পোস্টস

চিন্তা

উৎসব সবার!

২৮ জুন ২০২৪

ফারদিন ফেরদৌস

কোনো খ্রিস্টান বড়দিনের দাওয়াত দেওয়ার সময় Pork খেতে বলেছে? কিংবা কোনো হিন্দু পূজার দাওয়াত দেওয়ার সময় Turtle meat খাওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছে? কোনো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রবারণা পূর্ণিমায় দাওয়াত দিয়ে ভেজ খেতে বলেছে? নাহ্! কেউ এমন শর্ত জুড়ে দেয়নি। 
কিন্তু আপনি দিচ্ছেন!

হিন্দুকে ঈদে দাওয়াত দিয়ে তাকে 'বিফ' খেতে বলছেন; যেটা তার জন্য অখাদ্য। কারণ আপনি মু'সলিম তাই নিজেকে খুব স্পেশাল মনে করেন। আপনি মনে করেন অনুভূতি কেবল আপনার একলাই গজায়। আর কারো এটা থাকতে নেই। আসলে আপনি একটা ধর্ম Ass ছাড়া আর কিছুই না। ঈদ-পার্বণ এলেই, 'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার'-আপ্ত বাক্যটি নিয়ে খুব কথাবার্তা চলে। একটা শ্রেণী কথাটি মানবে না বলে ধনুর্ভঙ্গ পণ করে আছে। তা নাই মানতে পারেন, সেটা আপনার স্বাধীন ইচ্ছা। তাই বলে হিন্দুকে গরু খেতে বলবেন? বোধ ও বিবেকের কী বিস্ময়কর অধঃপতন আপনার!

আমার এক সনাতন ধর্মাবলম্বী মামাতো ভাই আছে। খুব সিম্পল রিলেশন, আমার দাদার গ্রামে তাঁর মামার বাড়ি। তো এই মামাতো ভাই গেল বছরখানেক ধরে খুব যত্ন করে একটি গরু লালন পালন করেছেন। এবং কোরবানি উপলক্ষে ভালো দাম পাওয়ার আশায় আজকে বাজারে তুলেছিলেন। ইতোমধ্যে এক লাখ সাত হাজার টাকা মূল্য দিয়ে গরুটি কোনো এক পূণ্যার্থী মু'সলিম ভাই তার বাড়ি নিয়ে গেছেন। ভাইটি স্রষ্টার নামে স্যাক্রিফাইস করে নিজের পরিবার ও সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবেশিদের জন্য সুস্বাদু ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের ব্যবস্থা করবেন। অন্যদিকে আমার মামাতো ভাই গরু বিক্রির টাকায় তাঁর সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাবেন। তাহলে বুঝিয়ে বলেন তো আমাদের কোরবানির ঈদটা কেন আমার ওই মামাতো ভাইয়ের উৎসব হবে না। তিনি তো ঈদকেই তার গরু ত্যাগের মোক্ষম সময় ভেবে নিয়েছিলেন।

ধর্মীয় রিচুয়ালটুকু সসম্মানে যার যার থাকুক। একজনের ধর্ম কখনোই আরেকজন পালন করে দেয় না, দিতে পারেও না। তবে উৎসব হোক সর্বজনীন, সর্বমানুষের। তাই যদি না হবে, পূজায় কেন মু'সলিমরা ছুটি পায়, ঈদেই বা কেন হিন্দুরা রাষ্ট্রীয় ভ্যাকেশনে যায়? কাজেই ঈদে হিন্দুর দোকানে পসার জমুক। পূজায় জমুক মু'সলিমের জীবন জীবিকা। সবার সংসারে সমান হাসি ফুটুক।

কেবলমাত্র বিফ খাওয়া দিয়ে উৎসবে শামিল করবার বাজে ইচ্ছাটা পুরোদস্তুর অমানুষিতা। মামাতো ভাইয়ের লালিত পালিত গরু দিয়ে যদি আপনার কোরবানি হতে পারে, প্রকারন্তরে আপনার দেয়া গরুর মূল্যমানে হিন্দুর উৎসবও হতে পারে। মনটাকে উদার করলে সকলের সম্মিলিত সুন্দর সহাবস্থান সম্ভব। আর মনের গহিনে কট্টরপন্থার কলুষ জিইয়ে রাখলে মু'সলিমদের নিজেদের মধ্যেই শত ভাগ হতে পারে। বিভাজিতের অন্ধকার বাগানে কখনোই মিলনাত্মক আলো ফোঁটে না।

লেখক: সাংবাদিক 
১৫ জুন ২০২৪