কোটা সংস্কারের জন্য ২০২৪ সালে এসেও যদি আবার ছাত্রসমাজকে রাজপথে নামতে হয় তবে সেটা সত্যিই দুঃখজনক। কোটা সংস্কার নিয়ে ২০১৮ সালে ছাত্রসমাজ একটা সংস্কারের পথ দ্যাখিয়েছিলেন রাষ্ট্রকে। সেটা বলবৎ ছিলো ক'দিন আগ পর্যন্তও। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগনের জনমতের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া একটা সিদ্ধান্তকে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কীভাবে বাতিল করে দেয় সেটা ভাবার বিষয়।
কোটা নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রপক্ষ যেরকম একটা কাঠামো তৈরি করে রেখেছে সেটা মেধাকে অবমূল্যায়ন ও রাষ্ট্রপক্ষের লোকদের সুবিধা দিয়েই যাচ্ছে। এই কাঠামোর একটা আমূল পরিবর্তন দরকার। সেটা ২০১৮ সালেই রাজপথে জনমতের ভিত্তিতে ফয়সালা হয়ে গেছে।
আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা আবার সে ফয়সালাকে বাতিল করে দিয়ে তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। এটা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো হতে পারে না। এধরনের সিদ্ধান্ত বলে দেয় রাষ্ট্রের হালত।
শুধুমাত্র একটা গোষ্টি লাভবান হবে। রাষ্ট্রের বাকী জনগন ভুখা মরবে, এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কী হতে পারে!
গোটা রাষ্ট্রের জনগন মিলে ট্যাক্স দিবে, সেই ট্যাক্স এ রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের ব্যবস্থা হবে এবং সেই কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ারে তথাকথিত একটা বিশেষ গোষ্টি বসে সেই ট্যাক্স এর টাকা ভোগ করতে থাকবে কেবল তারা কথিত বিশেষ বলে।
রাষ্ট্রের মনোভাব নাগরিকদের প্রতি সুষম হওয়া উচিত। মেধা বিবেচনা করে মেধাবীকে উপযুক্ত জায়গায় বসানো। যে পিছিয়ে থাকবে সে প্রাইম মিনিস্টারের সন্তান হলেও সে পিছিয়েই থাকবে। সে যদি প্রাইম মিনিস্টারের সন্তান হওয়াতে সব ছাড় পেয়ে যায় তবে মেধার প্রতি অসম্মান আর অবিচার হবে।
এমনটা হলে নাগরিকদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে বাজে মনোভাব তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে যাবে। শিক্ষায় পিছিয়ে যাবে রাষ্ট্র। একটা মূর্খ ও শিক্ষা-প্রতিবন্ধী জাতি তৈরি হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন একটা জাতি তৈরির পথে আমাদের রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের মেধাবী শিক্ষার্থীরা একটু নিশ্চিত ভবিষৎ আর মূল্যায়নের জন্য মাতৃভূমি ছেড়ে দূর বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এটা রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগনকে ভোগাবে।
কথিত বিশেষ গোষ্টির এই দখলদারিত্বের কারণে একটা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করতে হচ্ছে তার প্রফেশনের বাইরে গিয়ে অন্য প্রফেশনে। তার মানে আমাদের দেশে কি ইঞ্জিনিয়ারিং সাইটে কাজ নেই! অবশ্যই আছে। কিন্তু সেগুলো কথিত বিশেষ কোটায় দখল করে বসে আছে এসএসসি-এইচএসসি পাশ লোকজন।
ব্যাপারটা হলো কথিত বিশেষ গোষ্টি রাষ্ট্রের বিশেষ কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য গোটা রাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের ট্যাক্স দিয়ে চলবে। চাঁদাবাজি করছে বিশেষ গোষ্টি। ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এমন গোষ্টি নিশ্চয়ই রাষ্ট্রের জন্য গৌরবময় কিছু নয়।
রাষ্ট্রের বিশেষ কাজের উদ্দেশ্য কী ছিলো?
একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র কায়েম করা?
বৈষম্যের রাষ্ট্র কায়েম করা?
রাষ্ট্রের সংবিধান তো বলে সবাই রাষ্ট্রের কাছে সমান।
সমান হলো কই!
আবার, আমাদের রাষ্ট্রের কাঠামো এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে কোটা সংস্কার করেও তো একটা মেধাবী তার প্রাপ্য মূল্য পাচ্ছে না। তাকে চাকুরির জন্য আগে-পরে ঘুষ দিতেই হচ্ছে!
ফায়দা হলো কোথায়?
দাবী এমন হউক যে, কোটার সাথে সাথে রাষ্ট্রের কাঠামো সংস্কার করতে হবে। এটা সময়ের দাবী। এই দাবি জনগনের। এই দাবি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের।