পোস্টস

গল্প

এই ফুল ঝামেলা

৬ জুলাই ২০২৪

উম্মে ফারহানা


মেজো খালার বাসার ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসে টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটা বিদেশি নিউজ চ্যানেল খুঁজছিলাম। আম্মা ভেতরের ঘর থেকে এসে বললেন, “বড়মামার বাসায় যাও, আর টিভি অফ করো”। আমার বড় মামা গতকাল রাতে মারা গেছেন, আজকে বাদ জোহর উনার নামাজে জানাজা হয়েছে। বাদ আসর মসজিদে আরেক দফা স্পেশাল দুয়া করা হয়েছে, আর মাগরিবের পর হয়েছে মিলাদ মাহফিল। মামা মসজিদ কমিটির কোন একটা বড় পদে ছিলেন। পাড়ার পুরাতন মসজিদে টাইলস এসি ইত্যাদি লাগিয়ে উন্নয়ন করার পিছনে উনার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। টিভি অফের ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম, পাশের বাড়িতে কেউ মারা গেলেও মানুষ কিছুটা শোক পালন করে, আর এটা তো একই বাড়ি। অন্তত বহুদিন তাই ছিল। বছরখানেক আগে বাড়ির মাঝামাঝি একটা দেয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে । তাই নানার আমলের বাড়ির ডিজাইনে বড় ধরনের পরিবর্তন চলে এসেছে। মাঝখানের দশ ইঞ্চি দেয়াল তোলার আগেই মৌখিক ভাবে বাড়ি ভাগাভাগি হয়েছিল। কিছুটা অংশে আমার মেজোখালা পারুল তাঁর মেয়েদের নিয়ে থাকতেন আর বাকি প্রায় পুরোটাতে বড় মামা আর তাঁর পরিবার। কিছুদিন আগে পারুল খালার মেয়েরা আর মেয়ের জামাইরা রেজিস্ট্রি করার জন্য জমি মাপামাপি করতে গেলে দেখা গেলো বড় মামার ভাগে যেটুকু অংশ পড়েছে তার চেয়ে অনেকটা বেশি তিনি ভোগদখল করছেন। দেনদরবারের পর ব্যাপারটা প্রমাণ হলে মামা রাগ করে মাঝামাঝি মোটা দেয়াল তুলে দেন, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আর বোনদের মুখদর্শন করেননি। এমন অবস্থায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে মৃত্যুশোক ভাগাভাগি করে নেওয়া বা সান্ত্বনা দেওয়ার প্রক্রিয়াটি কেমন হতে পারে তা আমার বোধগম্য হচ্ছিলনা।
 

আমি পারুল খালার বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখি আম্মাও আসছেন।আমরা পাশের গেইট দিয়ে বড় মামার বাড়ির চৌহদ্দিতে ঢুকলাম। ছোট লোহার গেইট ভেঙে পাশে রাখা হয়েছে,সামনের বাউন্ডারির কিছু অংশ ভেঙে ফেলতে হয়েছে আজ সকালে, নয়তো লাশ নেওয়ার খাটিয়াটা ঢোকানো যাচ্ছিলো না। আমি মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে আম্মাকে ধরে ধরে নিয়ে যাই। এদিক সেদিক ইট পড়ে আছে। আম্মা একটু হতবিহবল হয়ে তাকান আমার দিকে। তাঁকে কিছুটা অপ্রকৃতস্থমনে হয়।
“বড় আপা কই?” আমি আম্মার হাত ধরে উঠান পেরিয়ে বারান্দার দিকে এগোতে এগোতে বলি, “খালা মামীর ওইখানেই আছে”। আমার খালা মামাদের নাম সব ফুলের নামে। আমার নানানানীর ফুল প্রীতি ছিল, আর নজরুলসংগীতপ্রীতিও। আম্মার বড় বোনদের নাম চম্পা আর পারুল,আম্মার নাম যুথি, বড় মামার নাম ছিল গোলাপ, ছোট মামার ছিল টগর। ছোট মামা অনেক আগেই মারা গেছেন। সেই মামীর আবার বিয়ে হয়েছিল। আমরা তাঁকে আর কখনো দেখিনি। টানা বারান্দাওয়ালা বাড়ির সামনের অংশে ড্রাগন লিলি, বটল ব্রাশ, বোগেনভিলার ঝাড়সহ অনেক ধরনের ফুলের গাছ ছিল, কিছু এখনো আছে। পেছনের উঠানে রক্তজবা আর মধুমালতী, দক্ষিণের দেয়াল ঘেঁষে স্বর্ণচাপাও আছে। বাড়ির মাঝখানের দেয়াল তুলে দেওয়ার সময় আগের বড় গেইট ভেঙে ফেলাতে বোগেনভিলার ঝাড় কাটা পড়ে যায়। মূল গাছটা এখনো আছে, কিন্তু আগের মতন বিশাল ঝাড় আর নেই।
 

