পোস্টস

গল্প

যে জীবন ব্যাংকারের

১ জুলাই ২০২৪

জাকির সোহান

ছেলেটার জীবন শেষ তারপরও অন্তত করে মিলে তো খেতে পারবে- এটাই স্বান্ত্বনা অবসর প্রাপ্ত ব্যাংকার রাশেদ সাহেবের।
ছেলে অন্যকোনো চাকরী জুটাতে না পারলেও শেষ বয়সে ব্যাংকে চাকরী হওয়ার খবরে বাধ্য হয়ে কিছুটা আরাম খুঁজছেন  রাশেদ সাহেব।
তিনি স্বপ্ন দেখতেন তার ছেলে হবে ফরেন ক্যাডার। এটা হতে না পারলে এডমিন, এডমিন   না হলে এডুকেশন ক্যাডার তো হতেই হবে। আর না হলে নন ক্যাডার হলেও শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবে ছেলে। রাশেদ সাহেব ব্যাংকার হলেও ভুলেও কখনো ছেলেকে ব্যাংকার হিসেবে কল্পনা করেননি। তিনি চাননি তার মতো বিভীষিকাময় পেশা হোক তার ছেলের। কিন্তু কপালের ফের। ক্যাডার তো দুরের কথা নন ক্যাডারও হতে পারছে না ছেলে। একপর্যায়ে ঘুষ-ঘাস দিয়েও যে কোনো সরকারি চাকরি বাগাতে পারলো না ছেলেটা। হতাশায় নিমজ্জিত রাশেদ সাহেব, অসহায় তার ছেলে।
অনেক দিনপর এলো ব্যাংকের খবর। ঠিক বয়স শেষের দিকে- তবুও এটাই এখন বেঁচে থাকার অবলম্বন। 
রাশেদ সাহেব এখন ছেলেকে ভালো থাকার দোয়া করতে গিয়েও থমকে দাঁড়ান বার বার। নিজে থেকে ডুকরে কেঁদে ওঠেন দোয়া করতে গিয়ে। কারন তিনি জানেন, নিজের সারা যৌবন উৎসর্গ করে বুঝেছেন, যতই দোয়া করুন না কেন ছেলে ভালো খেতে পারবে, পড়তে পারবে কিন্তু কোনো দিন শান্তিতে থাকতে পারবে না। অফিস শুরুর সময় আছে শেষের সময় নাই- তার জ্বলন্ত প্রমান স্বয়ং তিনি। যেদিন ছেলে জয়েন করতে যাবে, বাবার কাছে দোয়া নিতে এসেছে- মনে হয় রাশেদ সাহেব ছেলেকে চিতায় তুলে দিচ্ছেন। ধুকে ধুকে মরার পথে ছেলেকে ঠেলে দিচ্ছেন।
ছেলে জয়েন করে। এরপর ছেলের মুখ দেখার জন্য চাতকের মত চেয়ে থাকেন। এটা হবে তিনি জানতেন-তারপরও মানতে কেন জানি কষ্ট হচ্ছে। 
একদিন রাশেদ সাহেব হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। জানেন ছেলেকে ফোনে জানিয়েও লাভ নেই- তাই ছেলেকে বাদ দিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশির সাহায্যে হসপিটালে ভর্তি হন। ছুটির দিন ছাড়া ছেলে আসতে পারবে না এটা ভালো করেই জানা। ছুটির দিনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রাশেদ সাহেবের অবস্থা শেষ পর্যায়ে। ছেলে বৃহস্পতিবার রাতেই চলে এলো। বাবার মুখে কথা নেই শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। রাশেদ সাহেব ছেলের জন্য মনে মনে শেষ দোয়া করলেন- ব্যাংকার ছেলেটার অফিসটাইম যেনো দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত হয়। কিন্তু এই দোয়া কেউ বুঝলো না। ডাক্তার শুধু বললেন, দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করুন।