Posts

গল্প

স্মার্ট ঘড়ি

July 12, 2024

Gouri Bhowmick

81
View

ছেলেটির নাম শান্ত ।সত্যিই সে ছিল খুব শান্ত। পড়াশোনায় ছিল অনেক ভালো ।পড়তো ক্লাস ফোরে। তার বাবা ছিলেন রিকশাচালক আর মা পাশেই একজনের বাসায় কাজ করতো অনেক বছর ধরে। দুজনের অল্প রোজগারের সংসার কোনরকম চলে যেত। শান্ত ছিল তাদের একমাত্র সন্তান। বাসার পাশে একটি স্কুলে এসে পড়াশোনা করতো আর বিকেলে একটি স্যারের কাছে পড়তে যেত।

 শান্তকে শান্তর বাবা প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে আসতো। আর শান্ত একা বা বন্ধুদের সাথে বাসায় আসতো। প্রতিদিন ওদের জীবন এভাবেই কেটে যেতে লাগলো। একদিন শান্ত স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে একটি নতুন দোকান দেখতে পেল। দোকানটি ছিল ঘড়ির দোকান অনেক রকমের সুন্দর ঘড়ি। বাইরে দাঁড়িয়ে শান্ত খুব মনোযোগ দিয়ে ঘড়িগুলো দেখছিল। তো ঘড়ির দোকানদার শান্তকে জিজ্ঞেস করল, "খোকা তোমার কি লাগবে?"শান্ত বলল, "কিছু না দাদু।"  "দাদু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?" শান্ত তার সুন্দর কন্ঠে দাদুকে বলল। দোকানদার বলল, "বল।" শান্ত দোকানদারকে জিজ্ঞেস করল একটি ঘড়ি দেখিয়ে, "এই ঘড়িটার নাম কি?" দাদু বা দোকানদার বলল, "এটা বাচ্চাদের স্মার্ট ঘড়ি।" শান্ত বললো, "ও আচ্ছা।" এই বলে সে চলে এল তার বাসায়। তারপর রাতে শান্ত পড়তে বসে তার মাকে বলল, "মা আমার একটা জিনিস খুব পছন্দ হয়েছে।" মা আদর করে ছেলেকে বলল, "কি পছন্দ হয়েছে?"তখন শান্ত বলল," স্মার্ট ঘড়ি। আমাদের বাসার পাশে যে নতুন দোকান হয়েছে ওইখানে আছে।" মা শুনে বলল, "ইস্মার্ট ঘড়ি? সেটা আবার কি?" তখন শান্ত তার মাকে সব বুঝিয়ে বলল।

তারপর রাতে যখন শান্ত ঘুমিয়ে পড়ল, তখন শান্তর মা শান্তর বাবাকে বলল এই স্মার্ট ঘড়ির কথা। শান্তর বাবা পরের দিন ছেলেকে নিয়ে ওই দোকানে গেল এবং ছেলের পছন্দমতে সেই স্মার্ট ঘড়িটি দোকানদারকে বের করে দেখাতে বলল। শান্ত তো সেই খুশি। কিন্তু দোকানদার যখন এই ঘড়ির দাম বলল, তখন তো শান্তর বাবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এর দাম ২০০০ টাকা। একটু কমিয়ে রাখার কথা বলল।কমালে বা আর কত কমাবে। তখন শান্তর বাবা শান্তকে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এল। শান্ত ঘুরে ঘুরে বারবার ওই ঘড়িটার দিকেই তাকাচ্ছিল। শান্ত ঠিক বুঝতে পারল ওর বাবা-মার সামর্থ্য নেই এরকম দামি ঘড়ি কিনে দেবার।

 পরদিন প্রতিদিনের মতো শান্ত স্কুলে গেল আর স্কুল থেকে বাসায় ফিরে বিকেলে কোচিংয়ে পড়তে গেল। কোচিংয়ে যাওয়ার পর স্যার বললেন," আমি তোমাদের একটি পরীক্ষা নেব, সেই পরীক্ষায় যে first হবে, তাকে একটি স্মার্ট ঘড়ি উপহার দেব।শান্ত মনে করছে, সে স্বপ্ন দেখছে। সে আবার স্যারকে জিজ্ঞেস করল। স্যার আবার বললেন, হ্যাঁ রে শান্ত.... যে ফার্স্ট হবে, সেই পাবে স্মার্ট ঘড়ি। শান্ত ছুটির পরে দৌড়ে বাসায় গেল। গিয়ে ওর মাকে বলল। ওর মা ওকে বলল, "ওই স্মার্ট ঘড়ি তো আমার খোকাই পাবে। ভালো করে পর খোকা। তুই পাবি এই ঘড়ি।

" শান্ত দিন রাত এক করে পড়তে লাগলো।খাওয়া নেই দাওয়া নেই। শুধু পড়া আর পড়া। এভাবেই পড়তে পড়তে ওর দিন কেটে যেতে লাগলো। তারপর যেদিন পরীক্ষা তার আগের দিন রাতে শান্ত কে তার মা বলল, "খোকা এত রাত পর্যন্ত না পড়ে ঘুমাতে আয় খোকা।" একবার মা ডাকে, একবার বাবা ডাকে ঘুমাতে আসার জন্য। ছেলে বলল, ও একটু পরে ঘুমাবে। মা-বাবাকে ঘুমিয়ে থাকতে বলল।

পরের দিন সকালে শান্তর মা ভোরে ঘুম থেকে উঠল। উঠে দেখল শান্ত পাশে নেই। পড়ার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত পড়তে পড়তে ওখানেই মাথা নিচু করে আছে। শান্তর মা তাকে ডাকতে গেল। 'খোকা' বলে কয়বার ডাকলো কিন্তু খোকা সাড়া দিচ্ছে না। পরে খোকার মা খোকাকে ধাক্কা দিল। দেখল খোকা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। শান্তর বাবাকে তাড়াতাড়ি করে শান্তর মা ডেকে তুলল। তাড়াতাড়ি ছেলেকে কাছে একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলো। পরবর্তীতে ডাক্তার শান্তকে চেকআপ করল এবং ভর্তি করতে বলল।অনেকক্ষণ পরে শান্তর জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফিরে শান্তি বলল, ও পরীক্ষা দিতে যাবে। কিন্তু ডাক্তার নিষেধ করায় শান্তর বাবা-মা ওকে কোথাও নিয়ে যেতে রাজি হল না। শান্ত তখন খুব কান্না করলো। এভাবে হাসপাতালে শুয়ে ওর তিনদিন কেটে গেল।

 তিন দিন পর শান্ত তখন কোচিংয়ে গেল। ওর সামনেই যেই ছেলেটি ফার্স্ট হয়েছে, সে ঘড়িটি পড়ে ঘুরছে। কিন্তু শান্ত একটু দেখতে চাইলে  ওকে একটু ধরতে দিল না। শান্ত তখন মন খারাপ করে চলে গেল।

একমাস পরে শান্তর মা যেই বাড়িতে কাজ করে সেই বাড়ির বাড়িওয়ালা খালু বিদেশ থাকে। অনেকদিন পর বিদেশ থেকে আসবে। সবাইকে জিজ্ঞেস করছে ফোন করে ,কার কি লাগবে।সেই সময় শান্তর মা ওখানে ছিল। অনেক পুরানো কাজের মানুষ। তাই ওই বাসার খানা শান্তর মাকে জিজ্ঞেস করছে, কিরে শান্তর মা তোর জন্য তোর খালুকে কিছু আনতে বলবো। তখন শান্তর মা বলল," না ,খালা আমার কিছু লাগবে না।" কিন্তু ওই খালা বারবার বলছে আরে কিছু লাগলে বল্ ।তুই আমাদের বাড়ির অনেক পুরনো কাজের লোক।কিছু লাগলে বল। তখন মা বলল, "কিছু যদি মনে না করেন খালা, তাইলে খালুরে বইলেন আমার ছেলের জন্য একটা ইস্মার্ট ঘড়ি আনতে।" খালা বলল, আচ্ছা বলবো।

 শান্তর মা শান্তকে গিয়ে এই কথা বলল। শান্ত তো শুনে সেই খুশি। বন্ধুদের গিয়ে বলছে যে, ও বিদেশী স্মার্ট ঘড়ি পড়বে। সে কি আনন্দ তার। পাখির মত শান্তর মন উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে।তার যে কি আনন্দ! ছেলের আনন্দ দেখে শান্তর বাবা-মা দুজনেই খুশি।

মাসখানেক পর যেদিন শান্তর মা সেই বিদেশি খালু আসবে, সকাল সকাল চলে গেল সেই বাড়িতে। আর সব রান্না বান্না ঘরের সব কাজ সে খুব তাড়াতাড়ি করে সেরে নিল, যাতে সে ঘড়িটা পেলেই যাতে তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে যেতে পারে।তারপর সেই বিদেশি খালু এলো। সবাই সবার গিফট নিচ্ছে। খালাম্মা এসে শান্তর মাকে একটা ছোট ব্যাগ দিল। শান্তর মা সেই ব্যাগ নিয়ে খালার কাছ থেকে ছুটে তাড়াতাড়ি করে বাড়িতে গেল। গিয়ে দেখল শান্ত ও শান্তর বাবা দুজনেই বাড়িতে আছে। শান্ততো তার মাকে দেখে দৌড় দিল।মায়ের হাতে ব্যাগ দেখে তো শান্ত সেই খুশি। ওর মা বলল, "যা গোসল করে আয়। তারপর খাইয়ে নে। খেয়ে তারপর আমরা আরাম করে বসে ব্যাগ খুলবো আর ইস্মার্ট ঘড়ি দেখব। সেই কথা শুনে শান্ত আর ওর বাবা চলে গেল গোসল করতে। গোসল করে এসে খেয়ে নিল আর তারপর ওরা তিনজন মিলে ব্যাগ নিয়ে বসলো আর ব্যাগটা দিল শান্তকে খুলতে।শান্তি তো ব্যাগ খুলে দেখল  ব্যাগে শুধুমাত্র একটা সাবান। আর কিছু নেই। শান্ত ওর মাকে বলল," আম্মা আমার স্মার্ট ঘড়ি কই?" ওর মা বলল, "ব্যাগেই আছে। ভালো করে দেখ।" পুরো ব্যাগ দেখলো। কোথাও কিছু নেই। আবার শান্তর খারাপ হয়ে গেল। শান্তর বাবা-মা আর শান্ত তিনজনের কান্না করতে লাগলো।

বি .দ্র: এভাবেই গরিব মানুষের সব স্বপ্ন ভেঙে যায়।

Comments

    Please login to post comment. Login