ঘরে ঢুকে দেখলাম আমার বড়খালা চম্পা বড়মামীর ঘরের জানলার পাশের একটা আর্মচেয়ারে বসে তসবি জপছেন। বিশাল পালংকে বড়মামীবালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। বড়মামার বাসার অধিকাংশ আসবাবপত্র নানার আমলের, ভিন্টেজ
লুক পুরো বাড়িতে। বসার ঘরে একটা শিং ওয়ালা হরিণের মাথাও আছে। বছর খানেক আগে, দেয়াল তোলার সময় বাড়ির ভেতরের অংশেও দেয়াল উঠেছে, নানার বানানো বিরাট ডাইনিং রুমের অর্ধেকটাতে এখন বড় মামীরখাওয়ার ঘর। বড় সেগুন কাঠের টেবিলের চারপাশে সলিড কাঠের আটটা চেয়ার থাকতো আগে, এখন সেই এরেঞ্জমেন্ট পালটানো হয়েছে। ভাগাভাগির পর আমি আর এদিকটাতে আসিনি। বড় মামা অসুস্থ হবার পর আব্বা একদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি মামাকে দেখতে গেছি কিনা। যাইনি শুনে বললেন, “হেগর ভাইবইনের কাইজ্যা মিট্যা যাইবো, আমে দুধে মিশ্যা যাইবো, তরা মাঝখান দিয়া আঁটি হবি ক্যা?” আব্বা রোগী দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস সবসময়।

 

আমি আসলে নানাবাড়িতেই আসা কমিয়ে দিয়েছিলাম। আগের সেই আলিশান বাড়ির মাঝখানের দেয়াল আর বাগানের তছনছ অবস্থাটা দেখতে আমার ভালো লাগেনা। বাড়ি ভাগাভাগির পুরো ব্যাপারটায় আমি বিরক্ত না হলেও ব্যথিত। বড়মামীর বাসায় না
আসার আরেকটা কারণ হলো, মামা অসুস্থ হওয়ার আগে একবার এসে বেশ অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছিলাম। আমার মামাতো বোন টুশিকে কোথাও দেখতে পাচ্ছিলাম না। মামীকে জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন, “টুশির পরীক্ষা শেষ তো, তার মামার বাড়ি গেছে”। আমি সামনের বাটি হাতে নিয়ে চানাচুর মেশানো চিড় ভাজা খাওয়া শুরু করছি তখন,সামনের ভাগ হওয়া টানা বারান্দায় রাখা পুরনো আমলের বেতের সোফাটাইপ চেয়ারে বসে। মামী আমার সামনের চেয়ারে বসে নানীর পুরনো আমলের ভারী পানের
বাটাটা টিটেবিলের উপর রাখলেন। একটা পানে চুন ঘষতে ঘষতে বললেন, “আমার বাপের বাড়িতে তো আমার বাচ্চাদের খুব আদর”। হঠাৎ এই কথা বলার কারণ চিন্তা করতে করতে চিড়া চানাচুর চিবাচ্ছিলাম।মামার বাড়িতে তো বাচ্চাদের আদর থাকবেই। কথায়ই বলে, “মামার বাড়ির আবদার”। মামী নিজেই তাঁর বক্তব্যের কারণ ব্যখ্যা করলেন, “আমরা বোইনেরা তো বাপের বাড়ির ওয়ারিশ নেইনাই, তাই বেড়াইতে গেলে আদর থাকে”। তখন আমার মুখের ভেতরে চিড়া আর চানাচুর বিস্বাদ লাগতে থাকলো। কোনমতে খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে ফিরে এলাম। এই ঘটনাটা আমি কাউকেই বলিনি। যাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ সেই পরিয়ারের সিবলিং রাইভালরি বাড়িয়ে দেওয়ার মতন মন্তব্য রিলে করাটা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে।
কথাটাকে অপমান হিসাবে নেওয়া উচিৎ কিনা তা ভাবতে ভাবতেই সেদিন ফিরে এসেছিলাম। আমার বড় খালা চম্পা, মেজোখালা পারুল আর আমার আম্মা যুথি, তিনজনেই বাপের বাড়ির ভাগ নিয়েছেন। এমনিতেও টগর মামার ভাগের সম্পদ মামীকে
কিছুই দেননি যেহেতু মামীর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়েছে আর তাঁদের সন্তান ছিলো না। তাই অনেকখানিই বেঁচে গেছে। তারপরেও এত আফসোস?
 

ভাঙা বাউন্ডারি দেখে আমার মনে পড়ে মামীর সেই ঠেস দেওয়া কথাটা। মামার হয়তো মনে হয়েছিলো তাঁর বোনেরা বাড়ির ভাগটাগ চাইবে না। ছোটভাই মৃত, তাঁর বিধবা আবার বিয়ে করেছেন, কাজেই পৈতৃক বাড়ির পুরোটাই তাঁর দখলে থাকবে। রেগেমেগে দেয়াল তোলার সময় পুরনো আমলে বড় গেইট ছোট হয়ে গেলো। এই গেইট দিয়ে বের হয়ে কোনদিন কবরখানায় যেতে হবে সেটা বোধহয় তাঁর মনে পড়েনি। আমি বড়খালার পাশে গিয়ে বসলাম। খালা বেশ মুষড়ে পড়েছেন বলে মনে হলো। কোনদিন ভবিষ্যতে ভাইবোনের তিক্ততা মিটে যাবে এমন আশা হয়তো তাঁর ছিলো। মিটমাট হবার কোন সম্ভাবনা তৈরি হবার আগেই মামার পরলোকগমণ একটা পারিবারিক বিরোধকে চিরস্থায়ী করে দিলো এখন। আজকেও পুরোটা সময় মামীকে ঘিরে ছিলেন তাঁর বাপের বাড়ির লোকজন। আমার মায়েরা তিনবোন অপাংক্তেয়, অনাহূতের মতন আশপাশে উপস্থিত থাকছিলেন। আমাকে দেখে বড়খালা বললেন, “তোর মা কিছু খাইছে?”
আম্মা বড়মামার আদরের বোন ছিলেন বলে শুনেছি। আমাদের বোধবুদ্ধি হতে হতে আলাদা করে বিশেষ আদরের কোন লক্ষণ দেখিনি। এর কারণও সম্ভবত সম্পত্তির ভাগাভাগি। মেজোখালু, মানে পারুল খালার স্বামী অকালে মারা যাবার পর খালা তাঁর দুই
মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি এসে উঠেছিলেন। তখন আব্বাই নাকি প্রস্তাব দেন তাঁদের তিন বোনের ভাগের জমিজিরাত পারুল খালার নামে লিখে দিতে। বড় খালা আর আম্মা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে হয়তো
কখনোই আমার মাখালারা বাপের বাড়ির সম্পদে আগ্রহ দেখাতেন না। আব্বার সঙ্গেও মামাবাড়ির সম্পর্ক ফিকে হয়ে গেলো এর পর থেকে। এমন না যে গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রির টাকায় মেজোখালা বিরাট বড়লোক হয়ে গেছেন। বরং কোনমতে জীবন চালানোর মতন কিছু সঞ্চয় হয়েছিল, প্রতিবার মেয়েদের পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করার সময় ভাইবোনদের কাছে হাত পাততে হয়নি।
 

