লিফট
রাশিকুর রহমান রিফাত
হন্তদন্ত হয়ে লিফটে প্রবেশ করলো আসিফ। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। বেশ খানিকটা পথ দৌড়ে আসতে হয়েছে তাকে। বেশ কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার তার হাতে একটা তালিকা ধরিয়ে দিয়ে ঔষধগুলো নিয়ে আসতে বলেছিল। তার মায়ের চিকিৎসার জন্য ঔষধগুলো নাকি খুব জরুরী দরকার। এত রাতে কোনো ফার্মেসী খোলা পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে ছিল সে। হাসপাতালের ফার্মেসীতে খুঁজে দেখা যায়। তবে সেখানে সম্ভবত পাওয়া যাবে না। অন্তত ডাক্তারের কথায় তাই মনে হলো। হাতে লিস্টটি নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল আসিফ। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজা-খুঁজির পর অবশেষে পাওয়া গেছে ঔষধগুলো।
লিফট উপরে উঠতে শুরু করলো। এতরাতে তেমন কেউ নেই। এদিক-সেদিক তাকাতেই পাশে উনিশ-কুড়ি বয়সী এক অপরূপ রূপসী নারীকে দেখতে পেলে আসিফ। আক্ষরিক অর্থেই রূপে চোখ ঝলসে যাওয়ার মত অবস্থা হলো তার। একটু পরপর আড়চোখে মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছিল সে। এমন সময় হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে লিফট বন্ধ হয়ে গেল।
নিকষ কালো আঁধারে চারিদিক সম্পূর্ণ ঢেকে গেল। এ যেন অন্ধকারের সমুদ্র। স্বল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকেও দেখা যাচ্ছিলো না আর। মেয়েটাকে ভয় দেখাবার জন্য হঠাৎ করেই আসিফের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল।
"আপনার কি ভয় করছে?” মেয়েটির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো আসিফ।
"কিছুটা।" জবাবে বলল মেয়েটি।
"ভয় পাবেন না। এখনি আলো চলে আসবে। অবশ্য এই লিফটটা নিয়ে মাঝে-মাঝে বেশকিছু ভয়ের কথা শোনা যায়।"
"যেমন?” কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো মেয়েটি।
"বছর চারেক আগে বেশ কয়েকজন ছেলে মিলে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিলো এই লিফটে। গভীর রাতে ঘটেছিল ঘটনাটি। আশে-পাশে কেউ না থাকার ফলে ঘটনাটা সকলের দৃষ্টিগোচরেই রয়ে গিয়েছিল। পরের দিন মেয়েটির মর্মান্তিক লাশ আবিষ্কৃত হয়। ততক্ষণে খুনি ধর্ষকরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এরপর বেশ কয়েকদিন পত্র-পত্রিকাতে এসব নিয়ে লেখা হয় ,পুলিশকে কিছুটা তৎপর দেখা যায়। কিন্তু আদতে কোনো লাভ হয় না। ধর্ষকদের টিকিটিও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
ঘটনাটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু আসল সমস্যাটা শুরু হলো ঠিক তারপরেই। এরপরে মাঝে-মাঝে গভীর রাতে কোনো ব্যক্তি লিফটে একা থাকলে মেয়েটি নাকি তাকে দেখা দিয়ে ভয় দেখায়। অনেকেরই নাকি এ অভিজ্ঞতা হয়েছে।" এতটুকু বলার পর কিছুটা দম নিলো সে।
মেয়েটি ঘাবড়ে গিয়েছে ভেবে তাকে আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করলো আসিফ।
"আপনি ভয় পাবেন না। আজকে মেয়েটি আসবে না। আপনি তো এখানে একা নন। আমিও আছি।"
"আমি আমার জন্য ভয় পাচ্ছি না।" বলল মেয়েটি।
আসিফ কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সামনে এক নারকীয় দৃশ্যের অবতারণা হলো। অন্ধকারের ভেতর মেয়েটির চোখদুটি রক্তজবার মত করে জ্বলতে লাগলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে চারিদিকে আবছা লাল রঙের আভা ছড়িয়ে পরলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না আসিফ। এসব কি দেখছে সে! কোথা থেকে যেন বর্ণনাতীত রকমের আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়লো সমগ্র লিফটের ভেতর। আঁধারের মাঝেও সবকিছু কেমন যেন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে সে। ভয়ে লিফটের এক কোনায় সিটিয়ে গেল আসিফ। অনবরত দরদর করে ঘামছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার। এমন সময় মেয়েটির চেহারায় ভয়ংকর হাসি ফুটে উঠলো। হাসি যে এত ভয়ংকর হতে পারে সেটা জানা ছিলো না আসিফের। মেয়েটির দন্ত বিকশিত হতেই আরও ঘাবড়ে গেল সে। হঠাৎ করেই চোখ ও ঠোঁট গড়িয়ে রক্ত বের হতে থাকলো মেয়েটির। আস্তে আস্তে সামনের দিকে আগাতে থাকলো মেয়েটি। হাঁটার ধরণটা কেমন যেন অস্বাভাবিক। আস্তে আস্তে আসিফের খুব কাছে চলে আসলো মেয়েটি। তার ঘন নিঃশ্বাস উপলব্ধি করছে সে। একটা অদ্ভুত গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পরলো। আর সহ্য করতে পারলো না আসিফ। আস্তে আস্তে দুচোখ বুজে আসলো তার।
হাসপাতালের লিফট থেকে রহস্যময়ভাবে এক যুবকের লাশ উদ্ধার
গতকাল রাজধানীর এক স্বনামধন্য হাসপাতালের লিফট থেকে একজন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সকালে লিফটম্যান প্রথম লাশটি আবিষ্কার করে। লোকটি কীভাবে মারা গিয়েছিল বা লিফটে কি হয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মৃত্যু ব্যক্তি সম্ভবত কিছু একটা দেখে প্রচণ্ড রকমের ভয় পান। আপাতত ঘটনাটি নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে।