পোস্টস

গল্প

অরণ্যের বৈরী -১

৮ জুলাই ২০২৪

মাহবুব আবির

 

সময় ১০ টা বেজে ৫ মিনিট, কাল ২০০২ সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ।

 

ক্যাম্পাসের অতি পরিচিত মুখ রাকিব হাসান বসে আছে ঠিক ক্যাম্পাসের সবচেয়ে পুরনো বটগাছের নিচে। পাশে বসা একজন অপরিচিত মানব, কোমল পানীয়র বোতলে ঠোঁট ফাক করে চুকচুক করে চলেছে । পানীয় শেষ করে সেই বিশাল দেহী অতি নির্বোধ মানবটি পাশেই ছিপি খোলা বোতল ফেলে দিয়ে যায়। ঘটনাটি রাকিব লক্ষ্য করে। রাকিব সিগারেট টানতে টানতে খুব বিরক্তি নিয়ে বলে, এই অসভ্য জাতি কি মানুষ হবে না। এরপর সে নিজেই সিগারেটের ফিল্টার টা ওখানেই ফেলে দেয়। ঠিক সেই মুহূর্তে হারুন ,অনু আর শায়লা চলে আসে। অনু রাকিবকে উদ্দেশ্য করে বলে, কিরে! তুই একাই বসে আছিস, আরেকজন কোথায়?

রাকিব তিক্ত মেজাজে বলে, সাজ্জাদ? কি জানি দেখ হয়তো কোন গাছের সাথে কথা বলছে ।

অনু অবাক দৃষ্টিতে বলে, কিহ! গাছের সাথে কথা বলছে? 

রাকিব একটু সাহিত্যিক মনোভাব নিয়ে বলে, হ্যাঁ তার এখন মনে হয়েছে জীবনের অর্থ শুধু মানুষের সাথেই নয় গাছের সাথেও কমিউনিকেট করা উচিত । তাই সে এখন গাছ নিয়ে গবেষণা করছে। উঠতে উঠতে বলে , আচ্ছা তোরা বস আমি একটু চয়নদার ফার্মেসিতে যাব।

শায়লা একটু মলিন মুখে বলে, ব্যাপার কি আজকাল তুই হঠাৎ ফার্মেসিতে বসা শুরু করলি যে?

 কি করব বল মেয়েদের মনের ভাষা বুঝতে হলে ফার্মেসিতেই বসতে হবে। 

হারুন একটু দুষ্টুমির ছলে বলে ,তোদের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। একজন গাছের পেছনে ছুটছে আরেকজন ফার্মেসিতে। 

অনু এবার কৌতুহল নিয়ে রাকিব কে প্রশ্ন করে ,তোর ব্যাপারটা কি বলতো?

:তোরা মেয়েরা একটা সহজ ব্যাপার কে সহজভাবে প্রেজেন্ট করতে পারিস না। একটা জিনিস ভেবে দেখ মেয়েরা যখন ফার্মেসিতে যায় তখন তারা অপেক্ষা করে কখন দোকানে ভিড় কমবে আর ঠিক কোন সময় দোকানদারের কাছে, ঠিক জিনিসটা চাইবে। আর একটা মেয়ে সেটা কি কিভাবে প্রেজেন্ট করে এটা যে বুঝতে পারবে তার জন্য মেয়েদের মন বোঝা খুবই সহজ হবে।

শায়লা একটু বিরক্ত হয়ে বলে, উফ তোদের নিয়ে পাগল হয়ে যাব। চল তো অনু একটু লাইবেরিতে যাব। 

এরপর সবাই যার যার মত চলে যায়।

সাজ্জাদ একটা গাছকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। এমন সময় পেছন থেকে হারুন এসে অবাক হয়ে বলে; কিরে তুই এখানে গাছ জড়িয়ে ধরে কি করিস?

: হাহ! তুই যদি বুঝতি , তোরা যদি বুঝতি । হারুন জানিস একটা গাছের মধ্যেও নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য আছে।

 : তুই কি করে বুঝলি এটি একটি নারী গাছ? 

: ভেবে দেখ এই যে গাছ।  গাছ থেকে ফুল ফল সবকিছুই হচ্ছে অতএব এটি একটি নারী গাছ। যখনি তুই একটা গাছের মন বুঝতে পারবি তখনই একটা মেয়ের মন কে বুঝতে পারবি। 

: তুই যেভাবে গাছটাকে জড়িয়ে ধরেছিস গাছটার চরিত্র নষ্ট হয়ে যাবে তো ।

: মানে কি বলবো, তোরা সব সময় নেগেটিভ কিছুই চিন্তা করিস একটু পজিটিভ ভাবে ভেবে দেখ। ধর গাছটাও আমাকে ফিল করছে। তাহলে কেমন হবে?

