পোস্টস

উপন্যাস

জীবন যেখানে অন্যরকম

২৭ জুন ২০২৪

মাসুম শরীফ

পর্ব-৫

 

আজ সকালে সুনামগঞ্জ শহরে একটি বাড়ির ছাদে রুফ টপ টাওয়ার বানানোর জন্য সার্ভে করতে যেতে হবে! সার্ভে মানে হচ্ছে মাপামাপি | প্রথমে মেপে দেখতে হবে যে, যে পরিমান জায়গা টাওয়ার বানানোর জন্য দরকার, সে পরিমান জায়গা ছাদের উপর আছে আর স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং দেখে একটা ধারণা করা যে, যে পরিমান উল্লম্ব চাপ এবং সেইসাথে অনুভূমিক চাপ টাওয়ারের উপরে আসবে বায়ু অথবা ভূমিকম্প থেকে, পুরা বিল্ডিং সহ টাওয়ারটি ওই চাপে ভেঙে পড়বে না! যেকোনো কাঠামো বা স্ট্রাকচার এর কাজ হচ্ছে ভার বহন করা আর ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ হচ্ছে, স্ট্রাকচারটিকে ভারবহনের উপযোগী করে ডিজাইন করা, যাতে ভেঙে না পরে! এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, স্ট্রাকচার যে ভারবহন করতে পারবে, তা কিভাবে বুঝবো? অভিজ্ঞ স্ট্রাকচারাল/সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা কোনো স্ট্রাকচার এর ফাউন্ডেশন এর স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং দেখে বলে দিতে পারেন যে এটি ভার বহন করতে পারবে কিনা! আর আমাদের মতো বাচ্চা ইঞ্জিনিয়ারদের সফটওয়্যার দিয়ে এনালাইসিস করে বলতে হবে| আমাদের কাজ হতো কোম্পানি প্রদত্ত সার্ভে রিপোর্টে একটা প্ল্যান এঁকে যাবতীয় বিষয় লিপিবদ্ধ করা, যেমন কলামের দৈর্ঘ-প্রস্ত, কতগুলা রড এবং রডের ব্যাস (১৬, ২০ মিলি…ইত্যাদি)|এইসব কাজ করতে হতো সাইটে অর্থাৎ ছাদের উপর দাঁড়িয়ে থেকে! কখনো বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতাম, কখনোবা রোদে পুড়ে!

 

স্ট্রাকচারকে যদি ফ্লেক্সিবল ভাবে ডিজাইন করা যায় তবে তা অনেক টেকসই হয়| জাপানে উঁচু অট্টালিকাগুলো ভূমিকম্পের সাথে সাথে কাঁপতে থাকে এবং এভাবে ফ্লেক্সিবিলিটি দেওয়া হয় যার ফলে সেগুলো ভেঙে পরে না! জাপানিরা স্ট্রাকচারাল ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে অনেক গবেষণা করে, আর আমরা স্ট্রাকচার এর মধ্যে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে অন্য রকম গবেষণা করি!

মাঝে মাঝে মনে হয়, একটি স্ট্রাকচার এর সাথে পুরুষ মানুষের জীবনেরও অনেক মিল আছে! স্ট্রাকচার যেমন একটা নির্ধারিত সময়ের জন্য ভার বহন করে তারপরে ভেঙে পড়ে, পুরুষ মানুষও সংসারের ভার বইতে বইতে একটা সময় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে! এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমার বাবা, সারাজীবন ধরে সংসারের ভার বহন করে চলেছেন, কিন্তু কখনো ভেঙে পড়েননি, বা আমি তাকে ভেঙে পড়তে দেখিনি!এইসব কথা ভাবতে ভাবতে আমি নাস্তা শেষ করে বসে আছি, হটাৎ সাইট একুইজিশন এর রহমান ভাইয়ের ফোন:
 

রহমান:"সজীব ভাই, আপনি রেডি?"
আমি:" হাঁ ভাই, চলেন যাওয়া যাক!"

আমি লাইন কেটে হোটেলের লিফট এ উঠলাম! ওহ হো! আমি তো অধরাকে ফোন করতে ভুলেই গেসিলাম! আচ্ছা, হোটেলে ফিরে ফোন করবো, ওর সাথে কথা বললে সময় ভালোই কেটে যাবে! গাড়ি তে উঠে বসলাম, গাড়ি চলতে শুরু করল; আর আমি হাবিবের সিলেটি
গান শুনতে লাগলাম:
"আমার বন্ধুয়া বিহনে ও গো
সহেনা পরানে গো
একেলা ঘরে রইতে পারি না!"

 

আমার অবস্থা আসলে এই গানের মতো...শুধু বন্ধুর জায়গায় বান্ধবী হবে| দেখি অধরাকে পটানো যায় নাকি! কেন জানি, একা একা আর ভালো লাগেনা! একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর, বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব এর বাইরে কাউকে দরকার হয় যা আসলে প্রেমিকা বা বান্ধবী নামে পরিচিত আমাদের সমাজে|

ঘন্টা দেড়েক লাগলো সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে| রহমান ভাই আমাকে ডাইরেক্ট ছাদে নিয়ে গেলেন আর আমি মাপামাপি শুরু করলাম উনার সহায়তায়| কাজ শেষ করলাম, প্ল্যান আঁকলাম সবকিছু সার্ভে রিপোর্টে লিপিবদ্ধ করলাম|

 

আমি:"রহমান ভাই, এদের কি স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং গুলা পাওয়া যাবে?"
রহমান:" অবশ্যই! আপনি আমাকে ফোনে বলার পর আমি এদের অনুরোধ করেছিলাম, এরা অলরেডি আপনার জন্য এক কপি প্রিন্ট করে রাখসে!"
আমি:"অতীব চমৎকার!"
রহমান:"ভাই চলেন, বাড়িওয়ালা বলসে নাস্তা করে যেতে!"
আমি:"আমি তো নাস্তা করে আসছি!"
রহমান:"ভাই, চলেন তো!"
আমি:"চলেন"
বাড়িওয়ালার ড্রয়িং রুম এ যেয়ে দেখি সকালের নাস্তার যেন এক বিশাল আয়োজন! সিলেট অঞ্চলের মানুষের অথিতিয়তায় সত্যি আমি মুগধ!
আমি:"আঙ্কেল, এতো কিছু করার কি দরকার ছিল?"
বাড়িওয়ালা:"বাবারা আপনারা আসছেন সিলেট থেকে, একটু নাস্তা করেন!"
আমি:"মুচকি হেসে, একটু!"(মনে মনে এই যদি সকালের নাস্তা হয়, তবে দুপুর বা রাতের খাবার কি হবে?)
বাড়িওয়ালা:"এই নেন আপনার ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং!"
আমি:"খেতে খেতে, অশেষ ধণ্যবাদ!"(খেতে খেতে ড্রয়িং গুলা দেখলাম, সব স্ট্রাকচারাল ড্রইংই আছে, এই গুলা ঢাকায় যেয়ে সাইট ডিজাইন টিমকে জমা দিতে হবে)

আমরা নাস্তা খেয়ে বিদায় নিলাম, এবং যাত্রা শুরু করলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে, যেহেতু আজকে আর কোনো কাজ নেই!
 

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ: এই লেখার প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক এবং এই লেখা কোনো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে অপমানিত করার জন্য নয়! নিজের অজান্তে যদি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি, তাহলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ||)

 

(চলবে)