এক.
আপাতত বেকার বলে প্রেম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।প্রেমিকা আমার অনুপ্রেরণা হবে,আমি ভালমতো চাকুরির পরীক্ষা দিব,চাকুরি পাবো তারপর প্রেমিকাকে বিয়ে করব।এই আমার মনোভাব।আমি তুবাকে পছন্দ করতাম এইটা সেও জানতো। একদিন যখন কদমফুল হাতে নিয়ে তার সামনে দাড়ালাম তখন সে বুঝে গেল আমি কি বলতে চাই।
কারণ, এই অফ সিজনে তার প্রিয় ফুল নিয়ে একটা ছেলে কেনোই বা আসবে তার সামনে।
“ দেখ তুবা,আমি আসলে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। অনেক ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলি,তাই অনেকে বলে আমি বাচাল।কিন্তু আমি বাচাল না,আমি আসলে তোমাকে অনেক পছন্দ করি। তবে সাকিব আল হাসান এর চেয়ে বেশি না।আবার কমও না। মানে সমান সমান। তুমি যদি আমাকে না-ও করে দাও আমার আফসোস নাই। ভালোলাগা, ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা জরুরি বলে আমি মনে করি।তাই তোমার প্রিয় কদম ফুল নিয়ে তোমার সামনে হাজির হয়েছে।যদি তোমার উত্তর না হয়, তবুও তুমি কদম ফুল টি নিও।অনেক কষ্ট করে খুঁজে পেয়েছি।”
তুবা খিলখিলিয়ে হাসতে থাকল। “আচ্ছা তুমি কি জানো? সোজাসোজি কথা বলতে এসে আবারও তুমি অনেকগুলো কথা বলে ফেলেছো? আমি এখন কোন সিরিয়াস রিলেশনশিপে যেতে চাই না। তবে,তোমাকে আমি একটা সুযোগ দিতে চাই। কারণ, তুমি মানুষ ভাল।অনেক আগে থেকেই দেখছি তুমি যেকোনো কিছুতে অনেক এফোর্ট দিতে পারো। এই জিনিসটা আমার খুব ভাল লাগে।তোমাকে দেখে আমি নিজেই অনুপ্রেরণা পাই, তাই আমি তোমাকে চাই।যদি তুমি তোমার মত করেই এফোর্ট দেও।”
তুবার এইসব কথা শুনে ভাবছিলাম, “তুবা এসব কথা বলছে! আমি তাকে মারাত্মক আম্যাচিওর ভাবছিলাম।বাহ! মেয়ে দেখি অনেক বুদ্ধিমতী,চালাক ও বটে।”
এরপর থেকে আমাদের সম্পর্ক শুরু। আমাদের দুজনের বাসা কাছাকাছি হওয়াতে আমরা প্রায়ই দেখা করতাম। ক্যাম্পাসে যেতাম আসতাম একসাথে। একদিন ঠিক করলাম ওকে বুঝানো দরকার যে আমি ওকে কত ভালোবাসি। তাই ঠিক করলাম প্রতিদিন একটি করে কদম ফুল দিব। শাহবাগের এক মামার সাথে দৈনিক পনেরো টাকার চুক্তিতে একটি কদম ফুল কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম।
একদিন গেল,দুই দিন গেল,তিন দিন গেল, চতুর্থ দিন সে আমাকে বলল দেখো, “এই অফ সিজনে এত কষ্ট করে কদম ফুল না এনে তুমি আমাকে গোলাপ ফুলও দিতে পারো। আমার কিন্তু গোলাপও অনেক ভালো লাগে।”
এরপর থেকে আমি টানা ৭ দিন তুবাকে গোলাপ ফুল দিয়েছি।কোনোদিন ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে, কোনদিন তার ভাগিনা তাজিমের মাধ্যমে, আবার কোনো একদিন তার বাসায় ভিক্ষা নিতে যাওয়া ভিখারির মাধ্যমে গোলাপ ফুল পৌঁছে দিয়েছি তার কাছে। সে খুব খুশি ছিল, তার খুশিতে আমিও খুশি ছিলাম। সেও মাঝে মাঝে রিটার্ন গিফট দিত।যেমনঃ চকলেট, চুইংগাম কিংবা দূর থেকে চোখ টিপি।
ভালই চলছিল আমাদের প্রেম।একদিন রাতে আমাকে সে একটা ইউটিউব চ্যানেলের লিঙ্ক দিয়ে বলল, “নতুন খুললাম সাবস্ক্রাইব করো।” আমি অনেক উতলা হয়ে ভিডিও গুলো দেখতে থাকলাম। ৫ টা ভিডিও আপলোড দিয়েছে।আর ৫ টা ভিডিওতেই দেওয়া কিভাবে গোলাপ ফুল দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। তৎক্ষণাৎ মনে পরল আমিও বিগত ৫ দিন ধরে তাকে গোলাপ ফুল দিয়ে যাচ্ছি!!