আম্মা বা পারুল খালা কিছু খেয়েছেন কিনা তা আমি লক্ষ্য করিনি। মড়া বাড়িতে চুলা জ্বালানো হয় না বলে এবাড়িতে আজ কিছু রান্না হবেনা। আশপাশের অনেক বাড়ি থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে করে, এমনকি হাড়ি ভরে ভরেও অনেক ভাত ডাল তরকারি এসেছে। কিন্তু পারুল খালার বাড়ি তো এখন আলাদা, সে বাড়িতে নিশ্চয়ই কেউ খাবার পাঠায়নি। খালা নিজে চুলা ধরানোর মতন অবস্থায় আছেন কিনা তাও আমি সঠিক জানি না। ভাই মারা গেলে একজন বোনের নিশ্চয়ই রান্না করার মানসিকতা থাকে না। আমি এতক্ষণ ধরে খালার বাসার সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। কিন্তু কে কতটা শোকগ্রস্ত সেটা লক্ষ্য করিনি। পারুল খালা এখন কোথায় সেটাও জানি না। কোন দুয়া দরুদ পড়ছেন হয়তো। কিংবা বড় ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধের কারণ হিসেবে নিজের স্বামীহারা হওয়া ভাগ্যকে দোষারোপ করছেন কি? কেউ মারা যাবার পর, আমি দেখেছি, দাফন শেষ হয়ে গেলেই মৃতের বাড়িতে একটা উৎসবের আমেজ চলে আসে। অনেক দূরের আত্মীয়, যাদের চেহারা সারা বছর দেখা যায় না, তাঁরা দল বেঁধে এসে উপস্থিত হন। কার মেয়ের ভালো বিয়ে হয়েছে, জামাই ক্যানাডা থাকে, কার ছেলে এফসিপিএস করেছে, কার নাতনি কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হলো, কার নাতি নেশা করতে করতে উচ্ছন্নে চলে গেলো এসকল তথ্যের আদান প্রদান হতে থাকে। বাথরুমে যাবার সময় দেখলাম পেছনের বারান্দার সিঁড়িতে বসে একটা অপরিচিত মেয়ে খুব রসিয়ে রসিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। বয়ফ্রেন্ড ব্যাপারটা অনুমান করে নিলাম, চাপা হাসি, “উমমম”, “ননননা”, “উঁহু” জাতীয় শব্দ উচ্চারণের সময় অতিরিক্ত আহ্লাদী ভঙ্গি বলে দিচ্ছিল আলাপটা কোন জরুরি বিষয়ে হচ্ছে না। কয়েকটি বাচ্চা এদিক ওদিক টিলো এসপ্রেস খেলছে। তাদের হৈ চৈ বেড়ে গেলে বড়রা কেউ একটু ধমক দিচ্ছে, তাতে কিছুক্ষণ আওয়াজ কমলেও খেলা বন্ধ হচ্ছে না।
 

