পোস্টস

গল্প

পাপমোচন

৩ জুলাই ২০২৪

হিমু মোহাম্মাদ

কবিতার কাছে আমার অনেক অপরাধ জমা হইয়া ছিলো। স্কুল জীবনের পরিচয়, প্রেম (এক পাক্ষিক) ও পাপ। যে পাপের কোন প্রায়শ্চিত্ত করা হয় নাই- সময় ও সুযোগের অভাবে। তারপর মেলাদিন কোন দেখা সাক্ষাৎ নাই। হঠাৎ একদিন এফবি’র পিপল ইউ মে নো তে দেখি তারে। তারপর এফবি তে যোগাযোগ।

গালাগালির ইচ্ছা প্রকাশ করে কবিতা একদিন আমাকে তার সেল নম্বর দেয়৷ আমি অপরাধী হিসেবে তার এই আবদার মিটাইতে কল করি৷ কিন্তু সে আমারে গালাগালি করেনা৷ একথা সেকথা বলে রাত পার হইয়া যায়৷ কবিতার কথা ফুরায় না৷ আমি আগে থেকেই তার প্রতি দুর্বল সুতরাং আমি কল দিতেই থাকি৷ সেও কথা বলতে থাকে৷ আমি মুগ্ধ হইতে থাকি৷ মাঝে মধ্যে তারে মনে করায়া দেই তার আমারে গালাগালি করার কথা৷ সে বলে পরে করবো৷ আমি অপেক্ষায় থাকি৷ একদিন সে জানায় তার পক্ষে গালাগালি করা সম্ভব না৷ আমি আশাহত হই না৷ একদিন নিশ্চই পারবে৷

তারপর বহুদিন কোন খোঁজ খবর নাই৷ ফেসবুকে দেখতে পাই সে মামার বাড়ি বেড়াইতে গেছে৷ সেলফি আপলোড কইরা জানতে চায়- কেমন আছো বন্ধুরা? আমি দেখি আর বাপ্পী লাহিরির মত গুনগুনিয়ে বলি, রেখেছো যেমন৷ হঠাৎ একদিন তার মিসকল আসে৷ আমি কল করতেই বলে নম্বরটা ভুল কইরা চাইপ্পা ফেলছে। ভুল করে কল চলে এসেছে৷ এই ভুলের স্বরূপ উন্মোচনে সে দীর্ঘক্ষণ আমাকে বুঝায়৷ ভুলের ব্যাখ্যা আমাকে মুগ্ধ করে৷ তারপর বারবার সে ভুল করতে থাকে৷ আর আমি যেহেতু দুর্বল সেহেতু রাতদিন তার ভুলের ব্যাখ্যা শুনতে থাকি৷ একদিন তারে মনে করায়া দেই আমারে তার গালাগালি করার কথা৷ তারপর কয়েক দিন গালাগালি বিষয়ে কথা হয়৷ আমি বলি যে, আমি কলোনিতে বড় হওয়া ছেলে৷ গালি অভিধান ভেজে খাওয়া আমার৷ সে বলে, মেয়েদের গালি বড় মিঠা৷ খাইলে শুধু খাইতেই ইচ্ছা হবে৷ তারপর সে হঠাৎ নাই হইয়া যায়৷ আমি আশাহত হই না৷ কপালে গালি থাকলে ঠেকায় কোন শালা৷

কবিতা তখন কই আছে না আছে আমি জানি না৷ মাঝেমধ্যে তার বিপ্লবী স্ট্যাটাস দেখি৷ মনে হয় বাম হইয়া গেছে৷ বামের উপরে কোন প্রগতি নাই৷ বঙ্গবন্ধু বলেছেন, জনগণ চলে পায়ে হেঁটে আর বামেরা চলে উরুজাহাজে৷ একদিন একটা মেসেজ পেলাম৷ লিখেছে, গরু তুই মর! তোর খাওয়ানোর কথা ছিলো৷ আর একলা একলা খাইলি! আমি পত্রপাঠ থ হয়ে গেলাম৷ কবে কখন খাওয়ানোর কথা আমি কিছু বুঝতে পারলাম না৷ দশ মিনিটের ভিতর কবিতা কল করলো৷ সরি, ভুল করে মেসেজ চলে গেছে৷ বন্ধুকে পাঠাইতে গিয়ে আপনাকে পাঠায়া দিছি৷ আমি বললাম ওকে৷ নো প্রবলেম৷ কথার মাঝখানে কল কেটে গেলে ভদ্রতার খাতিরে (আসলে আমি তার প্রতি দুর্বল বলে) কল বেক করলাম৷ দীর্ঘ সময় তার বন্ধুর কথা শুনলাম৷ মেসেজের মানে জানতে পারলাম৷ বুঝতে পারলাম মেসেজটা ভুল করে ঠিকানা ভুল করছে৷ তার বোঝানোর দক্ষতায় আমি মুগ্ধ ৷ এরপর অনেক অনেক দিন আমি মুগ্ধ হইতে থাকলাম৷ একদিন মনে করায়া দিলাম সে আমারে গালাগালির ইচ্ছা পোষণ করেছিলো৷ সে বললো গালাগালির মুড নাই এখন৷ গালাগালির যে বিশেষ মুড লাগে জানতে পাইরা আমি মুগ্ধ হইলাম৷ দিনরাত মুগ্ধতায় আটকায়া থাকলাম৷

একদিন কবিতা তার বান্ধবীর সাথে পরিচয় করায়া দিলো৷ কথায় কথায় বান্ধবী বললো, আপনার ব্যক্তিত্ব নাই? এই নাই সেই নাই৷ নাই এর বস্তা নিয়া হাজির হইছে বান্ধবী৷ কয়, আপনি গালি খাইতে এত এত দিন অপেক্ষা কইরা আছেন? এরপর ও কিছু দিন কবিতা মুগ্ধ করতো৷ বান্ধবীরে বলা হয় নাই গালি তো একটা ছুতা মাত্র৷ আমি তো পাপমোচনের জন্যে অপেক্ষা কইরা আছি৷ এখন ও অপেক্ষা কইরা আছি যে কোন দিন কবিতা হয়তো ভুল কইরা মেসেজ কইরা ফেলবে৷ তারপর কল কইরা ভুলের ব্যাখ্যা দিবে। বলবে গালাগালি করার জন্য ফিরা আসলাম৷ আর আমার আত্মার পাপমোচন ঘটবে।

১৬ মে, ২০১৬