হায় হায়!
আমার দেওয়া গোলাপ দিয়ে সে রুপচর্চার ভিডিও বানায়! এইজন্যই কদম ফুলের বদলে গোলাপ দিতে বলছে সে?এই ছিল তার মনে?
নাহ! তার সাথে আর থাকা যাবে না।আমার দেওয়া অমূল্য গিফট নিয়ে সে এইসব কাজ করে! মানতে পারলাম না।এই মেয়ের সাথে আর সম্পর্ক রাখা যাবে না।কাল ই তার সাথে ব্রেক আপ করব।তার তো বুঝা উচিত আমার মতন প্রায় বেকার ছেলে যে কিনা টিউশনি করে নিজের হাতখরচ চালায় সে প্রতিদিন ফুল কিনে তার প্রেমিকাকে দেয় আর সে কিনা ফুল দিয়ে এইসব করে! বড়ই দুঃখের বিষয়।
যে কথা সেই কাজ সাথে সাথেই তুবাকে কল দিয়ে বললাম, “তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না। তুমি আমার ফিলিংস কে দাম দাও না। তুই আজই তোমার সাথে আমি ব্রেকআপ করলাম। আজ থেকে আমাদের সব যোগাযোগ বন্ধ!!”
দুই.
দুইদিন ধরে তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।৩ দিন পর তুবার বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে দেখি গেটের সামনে একটা ফুলের তোড়া ফেলে রেখেছে। তাতে কিছু শুকনা রজনীগন্ধা আর গোলাপ ফুলের ডান্ডি পাপড়ি ছাড়া!!
হায়!হায়! তাহলে কি আমি ভুল?
পুরাই ভুল বোঝাবুঝিতে তার সাথে ব্রেক আপ করলাম ধুর! এইটা কোনো কথা! সেদিন কত আজেবাজে কথা বললাম সে একটারও জবাব দিল না চুপচাপ হয়ে গেল। কত উল্টাপাল্টা কথা-ই না তাকে বলেছি। কত-ই না কষ্ট পেয়েছে সে। এখন এই মুখে তাকে কিভাবে সরি বলি!!
এটা ভাবতে ভাবতে তার গলির পাশে পায়চারি করছিলাম। হঠাৎ দেখি একটা মেয়েলি কন্ঠ আমাকে ডাক দিচ্ছে।ফিরে দেখি তুবা! তার বাসার বারান্দা দিয়ে আমাকে দাঁড়ানোর জন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভয়ে তো আমি শেষ। না জানি কি বলবে। ওর ভাই আবার জিম করে! যদি মাইর মুইর দেয়!!
নিচে নেমে এসে তুবা আমাকে বলল, “কি ব্যাপার দুদিন ধরে যোগাযোগ নাই কেন? কোন কিছু কি হয়েছে?আর পরশু দিন রাতে ফোন দিয়েছো, আমার মামাতো বোন রিসিভ করেছে। আমি খেয়াল করিনি।পরে আবার তোমাকে কতবার কল দিলাম দেখি তো মোবাইল অফ।আমি তো ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম।ফেসবুকে আইডিও দেখি ডিএক্টিভেট। কি হয়েছে বলোতো?
আমি তাৎক্ষণিক জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার কাজিনের বয়স কত?"
তুবা উত্তর দিল, “৩ বছর।”
যাক বাবা! বড় বাঁচা বাঁচলাম।
“আচ্ছা,এই ফুলের তোড়ার গোলাপ দিয়ে রূপচর্চা করেছে তাই না?”
তুবা লাজুক দৃষ্টিতে বলল, “তুমি কিভাবে বুঝলে?”
আমি মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বলি, “ নিশ্চয়ই আমি খুব বড় ভাল মানুষ, নাহলে এতো বড় অপরাধ করে এতো ক্লোজলি বেঁচে যায় কিভাবে? মানির মান, উপরওয়ালা ঠিকই রাখে! এই সহজ সরল মেয়েটাকে আমার চাই ই। নাহলে কিচ্ছু চাই না।”
সমাপ্ত