পোস্টস

সমালোচনা

কোকাকোলা ও রাজনীতি

২৮ জুন ২০২৪

ফারদিন ফেরদৌস

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড কোকাকোলা যদি বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ গুটিয়ে নেয়, তাহলেই কি ইসরায়েল নিজেদেরকে শুধরে নিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নেবে? এক কথায় উত্তর হলো না। বাংলাদেশের কোকাকোলা বর্জন বা গ্রহণ দিয়ে ইজরায়েলের কূটনীতি সামান্যতমও বদলাবে না।

গাজায় নির্বিচার জেনোসাইড ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে মানবীয় প্রতিবাদ খুব স্বাভাবিক। এই অর্থে বাংলাদেশি প্রতিবাদকারীদের আবেগ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তাদের আবেগের প্রতি আমাদের পূর্ণ সংহতি ও সমর্থন। কথা হলো প্রতিবাদের ধরণ ও এর ফলাফলটা কী? বয়কট কোকাকোলায় কার কী আসবে যাবে?

তর্কের খাতিরে ধরে নেই কোকাকোলার বিজনেস লভ্যাংশের বেনিফিসিয়ারি ইজরায়েলও। কিন্তু কোকাকোলার তুল্যমূল্যে ইজরায়েলকে বহুগুণ বেশি সমর্থন দেয় মার্কিন জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। গুগল, মেটা, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, আইবিএমসহ অন্য প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাও ইসরায়েলের প্রতি তাদের ব্যাপক স'মর্থন দিয়ে আসছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় চালানো গাজা গণহত্যার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো নীরবে ইসরায়েলের সঙ্গে যথারীতি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নানাভাবে প্রযুক্তি সহায়তাও দিয়ে আসছে। যে টেক কোম্পানিগুলোর নাম এখানে উচ্চারিত হলো, প্রত্যেকটিই আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ও সানন্দে ব্যবহার করে ওই কোম্পানিগুলোকে রেমিট্যান্স দিই। তাহলে আমরা কি খেয়াল করেছি ওই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে আমাদের অর্থকড়িও কিভাবে প্যালেস্টাইন জেনোসাইডে ব্যবহৃত হয়? তাহলে দায় কেবল কোকাকোলা কোম্পানিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ থাকা তিন কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে, ভ্যানগার্ড গ্রুপ, ব্ল্যাকরকের ওপর কিভাবে বর্তায়?

এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে টেক জায়ান্টগুলোর তুলনায় কেবলমাত্র ঠুনকো এক কোকাকোলা বর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা আসলে কী অর্জন করতে চাচ্ছি?

তার ওপর এতদিন দেশজ কর্পোরেট হাউজগুলোই কোকাকোলার ব্যবসা করত, এখন এই কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করবার চুক্তি করেছে তুরস্ক।

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখের প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস লিমিটেডকে (সিসিবিবি) অধিগ্রহণ করছে তুরস্কের কোকাকোলা আইসেক (সিসিআই)। ১৩ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে হবে এই অধিগ্রহণ, যা দেশীয় মুদ্রায় ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার সমান।

সিসিআই ইতিমধ্যে এ–সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
সিসিআই কোকাকোলা ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদন, বিতরণ ও বাজারজাত করে থাকে। ১১টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এই কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশগুলো হলো—তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান, ইরাক, জর্ডান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান।

তাহলে এইসময় আমরা কার কোকাকোলা কোথায় বর্জন করছি?

একশ্রেণীর বাংলাদেশি নেটিজেনের কোকাকোলা বয়কটের মুখে কোম্পানিটি তাদের প্রচারণায় নতুন একটি বিজ্ঞাপন এনেছে। সেখানে ইজরায়েলের নাম উল্লেখ না করে তারা বলছে, 'কোককে সবাই যে দেশের পণ্য মনে করছে, আসলে সেই দেশের পণ্য নয় কোকাকোলা। মানুষ সঠিক তথ্য না জেনেই কোকাকোলা বয়কটের ডাক দিয়েছে। ১৯০টি দেশের মানুষ কোক খায়। এমনকি ফিলিস্তিনে কোকাকোলার ফ্যাক্টরি রয়েছে। তাই বিভ্রান্ত না হয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞাপনটিতে।' খুবই প্রামাণিক এবং প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে। কোকাকোলার অরিজিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ, ফিলিস্তিন ও ইজরায়েলসহ বিশ্বের ১৯০টি দেশে তারা ফ্রাঞ্চাইজি দিয়েছে। কিন্তু মূল ব্যবসার প্রধানতম সুবিধাভোগী সংশ্লিষ্ট ওই দেশটিই।

