দেশের এতো উন্নয়ন হবার পরেও কিছু মানুষের চোখে কেন উন্নয়ন দেখা যায় না, এইটা নিয়ে বিশাল একটা বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন পান্না মিয়া।
- আরে শুনেন, আমি তো টিভি খুললেই খালি উন্নয়ন দেখি। আসলে যারা দেশের ভাল চায় না, দেশকে ভালবাসে না, যাদের মধ্যে কোন চেতনা নাই। তারাই এসব অপপ্রচার করে।
এই কথা বলেই দোকানের ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন, এইসব কী আজেবজে চ্যানেল দেখিস, বিটিভি দে।
ছেলেটা মিন মিন করে কী যেন বলল, ঠিক বুঝা গেলোনা।
পান্না মিয়া এবার হুঙ্কার দিয়ে বললেন,
-এই হারামজাদা, রিমোট আমার কাছে দে।
ছেলেটা ভয়ে ভয়ে রিমোট এগিয়ে দিল। পান্না সাহেব অনেক সময় ধরে রিমোট টিপেও চ্যানেল বদলায়ে বিটিভি দিতে পারলেন না। শেষে বিরক্ত হয়ে বললেন
- কিরে রিমোট কী নষ্ট নাকি। চ্যানেল বদলায় না কেন?
পাশ থেকে একজন বলল
-চাচা , চ্যানেল বদল হবে কেমনে, কারেন্ট নাই, তাই ডিশ লাইনও নাই। এইটা তো জেনারেটর এ চলতেছে, অমরা মেমোরিতে বাংলা সিনেমা ভরে দেখতেছি।
এই কথা শুনে পান্না মিয়া আস্তে করে রিমোট টা দোকানের ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা রিমোটটা হাতে নিয়ে মুখ টিপে একটু হাসতেই, পান্না মিয়া খ্যাক খ্যাক করে উঠল,
- এই হারাম জাদা , কারেন যে নাই এই কতা তুই আগে কবি না ….
আরো কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন পান্না মিয়া, কিন্তু তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোনটা কানে ধরেই বেশ চড়া গলায়ই বললেন,
- হ্যালো!! কী হইছে, বাড়িতে কী আগুন লাগছে?
বলেই চুপ হয়ে গেলেন তিনি। মিনিট খানেক ফোন কানে ধরে রাখলেন। এর মাঝে তিনি শুধু দুইবার হু এবং একবার আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলেন। তার চেহারায় তত সময়ে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। কেমন যেনো মনমরা হয়ে গেলেন । আস্তে করে ছেলেটাকে হাফ লিটার কেরোসিন তেল দিতে বললেন।
- জলদি দাও, তোমার চাচী অর্ধেক রান্না শেষ করে বসে আছে এদিকে গ্যাস গেছে চলে। কি একটা ঝামেলা।
কেরোসিন এর বোতল নিয়ে পান্না মিয়া জোর কদমে হাঁটা দিলেন। আর মনে মনে নিজেকে স্বান্তনা দিলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধটা শেষ হলেই সব কিছুর দাম কমে যাবে। শালারা যুদ্ধ বাধায়ে সবকিছুর দাম বাড়ায়ে দিছে। বলেই তিনি মেসির মত একটা লাত্থি দিলেন শুন্যে। সাথে সাথে তিনি পা চেপে ধরে ও মাগো বলে নেইমার এর মত রাস্তায় গড়িয়ে পরলেন। লাথি তিনি শুন্যে দিলেও, ভাঙা চুরা রাস্তার একটা আধলা ইটে তার লাত্থিটা লেগেছে। বুড়ো আঙুলের মাথার দিকে একটু ভেজা ভেজা মনে হল, ফোনের আলোটা জ্বেলে দেখলেন, রক্ত বের হচ্ছে। ততক্ষনে কেরোসিনের বোতলটা গড়িয়ে চলে গেছে পাশের ডোবায়। কিছু সময় দম নিয়ে উঠে দাড়ালেন তিনি। ফোনটা হাতে নিয়ে নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে ডোবার দিকে নামতে থাকলেন তিনি। যুদ্ধের এই বাজারে হাফ লিটার কেরোসিন এর যে অনেক দাম।