Posts

সমালোচনা

আত্মসমালোচনা ও বাতচিতের স্বাধীনতা

June 29, 2024

ফারদিন ফেরদৌস

126
View

আমাদের এলাকার ক্ষমতাসীন দলের এক পলিটিশান কোনো একদিন ভরা মজলিসে বলে দিলেন,
: হু! সাংবাদিক? দুইটাকা হলেই কেনা যায়!

তার কথায় কোনো সাংবাদিক প্রতিবাদ করেনি। যে পলিটিশান কেবলমাত্র তাঁর এক্টিভিস্টদের চাঙ্গা রাখতে মাসে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন। ওই এক্টিভিস্টদের মধ্যে বাঁধাধরা সাংবাদিক থাকে না -এই ভাবনার দিন অনেক আগে বিগত হয়েছে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী নিশ্চিতই ভাগ্যবান যিনি যুগপৎভাবে এমন উদারমনা ও উদারহস্ত স্বামী পেয়েছেন। দুই হাতে টাকা কামান, ছয় হাতে বিলান। দুই হাত নিজের, বাকি চার হাত স্ত্রী ও সন্তানের। খুব স্বাভাবিকভাবেই মিজ লায়লা কনফিডেন্ট নিয়ে বলতে পেরেছেন, 'সাংবাদিক কিনে তারপর এসেছি, সব থেমে যাবে।' লায়লার কথায় পরে আসি।

আপনারা কারা কারা বিশ্বাস করেন যে, বেনজীর-মতিউরদের কোনো বিচার বা শাস্তি হবে? হাত তোলেন দেখি। হাত তো খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না।

আইনের শাসন কায়েমের প্রধানতম শর্ত গণমানুষের বিপ্লব। অতঃপর রাজনৈতিক সদিচ্ছা। যেহেতু দেশে প্রথম শর্ত অনুপস্থিত রাখা গেছে তাই দ্বিতীয় শর্ত মান্যতা বা প্রতিপালনের কোনো জরুরত কারোরই মধ্যে নেই।

এখন আসি সাংবাদিকদের টাকা খাওয়া প্রসঙ্গে। 
আমি ঢাকার কথাও জানি, তবে কিছুই বলব না। আমি ঢাকায় থাকি না। শুধু বলব ঢাকার অনেক সাংবাদিক দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াই অল্পদিনে বিপুল বিত্তশালী হয়েছেন, বাংলার সুইজারল্যান্ড খ্যাত গাজীপুরে জমি কিনেছেন, আমাদের স্বর্গ হিল ট্র্যাকসে রিসোর্ট গড়েছেন এবং বড় টেলিভিশনের মালিক বনে গেছেন। এগুলো পাদপ্রদীপের আলোয় আসে না। কারণ সাংবাদিকদের অন্দরমহলের খবর জানাতে দেশে আলাদা কোনো গণমাধ্যম নেই।

এবার বলি মফস্বলের কথা।
মফস্বলে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের অধিকাংশ হাউজ বেতন ভাতা দেয়া দূরে থাক অনেক হাউজ লোকাল জার্নালিস্টদের কাছ থেকে মাসোহারা নেয়। সাংবাদিকতা মুফতে সেবা দেয়ার পেশা নয়, এটাও জীবন ও জীবিকার অন্যতম জব। তাহলে আপনারাই বলেন যারা জব করেন তারা কি বাপের ব্যাংকের টাকা নিয়ে তার হাউজকে দেবেন?

কাজেই লায়লা কানিজ সাংবাদিকদের নিয়ে এমন ঢালাও মন্তব্য করতে পারেন। মিজ কানিজ আরব্য রজনীর আলিফ লায়লার কাল্পনিক চরিত্র নয়। এই দেশেরই মাটির সন্তান। তার চারপাশে যত সাংবাদিকদের তিনি দেখেছেন সবাই তার উপকারভোগী। যারা ন্যূনতম ইজ্জত সম্মান নিয়ে বেঁচে বর্তে থাকতে চান তাঁরা লায়লার ধারেকাছেও ঘেঁষবেন না।

এইদেশে কালো টাকা সাদা করবার আইন আছে। এভাবে দুর্নীতি বা অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন এখন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। সবাই জানে নয়ছয় করে টাকা কুক্ষিগত করা গেলে পরবর্তীতে ১৫% ট্যাক্স দিলেই সেসব অর্থ জায়েজ হয়ে যাবে।

অবৈধ অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে সম্ভব সকল পক্ষকে খুশি‌ রাখতে হয়। ঢালাওভাবে সবার ওপর দায় চাপানো যাবে না, তবে খুশি থাকা গোষ্ঠীর মধ্যে অবধারিতভাবে একশ্রেণীর সাংবাদিক আছেন। সবাই দেখছে বিশেষায়িত একটি গ্রুপে পড়া ব্যুরোক্রেট, পুলিশ, বিজনেসম্যান ও পলিটিশানরা বিপথে কালো টাকা আয় করেন। সাংবাদিকরা খুশি না থাকলে সেই খবরগুলো অঙ্কুরেই মানুষ জানতে পেত না? তাতো জানছে না। ছাগলকাণ্ডের মতো কিছু ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার ম্যাজিকাল কারিশমায় পাদপ্রদীপের আলোয় এলে সেসব নিয়ে সাংবাদিকরা পড়ে থাকেন। সত্যিকারের অনুসন্ধান বলে তো তেমন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

আমাদেরকে কথা বলতে হবে 
কেন দেশের গণমাধ্যম এমন হয়ে গেল?
কেন শক্তিশালী গণমাধ্যম নেই?
কেন আমাদের মতামতের গ্রহণযোগ্যতার পরিসর কমে গেল?
কেন লুটপাট, দুর্নীতি ও অসাধুতা বন্ধ করা যায় না?
কেন প্রায় সবাইকে যেনতেনভাবে ধনী হয়ে উঠবার দুর্নিবার নেশায় পেয়ে বসেছে?

দার্শনিক নোয়াম চমস্কি বলেছেন, "মানুষকে বাধ্য ও নিষ্ক্রিয় রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাদের মতামতের গ্রহণযোগ্যতার পরিসর কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু সেই পরিসরের মাঝেই আবার সক্রিয়ভাবে যেন বিতর্ক করা যায়, সেই সু্যোগটাও করে দেওয়া, এমনকি ভিন্নমত পোষণ ও সমালোচনা করার জন্য উৎসাহিতও করা। এর ফলে মানুষ মুক্তচিন্তার চর্চা হয় ভেবে শান্তি পায়। আদতে তো তারা সেই ক্ষুদ্র পরিসরের মাঝেই আটকে যাচ্ছে আরো শক্তভাবে।"

আমরা আমাদের সামগ্রিক অবস্থান বুঝতে পারছি তো?

লেখক: সাংবাদিক 
২৯ জুন ২০২৪

#গণমাধ্যম
#স্বাধীনতা
#মুক্তচিন্তা

Comments

    Please login to post comment. Login