নেটিজেনদের চাপের মুখে ওই বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে থাকা অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন, শিমুল শর্মা, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু প্রমুখকে রীতিমতো দুঃখপ্রকাশ করতে হয়েছে। বিজ্ঞাপনটির নির্মাতা ও অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, আপনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি আবারো বলতে চাই কাজটি শুধুই আমার পেশাগত জীবনের একটি অংশমাত্র। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সবসময় মানবাধিকার বিরোধী যেকোনো আগ্রাসনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আপনাদের অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি।'

বৈশ্বিক আগ্রাসন, দখলদারিত্ব, নব্য উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদী চেতনার ব্যাপারে বাংলাদেশি নেটিজেনদের কোনো আওয়াজ নেই। যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরিচালিত ডিজিটাল উপনিবেশবাদের মাধ্যমে সারাবিশ্বকে ঘোল খাইয়ে যাচ্ছে। আমরা যে ফেসবুক/ইউটিউব/গুগলের ভাষায় কথা বলতে বাধ্য হই -এটা নিয়ে আমাদের নেটিজেনদের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। কারণ ধর্মীয় রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে গিয়ে এরা বৈশ্বিক রাজনীতির অন্দরমহলে প্রবেশাধিকার হারাচ্ছে। এরা বুঝতেই পারছে না নিজেদের অবস্থান বিবেচনায় কোথায় কিভাবে কতটুকু প্রতিবাদ করা দরকার। কার্যত আমাদের কোকাকোলা বর্জনে ফিলিস্তিনিদের জীবনমান এতটুকুও বদলাবে না।

কোকাকোলা বর্জনের ক্ষেত্রে চুটিয়ে ধর্মীয় মোড়ক দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যদি সাচ্চা মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে ইহুদি পণ্য কোকাকোলা বর্জন করুন। এই রাজনীতিতে সজ্ঞানে ঢুকে পড়েছে দেশীয় কোম্পানি আকিজ বশির গ্রুপ। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তামাক ও সিগারেট ব্যবসা যাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি।

নেটিজেনদের কোকাকোলা বর্জনের মুখে দেশীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির কোমল পানীয় মোজো চুটিয়ে ব্যবসা করছে। পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে প্রতি বোতল সফট ড্রিংকস বিক্রি থেকে এক টাকা করে ফিলিস্তিনিদের জন্য গঠিত তহবিলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশের মানুষের ফিলিস্তিনের প্রতি গভীর সহমর্মিতা কাজে লাগাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

আকিজ ফুডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) সঙ্গে আমাদের একটা কন্ট্রাক্ট হয়েছে। আল আজহার ইউনিভার্সিটি-আসক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমরা সরাসরি গাজার জন্য টাকা দিয়েছি।

বাংলাদেশিদের ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে 'মোজো' বিক্রির আয় থেকে কিয়দংশ ফিলিস্তিনে যাচ্ছে। কিন্তু গাজায় থাকা কোকাকোলা কোম্পানির মাধ্যমে সে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে যে ভূমিকা পালন করা হচ্ছে সে তুলনায় আকিজের সহানুভূতি খুব উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।

কী হতে পারে তুরস্কের কোকাকোলা আইসেক তথা সিসিআই যদি আমাদের দেশ থেকে তাদের বিনিয়োগ বাতিল করে? ইজরায়েল আদৌ কোনো ধাক্কা খাবে? মোটেই না। পৃথিবী চলে মোটাদাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চায়না ও রাশিয়ান প্রেসক্রিপশনে। তাদের মোড়লগিরি খর্ব করার বুদ্ধি অর্জন তো বহু দূরের কথা কল্পনাতেও আনতে পারবে না আমাদের 'বয়কট নেটিজেন'রা। তাহলে কোকাকোলা বর্জনে কার কী অর্জন? আর লোকসানই বা কী?

