শিরোনাম টি খুব পরিচিত । অনেক কিছুর অস্তিত্ব সংকটের গল্প আমরা শুনেছি , আজ না হয় আত্ম অস্তিত্ব সংকটের গল্পটা শুনি।
"সংকট" শব্দটা কোনো কিছুর বিপদ বা জটিলতা বোঝায় । কিন্তু "অস্তিত্ব সংকট" কথা টি জটিলতা না বুঝিয়ে বরং ক্রমাগত বিলীন হয়ে যাওয়া বোঝায়। আর "আত্ম অস্তিত্ব সংকট " কথাটি কোনো কিছু বোঝানোর আগে মন গগনে কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বজ্রপাতের আশঙ্কায় আতঙ্কিত করে তোলে হৃদ-মাজার।
আতঙ্কিত হৃদযন্ত্র প্রশ্ন করে কেন এ বজ্রপাতের আশঙ্কা? কেন ই বা মন গগনে কালো মেঘের বিচরণ? তাহলে অস্তিত্ব সংকট মানে কি মৃত্যু?
না, অস্তিত্ব সংকট মানে মৃত্যু নয়।
আমার চারপাশে অনেক মানুষ । এত বন্ধু-বান্ধব ,এত আত্মীয়-স্বজন,পরিবার-পরিজন তবুও কেন যেন নিজেকে একা মনে হয় ? এমন প্রশ্ন কখনো মন কুঠুরিতে ঠাই পেয়েছে ? সবাই থাকা সত্ত্বেও মনে হয় কেউ ই নেই । পার্থিব পূর্ণতা-অপূর্ণতা কে ছাপিয়ে যায় আত্মিক পরিপূর্ণতার প্রশ্ন । সারাদিনের হাসি মুখটা ফিকে হয়ে যায় সন্ধ্যার মলিন আলোয় । রাতের আঁধার সাথে নিয়ে আসে এক বুক হতাশা আর শূন্যতার গল্প । যে গল্পে বিমোহিত হয়ে ভুলে যাই সব বুক ফাটা হাসির গল্প । সে গল্প সব ভয়কে ভয় পেতে বাধ্য করে । স্বয়ং আতঙ্কও আতঙ্কিত হয় সে গল্প শুনে ।
তাহলে প্রশ্ন জাগে কোন সে গল্প?
এ জগত সংসারের কোন বস্তু ও ব্যক্তি আমার ,যা নিতান্তই আমার ?
যা আমার একান্ত আপন , যা আমার আত্মার আপন । "যা আমার আত্মার আপন নয়, তা প্রকৃতপক্ষে আমার নয়"। আত্মার আপন ব্যতীত যা আমার আপন বলে আমরা মনে করি তা মূলত মরীচিকা । এই মরীচিকার মোহে পড়ে আমরা ছুটে চলেছি অনন্তকালের মহারথে । এ রথ থেকে নেমে আত্মার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে জগত সংসারে । আত্মার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চললে তবেই আত্মাকে চেনা যাবে । নজরুলের মতে," আত্মাকে চিনলে ই আত্ম নির্ভরতা আসে"। আমাদের আত্ম নির্ভরতা নেই বলে ই আজ আমরা কে আত্মার আপন আর কে মরীচিকা তার ভেদ না করে সব কিছুকে আমার ভেবে আত্ম তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি । এত স্বজন , এত সম্পদের মাঝে কোনটি আমার আত্মার ? আমার অনেক কিছু থাকলেও আমার আত্মার কিছু না থাকার দরুন নিজের কাঙাল মন বড় ই অসহায় হয়ে পড়েছে । তাই কাঙাল মন অনুভব করে জগত সংসারে সে বোধহয় বড় ই মিসকিন । আত্মার সম্পদ চেনা তাই অতীব জরুরী । আত্মার খোরাক চেনা জরুরী । পঞ্চেন্দ্রিয়ের যেমন খোরাক আছে , তেমনি আত্মার ও খোরাক আছে । পঞ্চেন্দ্রিয়ের যত্ন না নিলে যেমন শরীর অসুস্থ হয় , তেমনি আত্মার যত্ন না নিলে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে যায় । শরীর অসুস্থ হলে মানুষ সহানুভূতি দেখালেও আত্মার অসুস্থতায় তিরস্কার ও অবহেলার তীর নিক্ষেপ করে । সে তীর হরহামেশা কোনো তীর নয় সে তীর প্রতিনিয়ত আপনার "অস্তিত্ব" বৃক্ষে কুঠারাঘাত করতে ই থাকবে ।
আপনার "অস্তিত্ব" বৃক্ষ বাঁচাতে চাইলে,
আপনার "আত্মার প্রশান্তি" দেয় এমন বিষয় গুলো স্থির করুন।
নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করুন ।
যা আপনার খুশি গুলোকে বাধাগ্রস্থ করে তা ত্যাগ করুন ।
কারো কাছে করুণার পাত্র হবেন না ।
যে আপনাকে মূল্যায়ন করে না তার সঙ্গ ত্যাগ করুন।
এমন কিছু মানুষের সাথে চলা - ফেরা করুন , যারা কাছে কোনো স্বার্থ ছাড়া আপনার সাথে চলা - ফেরা করে ।
কাউকে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে তেলবাজ বা স্বার্থান্বেষী মনে হলে দ্রুত তার সঙ্গ ত্যাগ করুন।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন।
চেষ্টা করুন অল্প মানুষের সাথে চলা - ফেরা করতে ।
নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে চাইলে একথা গুলো মেনে চলার চেষ্টা করতে পারেন ।