Posts

গল্প

ভাইপারল্যান্ড

June 28, 2024

ফারদিন ফেরদৌস

183
View

ভাইপারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নাম বাঁশরিয়া। এখনকার এই মন্ত্রী মশাই শিশুকালে খুব বেশি কবীর সুমনের গান শুনতেন। বাঁশরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায়/ গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়। অগত্যা মন্ত্রীর নানা রীতিমতো আকিকা করে নাম রেখে দিলেন 'বাঁশরিয়া'।

সেদিন প্রধানমন্ত্রী বাঁশরিয়া সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। ভাইপারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি যেখানে থাকেন সেই আবাসস্থলের নাম চন্দ্র আর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন হলো বোড়া। ওই বোড়াতেই সাংবাদিকরা জড়ো হয়েছেন। মাথায় বিশাল বিশাল প্রশ্ন নিয়ে এসেছেন একেকজন। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি প্রতিবেশি রাষ্ট্র গোর্খাল্যান্ড ভিজিট করেছেন। দুইদেশের মধ্যে নতুন কিছু সহযোগিতামূলক চুক্তিও হয়েছে। এসব বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলন।

নানা কিসিমের প্রশ্ন করছেন বিজ্ঞ সাংবাদিকরা। কেউ ধনুর্ভঙ্গ পণ করে এসেছেন, আজকে প্রাইম মিনিস্টারকে জব্দ করেই ছাড়বেন। ওসব চুক্তি টুক্তিতে কার বেশি লাভ? গোর্খাল্যান্ডের নাকি ভাইপারল্যান্ডের? কেউবা এসেছেন স্রেফ হাত কচলানো মোসাহেবি করে প্রধানমন্ত্রীর নেক নজর পেতে।

এরমধ্যে ত্রিকোণাকৃতির ফ্যাঙ উঁচু করে চন্দ্রধর বণিক নামের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে মাইক্রোফোন হাতে নিলেন। গায়ে যেন হালকা সবুজ রঙ মেখে এসেছেন। দামি চেয়ারে বসেও আয়েশ করে শরীরের নিম্নাঙ্গ পেঁচিয়ে রেখেছেন। লেজটা খানিকটা বাঁকা করে পেছনে রেখেছেন। বয়সের ভারে মুখে সফেদ কিছু দাঁড়িও গজিয়েছে। ঠিক যেন মনসামঙ্গল কাব্য থেকে উঠে আসা কিংবদন্তি চরিত্র। 
: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হঠাৎ করে চারপাশে মনুষ্য প্রজাতি বেড়ে গেছে। আপনি জানেন আমি চকে পাথারে হাঁটে ঘাটে ঘুরে কৃষি বিষয়ক কন্টেন্ট বানাই। বিগত একমাস ধরে আমি বাইরে যেতে পারছি না। শ্যুটিংয়ে যাচ্ছি না। মানুষ দেখে কে না ভয় পায়? যতসব মারামারি খুনোখুনিতে ওরাই জড়িত। পিষে মারতে কাউকে ছাড় দেয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জীববৈচিত্র্য বিষয়ে কম জ্ঞান রাখেন না। যাদের কথা বলছি ওই মনুষ্য প্রজাতির এক বড় কবি শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখা 'বিসর্জন' নাটকে রঘুপতির সংলাপেই যেন মানবচরিত্র উন্মোচন করে গেছেন।
‘এ জগৎ মহা হত্যাশালা। জানো না কি প্রত্যেক পলকপাতে লক্ষ কোটি প্রাণী চির আঁখি মুদিতেছে। সে কাহার খেলা? হত্যায় খচিত এই ধরণীর ধূলি। প্রতিপদে চরণে দলিত শত কীট— তাহারা কি জীব নহে? রক্তের অক্ষরে অবিশ্রাম লিখিতেছে বৃদ্ধ মহাকাল বিশ্বপত্রে জীবের ক্ষণিক ইতিহাস। হত্যা অরণ্যের মাঝে, হত্যা লোকালয়ে, হত্যা বিহঙ্গের নীড়ে, কীটের গহ্বরে, অগাধ সাগরজলে, নির্মল আকাশে— হত্যা জীবিকার তরে, হত্যা খেলাচ্ছলে, হত্যা অকারণে, হত্যা অনিচ্ছার বলে— চলেছে নিখিল বিশ্ব হত্যার তাড়নে ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রাণপণে, ব্যাঘ্রের আক্রমে মৃগসম, মুহূর্ত দাঁড়াতে নাহি পারে... ’

এমন মনুষ্যকূলে আপনারও কী কম ভয় লাগবে অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার?

: তো এখন কী করবেন? উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে উল্টো চন্দ্রধরকেই প্রশ্ন করলেন প্রধানমন্ত্রী।
: না মানে, ইয়ে, সচেতনতা বৃদ্ধিই জরুরি। সেটাই বলছিলাম আর কি?
: দেখেন স্রষ্টা প্রাণ প্রকৃতি সাজিয়েছেন নানারকম প্রজাতি দিয়ে। মানুষ যদি আপনার বিষ নিয়ে ওষুধ না বানাতো কোথায় থাকত আপনার এত অহংকার? আমি যেটা মনে করি, আক্রান্ত হওয়ার ভয় না পেলে মানুষ খামোখা কাউকে আক্রমণ করবে কেন? এইত সেদিন আমি বোড়া ভবনের পুকুর ঘাটে বসে মাছ ধরছিলাম। কোথা দিয়ে যেন একজন মানুষ বের হয়ে এল। কৈ আমাকে তো আক্রমণ করল না। এই যে দেখেন আমি তো পুরাই‌ অক্ষত আছি। তাই বলি কি, আমাদের প্রাণের এই ভাইপারল্যান্ডে ভয় যদি পেতে হয় স্বজাতি চন্দ্রবোড়া সাপকেই পাবেন, কস্মিনকালেও মানুষকে নয়!

লেখক: সাংবাদিক 
২৭ জুন ২০২৪

#গল্প
#ছোটগল্প
#fiction
#Shortstory

Comments

    Please login to post comment. Login