বড়মামার বাসার বাথরুমটা বেশ আধুনিক। বাড়ি ভাগাভাগির আগে উঠানের পেছন দিকে আলাদা বাথরুম ছিলো, সেখানে গোসলখানায় বিরাট চৌবাচ্চায় সাপ্লাইয়ের পানি জমিয়ে রাখা হতো, হাগুহিসু করার জায়গাটা আলাদা, সেখানেও চৌবাচ্চায় পানি তোলার মগ আর বদনা রাখা থাকতো।সেই অংশটা খালার অংশে পড়েছে।এখানে এখন লাগোয়া বাথরুম। তাতে টাইলস আর ইংলিশ কমোড, শাওয়ার বেসিন সব আছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম কোন একটা ব্যাপারে খুব চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে।
বড়মামীকে তাঁর কোন এক ভাবী জড়িয়ে ধরে রেখেছেন আর মামী হাউমাউ করে কাঁদছেন। সদ্যবিধবা একজন মানুষ স্বামী হারানোর শোকে একটু পর পর কাঁদবেন এটাই স্বাভাবিক। সেজন্য অন্যান্যরা এতো উত্তেজিত কেন? বাইরের ঘরে এসে দেখলাম
মেজোখালা আর তাঁর মেয়ের জামাই শরিফুল ভাই অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বড়খালা আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, “পারুল আর শরিফুলরে নিয়া তুই যা গা, আমি আইতাছি”। আমি একটু কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। আশপাশ থেকে আসা বিভিন্নজনের বিভিন্ন মন্তব্য শুনে যা বুঝলাম তা হলো শরিফুল ভাইদের বাড়ি থেকে আসা খাবার দাবার গ্রহণ করতে মামী রাজি হননি। মামা অসুস্থ হবার কিছুদিন আগে শরিফুলভাইয়ের উদ্যোগে জমি মাপামাপির কাজটা হয়েছিলো। তখন নাকি মামার সঙ্গে শরিফুলভাইয়ের কোন একটা বাকবিতন্ডা হয়। ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। বিস্তারিত জানিনা। মানুষের মুখে মুখে কালো বাচ্চা যেভাবে কাক হয়ে যায়, পারিবারিক বিরোধের সময়ও বিভিন্নজনের বয়ানে ঝগড়া বিবাদের কাহিনী কৌরব পান্ডব যুদ্ধের মতন ভয়াবহ ব্যাপার হিসেবে বর্ণিত হয়।


আমি মেজোখালার কানেকানে বললাম, “খালা, চলেন যাইগা”। খালা ঘুম থেকে জেগে ওঠার মতন চমকে গেলেন, বললেন, “হ,হেইডাই বালা। ল যাইগা”। ভাঙা গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময় খালা শ্বাস ফেলে বললেন, “ভাগ্যিস বিয়াই বাড়ির আর কেউ নাই”। শরিফুল ভাই নিরাসক্ত কণ্ঠে বললেন, “আম্মা, বাদ দেইন। আমি কিছু মনে করছিনা” । কয়েকজন রাজমিস্ত্রি কাজ থামিয়ে বাড়ির ভেতর কী নিয়ে চেঁচামেচি হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছিলো। শরিফুল ভাইকে দেখে তাঁরা কাজে ফেরত যাবার উপক্রম করল। তাঁরা হয়তো ধরে নিয়েছেন শরিফুল ভাই এইবাড়িরই ছেলে। মামীর দুই ভাতিঝা আর এক ভাগ্নের সঙ্গে শরিফুল ভাইও মামাকে গোরস্থানে নেওয়ার সময় কাঁধ দিয়েছেন।আমার মামাতো ভাইয়েরা দুইজনেই দেশের বাইরে থাকে, বাবাকে শেষবার দেখতে আসতে পারেনি কেউই। শরিফুলভাইয়ের সঙ্গে আসা কাজের ছেলেটি সম্ভবত অপমানটুকু হজম করতে পারছে না। সে খুব ক্ষোভের সঙ্গে বললো, “বাই, আইন্নের মামীহোউড়ি এইরম ছুডুলুক ক্যা?” শরিফুল ভাই তাঁকে ধমক দিলেন, “ময়মুরব্বিরে লইয়া এমনে কতা কইতে হয়না। বেডির সোয়ামী মরছে, হের কতা ধরুন লাগে না”।ছেলেটি এই ব্যখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারলো না। মেজোখালাকে সাক্ষী মানলো, “মাঐ আমনেই কইন, বাইরে ডাকছে ফহিন্নির পুত, এইডা কুনো কতা? বাই যে হের মামু হোউড়রে কব্বরে নামাইলো?”
 

কবরের কথায় আমার মনে পড়ে গেলো, কোথায় যেন পড়েছিলাম, সম্ভবত টলস্টয়ের কোন গল্পে, “একজন মানুষের কতখানি জমি দরকার? সাড়ে তিনহাত মাত্র” ।