পোস্টস

উপন্যাস

জীবন যেখানে অন্যরকম

৫ জুলাই ২০২৪

মাসুম শরীফ

পর্ব-৬ 
আমি হোটেলে ফিরলাম, আজকে আর কাজ নেই| দুপুরে খেয়ে শুয়ে পড়লাম আর ভাবলাম কাজ না থাকা একধরণের যন্ত্রনা| কি করা যায়? অধরাকে ফোন দিবো? দেই? মনকে প্রশ্ন করছি...মন উত্তর দিলো: “করো...মানুষ ভাব প্রধান জীব, ভাবের আদান প্রদান না হলে মানুষ সুখী হতে পারে না!”
 

মোবাইল হাতে নিলাম, অধরাকে ফোন দিচ্ছি, রিং হচ্ছে..
 

অধরা:" আসালামুয়ালাইকুম স্যার, আপনি কেমন আছেন?"
আমি: "ওয়ালাইকুম আস সালাম ম্যাডাম, আমি ভালো, আপনি?"
অধরা:" ভালোই, ক্লাস করে ফিরে, খেয়ে দেয়ে শুয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর উপন্যাস পড়ছিলাম!"
আমি:"কোনটা?"
অধরা:"রুমালি"
আমি:"অসাধারণ উপন্যাস, আমার কাছে পুরুষ-নারীর সম্পর্কের যে ব্যাখ্যা উনি দিয়েছেন তা অসাধারণ মনে হয়...বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তি সম্পন্ন!"
অধরা:"আমি এখনও এতো দূর যাই নি, সবে শুরু করেছি!"
আমি:"এই উপন্যাস কারো খারাপ লেগেছে বলে শুনিনি!"
অধরা:"আজকে আপনার কাজ শেষ?"
আমি:" হাঁ, আজকে শেষ, কাজ না থাকলে ভালো লাগেনা!"
অধরা:"ভালোই হলো, এই যে, আপনি ফোন দিলেন, কাজ থাকলে তো দিতেন না, আসলে আমি আপনার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম!"
আমি:"তাই নাকি, বেশ তো! কেউ আমার জন্য অপেক্ষায় থাকবে, এইটা ভাবতেই তো খুশিতে মনটা ভরে উঠছে!"
অধরা:"মেয়েদের মন আপনারা ছেলেরা বুঝবেন না!!"
আমি:"হেসে, তুমি তো দেখি বাংলা সিনেমার নায়িকাদের ডায়লগ দিচ্ছ!"
অধরা:" আয় হায় আপনার রুচি এতো খারাপ আপনি বাংলা সিনেমা দেখেন!".
আমি:" আমি দেখি না, কয়েক বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের গার্ল ফ্রেন্ডরা এই রকম ডায়লগ দেয়!"
অধরা:"তাই বুঝি!"
আমি:"হাঁ, আমার একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে! তোমাকে বলতে পারি?"
অধরা:"কি হয়েছে, প্রেমেটেমে পরসেন নাকি?"
আমি:”আরে না, প্রেম আমার উপর পড়ে না, আমিও প্রেমের উপর পড়িনা! আমি কাজ যতক্ষণ করি, ততক্ষন ভালো লাগে, তারপর কেমন জানি বিষন্ন লাগে!"
অধরা:"হি হি, আপনার আসলে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া উচিত হয় নাই, কবি সাহিত্যিক হলে ভালো করতেন!"
আমি:"আমার তাই মনে হয়! কিন্তু যখন বোঝার দরকার ছিল, তখন বুঝি নাই!"
অধরা:"যাক যা হইসেন ভালোই হইসে, মনে করেন আপনি এখন কবি সাহিত্যিক হয়ে গেলেন, একজন ইঞ্জিনিয়ার আর একজন সাহিত্যিক কি অদ্ভুত কম্বিনেশন!"
আমি:"তোমার কখনো মন খারাপ হয়?"
অধরা:"হাঁ হয়, মন থাকলে তো খারাপ হবেই!"
আমি:"তুমি তখন কি করো?"
অধরা:"খুব বেশি খারাপ থাকলে বই পড়ি মন ভালো হয় আর অল্প খারাপ থাকলে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেই, ক্যাম্পাসে বসে!"
আমি:"ভালো টেকনিক, দেখি আমিও প্রয়োগ করে কিছু হয় নাকি!"
অধরা:"আচ্ছা, আপনার কি খেতে ভালো লাগে?"
আমি:"কাচ্চি বিরিয়ানি আর পিৎজা, তোমার?"
অধরা:"কাচ্চি বিরিয়ানি আর থাই ফুড,কাচ্চি বিরিয়ানি জিনিসটা যে কে আবিষ্কার করলো? এতো মজা কেন?"
আমি: এইটা সম্ভতঃ মুঘল সম্রাটদের শেফদের আবিষ্কার, ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া আর কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি!"
অধরা:"আপনি মনে হয় ঠিকই বলেছেন!"
আমি:"আমার মাঝে মাঝে নবাব সিরাজুদ্দৌলা এর রাজ্প্রাসাদে যেয়ে বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করে! দেখতে ইচ্ছা করে তাদের বিরিয়ানির টেস্ট কেমন ছিল!"
অধরা: “তাহলে তো আপনাকে টাইম ট্রাভেলার হতে হবে!"
আমি:"টাইম মেশিন তো এখনো আবিষ্কার হয় নাই! হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে হবে, তখন হয়তো আমরা থাকবো না !"
অধরা:"থাক আর টাইম মেশিনে চড়তে হবে না! আপনি বর্তমানে থাকেন, বর্তমানের সময়টাকে এনজয় করেন!"
আমি:"করছি তো!"
অধরা: ভেরি গুড"
আমি:"অধরা, তুমি কি রাজনীতি নিয়ে ভাব?"
অধরা: তেমন একটা না, তবে বইপত্র পড়ে যতোটুকু বুঝেছি তা হলো আমাদের দুইজন বড়মাপের নেতা ছিলেন, একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর একজন জিয়াউর রহমান, আর বাকি গুলাকে আমার কোনো নেতা মনে হয় নাই!"
আমি:"আমি তোমার সাথে পুরা পুরি একমত! দুঃখ জনক যে দুইজনই নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন!"
অধরা:"আমরা বাংলাদেশিরা আসলে বিশ্বাসঘাতক!"
আমি:"এর পিছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ছিল, ওই চক্র বাংলাদেশী বিশ্বাসঘাতকদের দিয়ে কাজটি করিয়ে নিয়েছে!"
অধরা:"থাক বাদ দেন! ফোনে এই গুলা আলোচনা করা ঠিক না!"
আমিঃ"ঠিক বলেছো, দেশটা হচ্ছে একজনের বাবার আরেক জনের স্বামীর, এসব আলোচনা না করাই ভালো"
অধরা:"আপনি ঢাকায় কবে আসবেন?"
আমি:"কেন?"
অধরা:"আমি আপনাকে দেখতে চাই, সামনে সামনি বসে কথা বলতে চাই!"
আমি:"কেন?"
অধরা:"কেন মানে কি? একজন মানুষ তো একজন মানুষের সাথে দেখা করতেই চাইতে পারে!"
(চলবে)
 

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখার প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক এবং এই লেখা কোনো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে অপমানিত করার জন্য নয়! নিজের অজান্তে যদি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি, তাহলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ||)