পোস্টস

চিন্তা

চব্বিশের কোটাবিরোধী আন্দোলন , বিক্ষিপ্ত কিছু হতাশা।

৭ জুলাই ২০২৪

salman saad

মূল লেখক সালমান সাদ

এই দেশে যে আই হেট পলিটিক্স জেনারেশনটা হইসিলো - এরা মোটামুটি সবারই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সময় হয়ে গেসে। এখন একটা বিশাল দাম চুকাতে হবে সবাইকে। 
এরা কিন্তু এখন আর আই হেট পলিটিক্স বলে না। বলে ধুর বিদেশ চলে যাবো , দেশে থাকলেই না। দেশে যা ইচ্ছা হোক গা। কী পলায়নপরতা, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বার্থপরতা, দায়িত্বহীন মানসিকতা! 
যেন অন্যন্য দেশের সরকার মুখিয়ে আছে আমাদের এই - মুখে মুখে বিদেশ যাবো গা - বিশাল জেনারেশন রে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কেউ কেউ উড়ে যাবে, যেতে পারবে, আর ফিরবে না। কিন্তু বাকিরা যাদের ভবিষ্যৎ এই মাটির সাথেই জড়িত?

আসলে বিদেশে গেলে বুঝা যায় মানুষ একটা গাছের মত। যেখানে মানুষ গজাইসে, শিকড় ছড়াইসে, আজীবন দৌড়াইলেও ওই জায়গা ছেড়ে যাওয়া যায় না। বিমানে চড়ে আপনি যেখানেই যান, ফিরতে হবে ওই আপনার গ্রামে বা শহরেই। যেখানে আপনার দাদার কবর। বিদেশ কেন, অন্য শহর, এমনকি অন্য এলাকাতেও গেলে রাতে থাকার জন্য হোটেল খুজতে হয়।

যেখানেই ঘুরতে যান, খরচ করতে হবে আপনার নিজ দেশে আর্ন করা টাকাটাই।

কী বিশাল একটা ফাঁকি দেখেন।
পৃথিবীর একমাত্র আসল মুদ্রা এখন ডলার। তিন বছর আগেও যেই ডলার ছিল ৮৪ টাকা সেটা আজ ১১৮ টাকা। সেই হিসেবে তিন বছর আগেও ১০০ টাকাতে ৮৬ রুপি পাওয়া যাইতো। এখন দেয় ৬৮ রুপি।

আপনি কষ্ট করে যত টাকাই কামান, ১০ লাখ টাকা কামায়ে রাখলেন ব্যাংকে - হাজার মতিউর মিলে দেশের টাকা ডলারের মাধ্যমে পাচার করে রিজার্ভ শূন্য করে আপনার সেই দশ লাখ টাকারে ৬ লাখ বানায়ে ফেলতেসে এক বছরে। কেউ কিন্তু হাত দেয় নাই আপনার একাউন্টে। কিছুই করে নাই। ভাবতেসেন মতিউররা এইসব করলে আপনার কী। কিন্তু পকেট ফাকা হয়ে যাইতেসে সবার। দেশে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়তেসে। এলসি খুলা যাচ্ছে না। ডলার না থাকায় টাকার মান কমায় চোখের পলকে দশ লাখ হয়ে যাচ্ছে ছয় লাখ, ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়তেসে।

এই হইলো একটা উদাহরণ। 
এইগুলা কেন, কীজন্য ,সবাই জানে। আই হেট পলিটিক্স রা এখন বিদেশ যাবে এই স্বপ্নে আছে। স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর কী বলবে কে জানে।

আমার একটাই দু:খ, বাংলাদেশে একটা বা কয়েকটা মূল সমস্যা ক্যান্সারের মত বিঁধে আছে বহুদিন যাবত। সেটাই সব সমস্যার গোড়া। বিষাক্ত পাম্প হাউস। 
সেই গোড়া সমূল উৎপাটনের বড়ো আন্দোলন না হয়ে এইসব ছোটখাট যে আন্দোলন , এগুলো তেমন ফলজনক নয়। 
ফল হলেও ছোট একটা সমাধান ঘটবে। বৃহৎ স্বার্থকে কানেক্ট করবে না। অল্প কিছু ভ্যাকেন্সির মধ্যেই জাস্ট দুইটা লোক বেশি চাকরি পাবে। তাও বিশাল এক অসম প্রতিযোগিতার পর। কিন্তু তাতে আরও কোটি কোটি মানুষ যারা নানাভাবে বঞ্চিত তাদের কী আসে যায়? 

আঠারোর আন্দোলনের পরিণতি তো দেখাই সবার। এইসব খণ্ড খণ্ড বিক্ষিপ্ত আন্দোলনে তারুণ্য কি তার সমষ্টিগত স্পিরিট হারিয়ে ফেলছে না? কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি ,পাচার এগুলোও কিন্তু বড়ো ইস্যু। কিন্তু এইসব ইস্যু কি একটু বেশি রিস্কি তাই না? দেশের ক্ষত নিয়ে আঙুল তোলা? ভোট, ক্ষমতা , ট্রাঞ্জিট, ভারত প্রশ্ন। হাহা। অবশ্য এইসব ইস্যুর গোড়াও ওই একটা সমস্যাই। যেই আন্দোলনটা হওয়া দরকার সেটা হবে না। গাছের শেকড়ই আলাদা হয়ে গেলে আগায় ফল খুঁজে লাভ নেই। অনেক পুরনো ক্ষতের সাক্ষী আমরা।

তবুও কিছু তরুণ স্বপ্ন দ্যাখে। এই ভেবে ভালো লাগে , আজও কেউ মাঠে নামে। আজও কেউ কেউ ভর দুপুরে কাস্তে হাতে ধান কেটে যায়। মনের পুঞ্জিত ক্ষোভ যেকোন উপলক্ষে উগড়ে আসতে চায়। এও নিশ্চয়ই এক বড়ো উপলক্ষ। একটা ইস্যুতে তারা এক হচ্ছে , মুখ ফুটে বলছে মানি না। আমরাও লেখার সুযোগ পাচ্ছি।

ইঙ্গিতে কিছু জিনিস বলসি। আমার আর কিছু বলার সাহস নাই। আমি ২৪ এর কোটা আন্দোলনে পক্ষে না বিপক্ষে , সেই ঘোষণাও তাই দিচ্ছি না। 
শিক্ষকদের কর্মবিরতি নিয়েও আমি পাজলড। টাকা চাইলেই তো হয় না , দেশের ভাণ্ডারে সে টাকাটা আসছে কিনা , জমা থাকছে কিনা , জবাবদিহি আছে কিনা ,সেইসব নিয়ে সচেতনতাও তো একটা বড়ো ও আগের কর্ম, তাই না শিক্ষক সমাজ?