নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন নবীনগর উপজেলার অন্তর্গত
সেই কাইতলায় তৎকালীন সময়ে বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী ছিলেন মূল জমিদার এবং পর্যায়ক্রমে তার তিন পুত্র যথাক্রমে:
(১) তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরী
(২) অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরী এবং
(৩) ঈশান চন্দ্র রায় চৌধুরী
জমিদারির তদারকি করেন। শুনা যায় তারা পশ্চিম বঙ্গের শিম গাঁও নামক স্থান থেকে কোন এক সময় এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন।
নিঃসন্তান তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরীর পর (পোষ্যপুত্রের নাম অবনী চন্দ্ররায় চৌধুরী। তিনিও ছিলেন নিঃসন্তান।) জমিদারির দায়িত্ব পান অভয়চন্দ্র রায় চৌধুরী। তিনি অনেক জনহিতকর কাজ করেন বলে জানা যায়। অভয়চন্দ্র রায় চৌধুরীর নামানুসারে আজও কসবার মেহারী ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের পশ্চিমাংশকে অভয় নগর নামে অভিহিত করা হয়। জমিদার অভয়চন্দ্র রায় চৌধুরীর পুত্র অনঙ রায় চৌধুরী (যিনি পটু বাবু নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।) আনুমানিক ১৯২৫/২৬ সালের দিকে ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা, বামপন্থী রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ,কিংবদন্তী কমরেড জ্যোতি বসুর (১৯১৪ - ২০১০) (চাচাত বোন) বড় চাচার মেয়ে জ্যোৎসাময়ী রায় চৌধুরানীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কমরেড জ্যোতি বসু খুব ছোটবেলায় বড় চাচার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি কাইতলা জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
জমিদার পুত্র অনঙ রায় চৌধুরী ও জ্যোৎসাময়ী রায় চৌধুরানীর তিন সন্তান যথাক্রমে গোপাল চন্দ্র রায় চৌধুরী, ভুনো চন্দ্র রায় চৌধুরী, অতিন্দ্র মোহন রায় চৌধুরী। অতিন্দ্র মোহন রায় চৌধুরী-যিনি এলাকার মানুষের কাছে হারু বাবু বলে সমধিক পরিচিত ছিলেন।কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী হিসেবে তিনি অামরণ কাজ করে গেছেন। অামি লেখক তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে দেখেছি। মিশেছি। কথা বলেছি।অনেক তথ্য পেয়েছি। স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত অথচ তিনি ছিলেন চিরকুমার। জমিদার বংশের নিবু নিবু এই প্রদীপ ২০০৩ সালে নানান অসুস্থতা জনিত কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতা যাওয়ার আগের দিন পরলোকগমন করেন। উনার বড়ো দুই ভাই সপরিবারে কলকাতা শহরে বাস করতেন। এখন আর কেউ বেঁচে নেই।
কালক্রমে অভয়চন্দ্র রায় চৌধুরীর পর সুপ্রসন্ন ঈশান চন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদারীর সমস্ত দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন। বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য তিনি এখনো এলাকার মানুষের কাছে প্রাত স্মরণীয় হয়ে অাছেন। জমিদার ঈশান রায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে কসবা থানার মেহারী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে ঈশান নগর। হয়তো ঐ গ্রামের অনেক লোকেরাই জানেনা এ ধরনের নামকরণের তাৎপর্য।অাপাদমস্তক জমিদার প্রকৃতির ঈশান রায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন যজ্ঞেশ্বর রায় চৌধুুরী। পিতার মৃত্যুর পর তিনি জমিদারীর দায়িত্বও পান। তবে তাঁর অামলে জমিদারী ও ঐশ্বর্যের ভান্ডারে ভাটার স্রোত প্রবাহিত হচ্ছিল। একি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! দুর্ভাগ্যক্রমে তিনিও ছিলেন নিঃসন্তান। তাঁর সুযোগ্য পোষ্যপুত্র প্রফুল্ল বর্ধন ওরফে প্রফুল্লচন্দ্র রায় চৌধুরী ব্যতীত জমিদার বংশের প্রায় সকলেই বিলাস ব্যসনের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন। সচেতন, বিবেক সম্পন্ন ও পূজনীয় প্রফুল্ল চন্দ্ররায় চৌধুরী গাঁয়ের অক্ষর জ্ঞান শূন্য মানুষের কথা ভেবেই হয়তোবা নিজ বাবার নামে (পালক পুত্র হয়েও) গ্রামের দক্ষিণে তখনকার সময়ে ১৯১৮ সালের ৫ জানুয়ারি একটি মাইনর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যা সময়ের প্রয়োজনে এটি ১৯৪৫ সালে মাধ্যমিক স্কুলে পরিনত হয় এবং সে স্কুলটি ১৯৯৭ ইংরেজী সন হতে এলাকার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে স্কুলটির পুরো নাম "কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়"। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ। বিনয়াবনত প্রফুল্লচন্দ্র রায় চৌধুরী গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির সুবিধার্থে
(পালক) মাতা সুখমণি রায় চৌধুরানী ওরফে সুখ দেবীর (যজ্ঞেশ্বর রায়ের স্ত্রী) স্মৃতিকে প্রাণবন্ত করে রাখার উদ্দেশ্যে গ্রামের উত্তর পশ্চিমে প্রায় ৪০একর অায়তন বিশিষ্ট একটি দীঘি খনন করে মায়ের নামানুসারে এটির নাম রাখেন "সুখসাগর"। প্রফুল্লচন্দ্র রায় চৌধুরীর এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের মধ্যে ছেলেটি ২০ বছর বয়েসে মারা যায়। মেয়ের বিয়ে হয় সিলেটে। জনশূন্য জমিদার বংশের উত্তরসূরীর অভাবে জমিদার বাড়ি দ্রুত বিরানভূমির রূপ লাভ করে।
#সংক্ষেপিত
🖊️লেখা ও গবেষণা: এস এম শাহনূর
টাইটেল: স্মৃতির পাতায় কাইতলা জমিদার বাড়ি
"নব সাহিত্যের পাতা" নামক সাময়িকী
উদ্যোগ: উন্মুক্ত সাহিত্য সংগঠন।
প্রকাশ: ১৯৯৮ ইংরেজি।