কষ্টি পাথর নিয়ে অনেক কথা শুনেছেন। এর মধ্যে আছে সত্য-মিথ্যা। আজ আমরা কিছুটা হলেও সত্য জানার চেষ্টা করব। আগ্নেয়গিরির লাভা শীতল হয়ে অতি কঠিন শিলায় পরিণত হয়, তা বিভিন্ন রঙে ও মিশ্রিত রঙে পাওয়া যায়। আর প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে ওগুলো 'ব্ল্যাক বেসল্ট স্টোন' বা আগ্নেয়শিলা শ্রেণির কালো রঙের পাথর।
আমরা অনেকে কালো রঙের পাথরে নির্মিত বস্তুকে দেখলেই কষ্টি পাথরে তৈরি বস্তু নামে অভিহিত করে থাকি। কষ্টিপাথর আসলে খুব বেশি দামী তা নয়। এসব পাথর নানা রঙের হয়। এসব রঙের মধ্যে কালো রঙ বেশ দুস্প্রাপ্য। তাই কালো পাথরের চাহিদা বেশি, তাই দামও কিছুটা বেশি। কিন্তু আমরা যে মাঝে মাঝে বিভিন্ন সংবাদে দেখি, কোটি টাকার কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার হয়েছে তাও আসলে সত্য নয়। এদের বেশির ভাগ পাথর ভুয়া পাথর। প্রতারক চক্রগুলো এভাবেই অনেকের সাথে প্রতারণা করে থাকেন।
বিশেষত্বঃ
আসলে মূর্তির দাম তার প্রাচীনত্বের উপর নির্ভর করে, সে কষ্টিপাথরের উপর না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রকৃত প্রত্নবস্তুর দাম নির্ধারণের কোনো পদ্ধতি নেই। কারণ বস্তুগতভাবে উপাদানটির বাজারমূল্য আহামরি কিছু নয়। প্রাচীনত্বই এর বিশেষত্ব।
জেনে রাখ ভালো কালো পাথরে হলেই প্রত্নবস্তু নয়। কোনো নমুনা প্রত্নবস্তু কি-না তা নির্ধারণের কিছু স্বীকৃত প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু প্রত্নবস্তু হলেও এর দাম নির্ধারণ করা হয় না। কারণ এগুলো অমূল্য। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুলিশ-র্যাব ও আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন নমুনা প্রত্নবস্তু কি-না তা পরীক্ষার জন্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। এখানে রাসায়নিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষার মাধ্যমে সেগুলোর প্রাচীনত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। প্রত্নবস্তু হিসেবে স্বীকৃত হতে গেলে সেই নমুনাটি অন্তত ১০০ বছরের পুরনো হতে হয়। শুধু পুরনো হলেই চলবে না, সেটি হতে হবে মানুষের তৈরি বা ব্যবহূত উপাদান। সেটির শৈল্পিক গুরুত্বও থাকতে হবে। সংগ্রাহকদের কাছে প্রত্নবস্তু বিক্রর জন্য চোরাচালানি চক্র অনেক প্রতারণার আশ্রয় নেয়। কষ্টিপাথরের মূর্তি, প্রাচীন ধাতব মূর্তি ও মুদ্রা প্রত্নবস্তু হিসেবে অনেক দামে বিক্রি করলেও বেশিরভাগ সময় পরীক্ষায় তার অনেকগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়।
কষ্টি পাথর কোথায় ব্যবহার হয়ঃ
আগ্নেয়গিরির লাভা শীতল হয়ে অতি কঠিন শিলায় পরিণত হয়। তা বিভিন্ন রঙে ও মিশ্রিত রঙে পাওয়া যায়। কষ্টিপাথর বা নিকষপাথর সোনাসহ কিছু ধাতু যাচাইয়ের কাজে ব্যবহূত হয়। এ পাথর আসল সোনা, রূপা, প্লাটিনাম সনাক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। পাথরের গায়ে সোনা ঘষে তার উপর এসিডের প্রলেপ দিয়ে সেটি কত ভরি সোনা তা নির্ধারণ করা যায়। পাথর যত কালো হবে ততই সোনার ঔজ্জ্বল্য বোঝা যাবে। তাই কালো কষ্টিপাথরের চাহিদা বেশি।