জুলাইয়ের প্রচন্ড বৃষ্টির রাত। ওয়াহিদ স্যারের রসায়ন এর হাবিজাবির উপর একটা ক্লাস শেষ করে বৃষ্টিতে জবথব হয়ে আমি আমার ঝিগাতলার তরুণনিবাসের তিন মিটার স্কয়ারের তিনশো তের নম্বর রুমে ফিরছি। রিকশা নেওয়া যেত,,কিন্তু নিতে ইচ্ছে করছে না,,,ঝুম বৃষ্টিতে মাথা নিচু করে খালি পায়ে একা হাটতে ইচ্ছে করছে,,কংক্রিটের শক্ত রাস্তার উপর কেমন বৃষ্টির ফোটাগুলো অনবরত পড়ছে আর মুহূর্তেই তা খন্ডিত বিখন্ডিত হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার নগ্ন পা,,,,,,,,
প্রায় বিশ মিনিট হাটার পর অবশেষে আমি এসে দাঁড়ালাম আমার হোস্টেলের সামনে। উপরে বড় বড় করে লেখা তরুণনিবাস ছাত্র হোস্টেল।
হোস্টেল সুপারের চোখকে কোনোমতে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়লাম আমার তিনশো তের নম্বর রুমে। ভেজা কাপড় ছাড়িয়ে এক কাপ গরম চা নিয়ে, কানে ইয়ার ফোন গুজে বসে পড়লাম টেবিলে,,,,পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের আট নম্বর চ্যাপ্টারের কিছু টাস্ক বাকি। বইয়ের ভেতরে মুখ গুজে বসে থাকতে থাকতে চার ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে। ঘন্টার কাটা বারো পার করেছে কিছুক্ষণ আগে। চেয়ার ঠেলে উঠে পড়লাম,,,আমার এই ছোট রুমটার একপাশে একটা ছোট স্যাঁতসেঁতে জানালা আছে,,,জানালা স্যাঁতসেঁতে হওয়ার কারণ একটা নাম না জানা ছোট লতাগুল্ম গাছ। কবে যেন এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল,,এখন পুরো জানালার গ্রিল জড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব জোরেসোরে জানান দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে দেখি একটা দুইটা নীল ফুল ফুটেছে।
আমি জানালা খুলে দিলাম, বৃষ্টির দমকা বাতাস এসে লাগল আমার গায়ে,, সাথে শব্দের তীব্রতাও তিনগুণ বেড়ে গেল। পাশের গলি থেকে এখনো দুইটা তিনটা গাড়ি চলার শব্দ ভেসে আসছে। মাঝে মাঝে ভারী ট্রাক রাস্তাসহ আমার রুম শুদ্ধ কাঁপিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
আকাশের দিকে তাকালাম,,,,কালো মেঘে ভারী হয়ে আছে। না,,,, বাইরের বৃষ্টি থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। চেয়ার টেনে বসে পড়লাম জানালার পাশে। কানে হেডফোন গুজে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এর তারানাথ তান্ত্রিকের কালভৈরব শুনছি। একা, ছোট এই রুমে বৃষ্টির রাতে গা কেমন ছমছম করছে,,,,ঘুমানো প্রয়োজন,,কাল সকালে যদিও ক্লাস নেই,,ভোরে উঠার তাড়া নেই,,,,ঘুমাব নাকি জেগে জেগে এই বৃষ্টি রহস্যময় সৌন্দর্য উপভোগ করব তা ভাবতে ভাবতেই বিছানার দিকে চোখ গেল,,,,,,,শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেল মাত্রই। আমার বিছানায় একটা দ্বিতীয় আমি শুয়ে আছে...............
TO BE CONTINUED.......