: তাহলে আর কি পরকীয়ার পরিণত হবে .. হা হা হা। 

: শোন প্রতিটি শিশু গাছ আমার সন্তানের মত। ওদের কে আমি আমার সন্তানের মত ভালোবাসি।

: তাহলে একটা মৌমাছি এনে তোর পাজামার ভিতরে ঢুকিয়ে দেই। কারণ জানিস তো মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে গাছের পরাগায়ন ঘটায়। এর পরে গাছের যে বাচ্চা হবে সেটা তোর সন্তান হবে.. হা হা হা।

সাজ্জাদ রাগ করে চলে যায়।


 

চয়ন দা, কি খবর?

: আরেহ কে! রাকিব যে। এইতো দাদা আছি আরকি, তা তোমার কি খবর ? নতুন কিছু পেলে?

: নাহ! এখনো কিছু পাইনি তবে গবেষণা চলছে । হয়তো অতি শীঘ্রই পেয়ে যাব। তা তোমার কি খবর , পেয়ে গেছ মনে হচ্ছে ? (চয়ন দা একজন ফার্মাসিস্ট, নতুন কোন কিছুর সন্ধান করতে থাকে, মাথায় একটা নতুন কি ভূত চেপেছে সেটা নিয়েই গবেষণা করছে)

: না এখনো খোঁজ পাইনি । তবে যতটুকু শুনেছি নতুন কোন মেডিসিন তৈরি হচ্ছে যেটা মানুষের মস্তিষ্কে এমন কিছু সৃষ্টি করবে যার ফলে মানুষের মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা ও স্মৃতি শক্তি অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। 

: তবে এতে করে কতটা ভালো হবে বুঝতে পারছি না, কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করেছ ? মানুষের মস্তিষ্কের ধারন ক্ষমতা যদি বেড়ে যায় তখন মানুষের মধ্যে হিংসা পরায়নতা বেড়ে যাবে। পূর্ব শত্রুতা নতুন করে বৃদ্ধি পাবে। কারো কোন অপরাধ ভুলে যেতে চাইলেও মানুষ ভুলে যেতে পারবে না। 

: রাকিব তুমি ঠিকই বলেছ। এটা নিয়ে আমিও ভাবছি। তবে যেমন খারাপ দিক রয়েছে তেমন ভালো দিকও রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে বহির বিশ্ব অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এটা আমাদের জন্য একটা অন্যরকম সৃষ্টি হবে। 

হুম এক দিক থেকে ঠিকি বলেছ চয়ন দা, আচ্ছা এখন আসি আমার একটা টিউশন আছে ; বলে রাকিব চলে যায়। 

পরের দিন

ইলিয়াস ক্যাম্পাসের এক কোনে বসে গিটার বাজিয়ে গান করছে। এমন সময় রাকিব,অনু , শায়লা, হারুন আর সাজ্জাদ উপস্থিত হয়।

: কবিতা তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না..

অনু :- কিরে আজকাল যে তোর কোন খোঁজই পাওয়া যায় না ? 

রাকিব:- হা হা.. ওর খোঁজ পাবি কি করে ওতো এখন ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে । তাই বেদনার সুর তুলছে।

অনু:- আয় তোরা থাম তো। আচ্ছা বলতো কি হয়েছে তোর? এখন কারো সাথে কোন যোগাযোগ রাখিস না। ব্যাপার কি একটু খুলে বল? 

ইলিয়াস দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলে, আসলে মানুষের মনের কথা, মনের ভাষা, মনের কষ্টগুলো প্রকাশ করার জন্য সহজ মাধ্যম হচ্ছে এই গান। আবার একজন মানুষকে সবকিছু ভুলিয়ে রাখতে পারে এই গানের মাধ্যমে ।

হারুন:- আচ্ছা বাদ দে। তুই একটা গান শোনা।

সাজ্জাদ:- হ্যাঁ গান। মাঝে মাঝে মনে হয় গাছগুলো যেন নিত্য করতে করতে গান গাইছে । আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল ও দিনে..

অনু:- আই থাতাম তো । ইলিয়াস তুই গান ধর।

ইলিয়াস:- কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো..

শায়লা:- হইছে থাক তোর আর ছেকা খাওয়া গান শোনানো লাগবে না।

হারুন:- আচ্ছা থাক তোরা । আমি এখন যায় টিউশন আছে।

রাকিব:- হ্যাঁ আমিও যাই রে আমারও টিউশন আছে।