যদি নিজের হারানো ওই অতীত না হোক, তার কিছুটাও ফিরে পেতাম!
নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটা ছেলে, যার প্রচণ্ড আগ্রহ নজরুল-রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দকে নিয়ে। তাদের কবিতা, উপন্যাসের এক লাইন বোঝে তো পরের তিন লাইন বোঝে না। তবুও সারাদিন পড়াশোনার বাইরে ওসব বই নিয়েই পড়ে থাকে। সেকায়েপের বই বিতরণ কর্মসূচিতে সদস্য হয়ে অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে নানা ধরনের বইয়ের উপর তার আগ্রহ খুঁজে পায়।
"ভোর হলো দোর খোলো, খুকুমণি ওঠো রে!" কথাগুলোর মাধ্যমে নজরুলের যে ভাবের সাথে সে পরিচিত হয় ছোটবেলায়, 'বিদ্রোহী'র জাদুকরী শব্দে বিমোহিত হয়ে কবিতা ও নজরুলের প্রতি তার ভালোলাগা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে নবম-দশম শ্রেণিতেই। না, ও কবিতার সবটা সে বুঝতো না। তবুও মনের অজান্তেই 'বিদ্রোহী' পড়ে তার রক্ত দ্রুতবেগে চলতে শুধু করে শরীরে।
'প্রেম' কিংবা 'প্রকৃতি প্রেম' এই দুটো শব্দ তার কাছে ধরা দেয় রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দের হাত ধরে। তা তো ওই সাহিত্যবোধ পর্যন্তই থেকে গেলো।
আহামরি ভালো ছিলো না পড়াশোনায়। ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে যে ছেলে বইয়ের মধ্যে গল্প-উপন্যাস রেখে পড়তে বসে লুকিয়ে; এরপর মায়ের হাতে মার খায়, সে আবার পড়াশোনায় ভালো হয় কিভাবে! গড়পড়তা একটা ফলাফল থাকতো সবসময়।
প্রচন্ড ক্রিকেট পাগল ছেলেটা কতবার যে বাংলাদেশের ম্যাচের আগে অসুস্থতার কথা বলে আবেদন জমা দিয়ে বাসায় চলে গেলো, তার খোঁজ রাখেনি নিজেও। ভবিষ্যত নিয়ে অতটা ভাবেনি সে!
অথচ, আজ.....
পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে তার। এখন নজরুল-রবির সাহিত্যও তাকে আগের মতো ঠিক টানে না। এখন ক্রিকেটের কত ম্যাচ, কার হার-জিত হলো; এসবেরও খোঁজ রাখে না সে! এখন ভবিষ্যত নিয়ে টেনশন হয়, নিজের সোনালী অতীত হাতড়ে খুঁজে ফেরে সে। এখন এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে রাখে সবসময়।
এই ছেলেটা আমি!