পোস্টস

কবিতা

মৃত্যু

৬ জুলাই ২০২৪

ইউসুফ আহমেদ শুভ্র

চিঠির শুরুতেই লেখা "প্রিয় মানুষ, ভালো থেকো"!

ধাক্কা খেলাম আমি!
কী অদ্ভুত একটা চিঠি,
শেষের কথা চলে আসছে একদম শুরুতে
তারপর আমি পড়তে শুরু করলাম!

"তোমাকে ভালো রাখার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো আমার।ইচ্ছে ছিলো তোমাকে ঘিরে সুন্দর একটা জগত সাজাই আমি।আমাদের ছোট্ট একটা ঘর হবে,সাথে একটা বারান্দা।বারান্দায় অনেক গাছ থাকবে, বসার দুইটা চেয়ার থাকবে আর ছোট্ট একটা টেবিল।"

আমি বারান্দার দিকে তাকালাম।
একটু এলোমেলো! 
অনেকগুলো গাছ, বেশিরভাগই পাতাবাহার 
দুইটা চেয়ার,একটা টেবিল আর সিগারেটের ছাই!

" আমি সাজিয়েও ছিলাম সেভাবে। সারাদিন পরিশ্রম করতাম খুব আর কষ্ট হলেই তোমার কথা ভাবতাম।তোমার হাসিমুখ, তোমার সুখী চেহারা!আহ, কী যে শান্তি লাগতো আমার!আমি আরো বেশি পরিশ্রম করতাম তখন!"

মেয়েটা আমার সামনের চেয়ারে বসে আছে
বেশ সুশ্রী
কথা বলছে নিচু গলায়
অর্ধ পরিচিতদের সাথে কথা বলতে গিয়ে একটু হাসছে
হাসলে মেয়েটার গালে টোল পরে
এই টোলের দিকে আড়চোখে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকা যায়!

"চাকরি পরিবর্তন করলাম, কিছুদিন যেতে না যেতেই এখানে ভালো একটা অবস্থান তৈরি হলো।সারা দিনের অফিস শেষে আমাদের টোনাটুনির সংসার। তুমি চা বানাতে বানাতে আমি নুডুলস করে ফেলতাম কিংবা বাইরের থেকে নিয়ে আসা তোমার প্রিয় ফুচকা! জানো প্রিয়, আমার নিজের সুখ দেখে নিজেরই হিংসে হতো মাঝেমধ্যে।"

ছেলেটার বাবা আসছে
বয়সের ভারে খানিকটা বেঁকে গেছেন
তবে কথা বলছেন বেশ স্পষ্ট আর গুছিয়ে
আমি বাবাকে দেখে ছেলেটাকে অনুভব করতে পারছি!

"তারপর আমার সেই দিনটা এলো।আমাদের এনিভার্সারির দিন।ভাবলাম মধ্যদুপুরে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো!তারপর নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম। তোমার ব্যাখ্যা আমি শুনেছি, মেনেও নিয়েছি কিন্তু ভেতরে খুব অশান্তি হচ্ছিলো।আমি তোমাকে বলতেও পারছিলাম না, বন্ধুদেরকেও বলতে পারছিলাম না।নিজেকে ভীষণ ছোটো মনে হচ্ছিলো।সারা জীবন যার প্রশংসা করলাম হুট করে তার বিরুদ্ধে বন্ধুদের সাথে বলতে খুব বাধছিলো।পারছিলাম না একদমই।নিজের একটা স্পেস দরকার ছিলো,সেটাও ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। একটা সময় ভেতরটা মরে গেলো, একদম শেষ হয়ে গেলো সবকিছু।"

এইটা পড়তে পড়তে আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো
খুব মায়া হচ্ছিলো ছেলেটার জন্য
প্রত্যেকটা মনই তো ভীষণ সংবেদনশীল 
যত্ন নিতে হয় সময় নিয়ে,সময় দিয়ে
নয়তো ঠিকই ফাকি দেয়
মরে যায়!

"তারপর এলো আজকের রাত। ঝড়ের রাত। কী প্রবল বৃষ্টি। তুমি তো জানো যে বৃষ্টি আমার কতো পছন্দ।বৃষ্টির দিনে আমি বারান্দায় বসে থাকতাম। ভিজতে আমার ভীষণ ভালো লাগতো। তাই ভাবলাম,এমন দিনে মরে গেলে বেশ হবে। আমার ভাবনার সাথে সাথে মরে যাওয়া ভেতরটা যেনো জেগে উঠলো। খুশিতে ঝলমল করে উঠলো ভেতরটা। আমি মুচকি হাসলাম। বহুদিন আগে নিয়ে আসা বিষের বোতলে কিছুটা বৃষ্টির পানি মেশালাম। কী সুন্দর ঘ্রান ছড়াচ্ছে, ঠিক যেনো মেশকে আম্বর। আচ্ছা প্রিয়তা, বিষের কী ঘ্রান হয় কখনো না কী এটা মৃত্যুর গন্ধ?"

চিঠিটা এখানেই শেষ
এই মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করতে ইচ্ছে করছে না
আমি উঠে দাড়ালাম
বারান্দা থেকে নিচে দেখা যাচ্ছে
রাস্তায় রাখা লাশটা ভিজে যাচ্ছে অথচ কেউ দেখছে না!