কোকাকোলার আর্থ-সামাজিক প্রভাব বা সোসিও-ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (এসইআইএ) রিপোর্ট মতে, কোকাকোলা বাংলাদেশ কেবলমাত্র ২০১৯ সালেই এদেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১২.২ বিলিয়ন টাকার অবদান রেখেছে। যা দেশজ মোট জিডিপির প্রায় ০.১১ শতাংশের সমান। ওই রিপোর্ট আরও বলছে, বাংলাদেশের ভোক্তারা কোকাকোলা ক্রয় বাবদ ১ টাকা খরচ করলে প্রায় ৮৫ পয়সাই স্থানীয় অর্থনীতিতে যোগ হয়।

তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে বাংলাদেশে দ্য কোকাকোলা সিস্টেম গঠিত। ইউনিটগুলো যথাক্রমে- কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), ইন্টারন্যাশনাল বেভারেজ প্রাইভেট লিমিটেড (আইবিপিএল) এবং আব্দুল মোনেম লিমিটেড (এএমএল)। এসব কোম্পানির সাথে কোনো পর্যায়েই ইজরায়েলের সংযোগ নেই।

কোকাকোলা সিস্টেম বাংলাদেশে প্রায় ২২ হাজার ১০০ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৮৩৩ জন। আর পরোক্ষভাবে কোকাকোলার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার ৩০০। এই সংখ্যা বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ০.০৩ শতাংশ। কোম্পানির প্রতিটি প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য, পরিবহন, কৃষি, উৎপাদন ও অনান্য খাতের প্রায় ২৬টি কর্মসংস্থান সম্পৃক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশে কোকাকোলা তাবানি বেভারেজের (টিবিসিএল) মাধ্যমে ঢাকায় এবং কে রাহমান-এর মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্রবেশ করে ১৯৬২ সালে। এতদিনের ব্যবসায় কোম্পানিটি কোমল পানীয় ব্যবসায় তাদের শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে। এখনো কোক কোটি মানুষের পছন্দের পানীয়।

বিফ বা অন্যবিধ লাল মাংস খাওয়ার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এসব খাবার যেমন মানুষ বাদ দিতে পারে না, তেমনি শরীরের স্বাভাবিক ছন্দে বিঘ্ন ঘটানো কোমল পানীয়ের আসক্তিও মানুষ কাটাতে পারে না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেনে নিয়েই হররোজ গোগ্রাসে মানুষ এসব পানীয় গিলে। তবু শারীরিক ক্ষতি চিন্তা করে যদি সকল পানীয় বর্জনের কথা উঠত, সেটার একটা অন্যদিক থাকত। দেশজ পানীয় মোজোকে প্রমোট করতে গিয়ে যা করা হচ্ছে সেটিকে এক কথায় বলা যায়, আরও অধিক গাড্ডায় পড়া। আমাদের পণ্যের মান সম্পর্কে আমরা খুব ভালোই জানি।

কোকাকোলা কি এই দেশে শুধুমাত্র ব্যবসাই করে? 
উত্তর হলো না। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বহুজাতিক কোম্পানিটি স্থানীয় জনগণের জন্য বিশেষ কিছু কাজ করে। সেটা ফিলিস্তিনে, তুরস্কে, সৌদি আরবে বা বাংলাদেশে।

২০১৫ সালে কোকাকোলা ‘ফাইভ বাই টুয়েন্টি’ অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে ৫০ লাখ নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নেয়। সে সময় বাংলাদেশেই প্রথম নারী ব্যবসা কেন্দ্র (ডব্লিউবিসি) চালু করে ‘ফাইভ বাই টুয়েন্টি’র যাত্রা শুরু করে কোকাকোলা। ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ডব্লিউবিসির মাধ্যমে বাংলাদেশে উপকারভোগীর সংখ্যা হয় এক লাখেরও বেশি নারী ও তাদের পরিবার।

