দুবাই টু নিউইয়র্ক ফ্লাইটে আমার পাশের সীটে একজন ইরানী লোক বসেছিলেন।
প্লেনে উঠার পরেই উনি আমাকে ইন্ডিয়ান ভেবে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে বুঝালেন সামনের সীট এর দুই ভদ্রলোক এর মাঝখানে যে মহিলা বসা উনি তার স্ত্রী।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি তার স্ত্রীকে আমার পাশে বসতে দিব কিনা।
আমি বললাম- অবশ্যই, কোন অসুবিধা নেই।
ভদ্রমহিলা আমার পাশে এসে বসলেন এবং খানিকক্ষন পরেই আমি রিয়েলাইজ করলাম , উনি নিজের ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষা জানেন না। এমনকি কাজ চালানোর মত বেসিক কোন ইংরেজি শব্দও না।
টেকঅফ এর একটু পরেই উনি ইশারায় বোঝালেন উনার অনেক মাথা ব্যথা।
আমি কেবিন ক্রুকে ডেকে অসুধ দিতে বল্লাম।
কেবিন ক্রুরা যেহেতু উনার সাথে কমিউনিকেট করতে পারছিলেন না তাই ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ এর সময় তারা আমাকে বললেন তাকে খাবারের প্রেফারেন্স জিজ্ঞেস করতে।
আমি মোটামুটি গরু ছাগল মুরগীর এক্টিং করে তাকে ভেজ ননভেজ বুঝিয়ে খাবার নিয়ে খাওয়ালাম।
বুঝতেই পারছিলাম উনি টয়লেটও ইউজ করতে পারেন না। তাই তাকে দুই তিন ঘণ্টা পর পর জোর করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে দরজায় পাহারা দিয়ে টয়লেট ইউজ করিয়ে আনলাম।
সম্ভবত এটাই উনার প্রথম বিদেশ যাত্রা ছিল। তাই এগুলো খুব স্বাভাবিক ব্যপার ছিলো।তার মধ্যে ভাষার ব্যারিয়ার।
অস্বাভাবিক যেটা ছিল সেটা হল, এই চৌদ্দ ঘণ্টায় তার স্বামী ভদ্রলোকটি একবারও পেছন ফিরে দেখেন নি তার স্ত্রীটি জীবিত আছে না মরে গেছে? সে কিছু খেয়েছে নাকি খায়নি? তার টয়লেটে যেতে হবে কিনা? কিচ্ছু না ।
অথচ আমি খেয়াল করছিলাম, ভদ্রলোক এর যেহেতু কমিউনিকেশন স্কিল ভালো, সে বিন্দাস খাবার চেয়ে চেয়ে খাচ্ছে, পাশের লোক এর সাথে গল্প করছে, ঘুমাচ্ছে টিভি দেখছে। অথচ পেছনের সীটে বসা স্ত্রীর কথা সিমপ্লি মনে নাই তার। কি অদ্ভুত।
আমার এত মায়া লাগলো, মনে হল আমার পাশে যে বসে আছে সে একটা পাখী যে দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দী থাকতে থাকতে উড়তে ভুলে গেছে। ভীত সন্ত্রস্ত, দ্বিধাদণ্ডে জর্জরিত, বোধবুদ্ধি লোপ পাওয়া একটা প্রানী, একটা সন্তান জন্ম দেয়ার মেশিন।
আমার খুব ইচ্ছা করছিলো জিজ্ঞেস করি,
- এর সাথে কিভাবে থাকেন?
কিন্তু এই কথা ইশারারায় কিভাবে বুঝাবো সেটাই বুঝছিলাম না।
মনটা খুব উদাস হলো এটা ভেবে যে, এখনো পৃথিবীর কোথাও কোথাও মেয়েরা কত পিছিয়ে আছে। সভ্যতার ছোঁয়া পর্যন্ত পায়নি তারা।
ভারতের পাঞ্জাব, হিমাচল, রাজস্থান প্রদেশে এমন গ্রামও আছে যেখানে একই সাথে একাধিক পুরুষ এর সাথে একটা মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়। ক্রাইম পেট্রোল এর একটা এপিসোডে দেখেছিলাম ছয় ভাই এর সাথে একটা কিশোরীর বিয়ে দেয়া হয়েছে।ফুলশয্যায় পালাক্রমে একের পর এক তারা মেয়েটার কাছে আসছে। কি বীভৎস। নিশ্চিতভাবে যেকোন মেয়ের কাছে এরকম ফুলশয্যার থেকে মৃত্যুশয্যা শ্রেয়।
Unfortunately শুধু অশিক্ষিত সভ্যতার ছোঁয়া না পাওয়া মেয়ে না বরং অনেক শিক্ষিত, স্বনির্ভর, কর্পোরেট চাকরী করা, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, আমলা মেয়েরা এখনো ভয়ানকভাবে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর স্বীকার হয়। তুচ্ছ কারনে হাসবেন্ড এর হাতে মার খায়।
এসব কারনে আমার আজকাল বেয়ারা, বেহায়া, নিয়মভাঙ্গা, প্রতিবাদী, তথাকথিত খারাপ মেয়েদের বেশী ভালো লাগে।
একটা মাত্র জীবন যদি মার খেয়ে কাটানো লাগে, অমন ভালো মেয়ের কোন দরকার নাই।
তার থেকে আমার খারাপ মেয়েই ভালো