পোস্টস

কবিতা

ভাঁটফুল

৯ জুলাই ২০২৪

জরীফ উদ্দীন

এরপর আর ভাঁটফুলের সুবাস নেওয়া হয়নি কখনো

যেভাবে লেখা হয়নি চিঠি কোনদিনও তোমাকে

অথচ চিঠি ছাড়াই ভালোবাসা ডালপালা মেলেছে

দূর-বহুদূর ওই অন্তহীন আসমানে

শিকড় মাটি ভেদ করে গ্যাছে পাতাল অবধি।
 

আচ্ছা মাটির নিচে কি সত্যিই পাতাল আছে?

 

 

মহসিন স্যার একদিন আমাকে টেবিলে রাখা রংবাহারি প্লাস্টিকের ফুল দেখিয়ে 

জিজ্ঞেস করেছিলেন- এই ফুলটার নাম কী?

বোকার মতই দাঁড়িয়ে ছিলাম না চিনে

স্যার হয়তো বুঝতে পেয়েছেন আমার না পাওয়ার লজ্জাটা

তাই নিজেই ফুলটার পরিচয় দিলেন

ভাঁটফুল

আশ্চর্য! স্যার নাম বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল

ঝোপঝাড়, রাস্তার দুই ধার, অনাবাদি জমিতে এইফুল কত দেখেছি! 

পাঁচটি পাঁপড়ি, পাঁচটি লম্বা কিশোরের হালকা বেগুনি আভার সাদা ফুল

আহ! ভ্যাঁটফুল

মনে পড়ল জীবননানন্দের কবিতার চরণ 

"বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।"

 

 

ভাঁটফুল, ঘুঙুরের মতো আর কেঁদ না কো তুমি...
 

দূরন্ত বেলায় এই ভাঁটফুল আমাদের কত প্রিয় ছিল; 

ছিল একদা ভাঁটফুলের কত আয়োজন

অফুলা কচিপাতার রস ছিল

জ্বর, ক্রিমি কিংবা পেটের অসুখের অব্যর্থ দাওয়াই

ভাঁটের তিতা ডালে দাঁত মাজতাম দাঁতের পোকার ভয়ে

যখন ভাঁটফুল ছিল আমাদের ভাঁটিফুল! খেলার সামগ্রী। 
 

কতদিন থেকে চৈত মাস আসলে ভাঁটফুল দ্যাখা হয় না আয়োজন করে

ছুটে যাই না বাড়ির পিছনে বাঁশঝাড় লাগোয়া অনাবাদি জমিতে

যেখানে কানশিশা, শটি, ভাঁটফুল মিলেমিশে থাকত,

এখনো হয়তো আছে।
 

প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, এলবেনডাজল  দখল করেছে ভাঁটফুলের ওষধিগুণ

তাই অসুস্থে খাওয়া হয় না অফুলা ভাঁটকুশির রস

ছেলেবেলা কেড়ে নিয়েছে খেলাঘর তাই ছেড়া হয় না ফুলটি

দাঁতের মাজনের জন্য কাটা হয় না গাছটি কখনো

ফুল থেকে কালো বীজ হয়ে যায় বংশ রক্ষায়

তবুও নেয়া হয় না সুবাস

আচ্ছা, এখনো কি ভাঁটফুল দ্যাখ্যা যায়? 

নাকে কি ভেসে আসে সুবাস

সেই আদিম মনমাতানো সুবাস?