২০১৬ সালে দেশব্যাপী নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য উইমেন বিজনেস সেন্টারের প্রজেক্ট চালু করা হয়। ২০১৭ সালে, কোকাকোলা ওয়াটারএইড নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে উপকূলীয় এলাকায় ওয়াশ অ্যান্ড হাইজিন প্রকল্পের সূচনা করে এবং তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য ময়মনসিংহের ভালুকায় আইবিপিএল-এর একটি কারখানা স্থাপন করে।

২০১৯ সালে, কোকাকোলা পানি সংকটে আক্রান্ত বরেন্দ্র অঞ্চলে ১০,০০০ কৃষককে সম্পৃক্ত করে কৃষিকাজের জন্য পানি সংরক্ষণ প্রকল্প চালু করেছিল এবং পরবর্তীতে এই প্রকল্পের আওতায় তারা পানি সংরক্ষণের অংশ হিসাবে আইবিপিএল প্ল্যান্টে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে।

কোকাকোলা ২০১৯ সালে ১০০,০০০ নারীর ক্ষমতায়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে এবং ২০২১ সালে ১১তম ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিনআপ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এছাড়াও, কোকাকোলা ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড পারপাসের সহযোগিতায় ৪০,০০০ নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০২২ সালে সুনামগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জে ৩০টি নতুন উইমেন বিজনেস সেন্টার চালু করেছে।

কোকাকোলা ২০২২ সালে, আন্তর্জাতিক মিউজিক প্রোপার্টি - কোক স্টুডিওর বাংলাদেশ সংস্করণ, কোক স্টুডিও বাংলা চালু করে। এরই মধ্যে এটি দেশের অন্যতম ট্রেন্ডিং সংগীত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের সকল ফুটবলপ্রেমীদের জন্য কোকাকোলা বিশ্বব্যাপী ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি ভ্রমণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে আসে।

আমরা অনুভব করতে পারব কি, দেশের গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে কতটা ভূমিকা রাখছে কোকাকোলা? বিজ্ঞাপনী এজেন্সিগুলো চলে কাদের টাকায়?

তাহলে কোকাকোলা বর্জনের মাধ্যমে আমরা এতসব সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাগুলো বন্ধ ঘোষণা করবার দাবিও নিশ্চয়ই জানাচ্ছি। আমাদের জিডিপিতে ফি বছর ১২ বিলিয়ন ডলারের অবদান বাতিল করতে বলছি? কোকাকোলার সাথে সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষকে বেকারত্ব বরণের প্ররোচনা দিচ্ছি? একবার ভেবে দেখছি কি, কার পায়ে কাকে কুড়াল মারবার কথা বলছি?

আমরা সমস্বরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলি দখলদারিত্ব কায়েমের নিন্দা করি। শিশু-নারীসহ অগণন মানুষের ওপর নির্বিচারে গণহত্যার প্রতিবাদ জানাই। জাতিসংঘও তাদের সীমিত সাধ্যে ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে নানা ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে ফি'লিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য সংকটের রাজনৈতিক সমাধানে যা বিপুলবিস্তারি ভূমিকা রাখবে। মোদ্দাকথা হলো ধর্মীয় রাজনীতি দিয়ে ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে বৈশ্বিক সমর্থন আদায় করা যাবে না। মনোভাব হতে হবে মানবতাবাদী। মজলুম যেখানে যে ধর্মের বা জাতি-গোত্রের হোক হিতবাদী মানুষ তাদের পক্ষেই সরব থাকবে। আর এই সরবতা সার্থক হবে তখনই বিশ্বজনমত যদি তাতে সংহতি জানায়। সামগ্রিক ক্ষতিবৃদ্ধি ছাড়া বর্জনের বাতাবরণ কোথাও কোনো শুভবোধ ফেরাবে না। কাজেই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে প্রগাঢ় চিন্তাশীলতা ফিরুক-এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: সাংবাদিক 
১২ জুন ২০২৪

#cocacola 
#Boycott 
#Coke 
#কোকাকোলা