পোস্টস

গল্প

পরিণয়

৩ জুলাই ২০২৪

Tanzim Bari

দরজার লক করে, ডিম লাইট জ্বেলে, টিউবলাইট নিভিয়ে করে যখন বিছানায় উঠতে যাব তখন নতুন বউকে আঁতকে উঠে পিছনে সরতে দেখে আমি একটুও অবাক হলাম না। সবকিছু সিনেমার মত মনে হল। একেবারে খাঁটি বাংলা সিনেমা। যেখানে দেখা যায় স্বামী বাসর ঘরে ঢুকে আঁচল তুলে বউয়ের মুখ দেখতে যাবে, এমন সময় বউ বলে ওঠে, 'আমার থেকে দূরে থাকুন, আমাকে ছোঁবেন না'; অনেকটা সেরকম।

তিন-তিনবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বাবা-মার পছন্দ করা মেয়েকে (বাবা-মার পছন্দ বললে ভুল হবে, খালাম্মার পছন্দ করা মেয়েকে) বিয়ে করলাম। সত্যি বলতে নিজের খুব একটা ইচ্ছা ছিলনা। বিয়ে করতে হয় তাই করা। মেয়েদের প্রতি কেমন যেন একটা বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। মেয়েদের প্রতি বিশ্বাসটাও এতদিন হারিয়ে গেছে বললে খুব বাড়িয়ে বলা হবেনা। বিয়ের আগ মুহূর্তেও মনে হয়েছে মেয়েটি আমাকে না বলে দিবে, আগেরগুলোর মতই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন বিয়েটা হয়ে গেলো, তখন বেশ অবাক-ই হলাম। 

.

এর আগেও যাদেরকে ভালোবেসে আপন করে নিতে চেয়েছি, কেন জানি তারা কিছুতেই আমাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। বিশ্বাস করে আমার হাতটা ধরতে চায়নি। চেনা মানুষই যখন আমাকে আপন করে নিতে সাহস পেল না, তখন অচেনা কোন মেয়ে আমাকে আপন করে নেবে - এই আশা আমি কখনোই করিনা। তাই রূপা যখন বাসর রাতে আমাকে দেখে আঁতকে উঠে পেছনে সরে গেল, তখন আমি একটুও অবাক হলাম না। আবছা আলোয় তার চোখে ভয় আর ঘৃণার একটা মিশ্র অনুভূতির উপস্থিতি টের পেলাম। সেটা আমার প্রতি নাকি সম্পূর্ণ ছেলে সম্প্রদায়ের প্রতি তা বুঝতে পারলাম না। প্রথম রাতের ভয় কিংবা ব্রাইটগ্রুম ফ্রিজিডিটিও হতে পারে। কিন্তু আমি তো হিংস্র হায়েনা না। সংসারধর্ম থেকে আগ্রহ অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি। ওকে না ঘাঁটিয়ে একটা বালিশ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লাম। মনে হল সে হাপ ছেড়ে বাঁচল। আজ ভীষণ গরম পরেছে। ঘরে নতুন বউয়ের সামনে তো আর জামা কাপড় ছেড়ে লুঙ্গি পরে শুয়ে থাকা যায় না। মোটা খদ্দরের পাঞ্জাবী পরে ঘামতে ঘামতে ঘুমিয়ে পরলাম। মাঝে মাঝে হয়ত ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। ঘুমের ঘোরে এক অচেনা মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ভূতের অস্তিত্ব না থাকলেও ভূতের ভয়ের অস্তিত্ব নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। তবে এ পর্যন্ত কোন ভূত কারোও ঘাড় মটকে ফেলেছে শুনিনি। এই সান্ত্বনা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কান্নাটা যে নতুন বউয়েরও হতে পারে, তা মাথাতেই আসল না।

.

সকালে ঘুম ভাঙতে প্রথমে যেটা চোখে পড়ল, সেটা হল দুটি চোখ আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । কোথায় আছি মনে পড়ছেনা। এমনটা আগে কখনো হয়নি বলে একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম। হঠাৎ করেই সব মনে পড়ে গেল। নতুন বউটি খুব সুন্দর। টানা টানা চোখ। মেয়েটির বাবা হূমায়ুন আহমেদের ভীষণ ভক্ত। টানা টানা চোখ দেখে মেয়ের নাম রেখে দিয়েছিলেন রূপা। আমাকে উঠতে দেখে রূপা সোজা হয়ে বসল।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নতুন বউ স্বামীর কাছে প্রথম কয়েকদিন 'জাস্ট ফ্রেন্ড' হয়ে থাকতে চায়। তাই ভাবলাম কালরাতের জন্য আমাকে ধন্যবাদ দেবে। সৃষ্টি জগতের সবকিছুই রহস্যময়। সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের মাঝে রহস্য মনে হয় দুই কেজি বেশিই দিয়েছেন। রূপা তো ধন্যবাদ দিলই না বরং আমাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, 'তুমি আমাকে অপছন্দ কর, তাইনা?' 

মনে মনে বললাম পছন্দ করারই তো সময় পেলামনা, অপছন্দ করব কিভাবে? মুখে বললাম, 'তা কেন?'

রূপা আপন মনেই বলতে শুরু করল, 'আমি কি দেখতে এতই খারাপ যে কাল রাতে একটি বারের জন্যেও কথা বললে না। আর কিছু তো বাদই দিলাম'। রূপার ঠোঁট কাঁপতে লাগল। মনে হল সে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করবে। 

আসলেই অন্যায় হয়ে গেছে। কাল রাতে লুতুপুতু প্রেম-ভালোবাসার কথা নাবললেও টুকটাক কিছু কথা বলা উচিৎ ছিল। অন্তত ওর রূপের প্রশংসা করা উচিৎ ছিল। প্রতিটা মেয়েই তার স্বামীর কাছ থেকে তার রূপের প্রশংসা পেতে চায়। সত্যি বলতে কি ওর মায়াবী টানাটানা দুই চোখ দেখেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। এসব বলতে চেয়েও বলতে পারলামনা। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ওকে কাছে টেনে নিলাম। এর যা হল তা বলা যাবেনা। সেন্সর বোর্ডে আটকে যাবে। 

যাইহোক বউটা আমার মন্দ নয়। ইনফ্যাক্ট ভালো, বেশ ভালো। বিয়ের পরেও কিন্তু প্রেম হয়!