন এখানেই পড়ে থাকিস,একটু গ্রামের ভিতরে ঘুরে আসলেও তো পারিস,এতো একা কিভাবে থাকিস?"  শুনে

রাশেদ সাহেব হেসে বললেন-"একা না রে বন্ধু। কিছুদিন হলো একটা এতিম মেয়ে আমার সাথে থাকে।ওর সাথে গল্প গুজব করে কাটাই,তুই চা খাবি? আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি দাড়াঁ"

কায়সারকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রাশেদ সাহেব রান্নাঘরে চলে গেলেন।

কিছুক্ষন পর কায়সার লক্ষ্য করল রান্নাঘর থেকে ফিশফিশিয়ে কথার আওয়াজ আসছে।কিন্তু ঘরে তো আর কেউ নেই।তাই বিষয়টা খেয়াল করতে রান্নাঘরে একটি উঁকি দিয়ে কায়সার দেখলেন রাশেদ সাহেব একা একা কার সাথে যেন কথা বলছেন,অথচ রান্নাঘরে আর কেইউ ছিল না। কায়সারের আর বুঝতে বাকি থাকল না রাশেদ সাহবেরে কোনো মানসিক সমস্যা হয়েছে। দুই বছর আগের এক দূর্ঘটনায় স্ত্রী সন্তানকে হারানোর শোক তিনি হয়তো এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। কায়সার অনেক বলেও তার প্রিয় বন্ধুকে আর সেদিন নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন নি। 

 

পরদিন রাশেদ সাহেবের বাড়িতে কায়সার আবার আসলেন।বন্ধুকে কোনো এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন ভেবে।অনেক ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কায়সার বাধ্য হয়ে রাশেদ সাহেবের শোবার ঘরে  গিয়ে দেখলেন রাশেদ সাহেব মারা গিয়েছেন।তিনি বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছেন।তার চোখ দুটো অদ্ভুত রকম ভাবে খোলা। কায়সার মেঝেতে রাশেদ সাহেবের ডায়েরীটা পেলেন।সেখানে কিছু অদ্ভুত রকমের লিখা ও আকাবুকি করা।যেন কোনো বাচ্ছা মেয়ের হাতে করা।সেদিনের পর থেকে রাশেদ সাহবের বাড়ি থেকে নানা রকমের অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যেত। কেউ আর সেদিকে যাওয়ার সাহস করতো না।

 

ঘটনা গুলো কি নিতান্তই কাকতালীয় নাকি এর পিছনে জড়িয়ে ছিল কোন রহস্য তা আজও কেউ ভেদ করতে পারে নি।