পর্ব-৭
আমি:"দেখা হবে, দেখা অবশ্যই হবে, তোমার সাথে দেখা হওয়া দরকার!"
অধরা:"তাহলে এতো কেন কেন করছিলেন কেন?"
আমি:"খুব শুনতে ইচ্ছা হচ্ছিলো, তুমি কি বল? তোমার উত্তর আমার পছন্দ হয়েছে!"
অধরা:"ধুর আমি ভাবলাম, আপনার ইচ্ছা নেই!"
আমি:"গুলশান-২ এর কাছাকাছি দেখা করা যায়? আমি না হয় অফিস থেকে লাঞ্চ ব্রেকে চলে আসবো, লাঞ্চ করতে করতে গল্প করবো, তোমাকে লাঞ্চের দাওয়াত দিলাম, আসবে তো?
অধরা:"অব্শ্যই আসবো!"
আমি:"ঠিক আছে তাহলে অন্য প্রসঙ্গে আলাপ করি?"
অধরা:"অল রাইট"
আমি:"তুমি কখনো নদীতে নৌকা ভ্রমণ করেছো?"
অধরা:"না, করি নাই! আপনি?"
আমি:"আমার জীবন কাটে নৌকায় করে!"
অধরা:"তার মানে?"
আমি:"মানে আমার যে প্রজেক্টগুলা সুনামগঞ্জে করি, ওখানে যেতে নৌকা লাগে!"
অধরা:"বলেন কি ? আপনি সাঁতার জানেন?"
আমি:"না!"
অধরা:"আপনার ভয় লাগে না?"
আমি:" হ্যাঁ, লাগে!"
অধরা:"তখন কি করেন ?"
আমি:"নৌকায় বসে আয়াতুল কুরসী পড়ি! এরপরে ভয় কেটে যায়, মনে হয় মরতে তো একদিন হবেই, ভয় পেয়ে কি লাভ?"
অধরা:"জীবন আসলে সত্যি কঠিন, তাই না!"
আমি:"ঠিক, জীবিকার জন্য ভয় পেলেও মানুষকে অনেক কিছু করতে হয়!"
অধরা:"আপনার আব্বু-আম্মু জানে এই গুলা?"
আমি:"না উনাদের আমি এইগুলা বলি না, খামোখা ভয় পাবে!"
অধরা:"ইশ! আমি যদি আপনার সাথে থাকতে পারতাম, ওই নৌকায়!"
আমি:" তাহলে আমি গান গাইতাম, 'এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলতো?"
অধরা:"এটা তো উত্তম-সুচিত্রার সিনেমার গান, তাই না?"
আমি:" হ্যাঁ, সিনেমার নাম, পথে হলো দেরি"
অধরা:"ভালো সিনেমা, আমি দেখেছি!"
আমি:"আগের দিনের রোমান্টিক সিনেমা গুলো কত সুন্দর হতো, আর এখন, সিনেমার গানের নমুনা, 'প্রেম করেছি বেশ করেছি, তোর বাপের কি?"
অধরা:"হি হি এইটা কোন সিনেমার গান?"
আমি:"জানি না!"
অধরা:"আপনি কখনো প্রেমে পড়েছেন?"
আমি:" হ্যাঁ, আমি প্রথম প্রেমে পড়ি ক্লাস ফোরে পড়তে!"
অধরা:"বলেন কি, এতো বাচ্চা বয়সে?
আমি:" হ্যাঁ, আমি ছোটকাল থেকে ইঁচড়ে পাকা ছিলাম!"
অধরা:"কে ছিল সেই মেয়েটি?"
আমি:"আমার ক্লাসে পড়তো, অনেক সুন্দর ছিল, আর সুন্দর করে কথা বলতো"
অধরা:"আমি তো ওই বয়সে প্রেম কি জিনিস বুঝতাম না!"
আমি:"হেসে, আমি তো বুঝি নাই!"
অধরা:"তাহলে?"
আমি:" ক্লাস নাইন এ পড়তে হুমায়ুন আহমেদের একটি উপন্যাস পড়ে বুঝলাম আসলে ঐটা প্রেম ছিল!"
অধরা: "হা হা হা, আপনি উনাকে কিছু বলেন নাই?"
আমি:"কিভাবে বলি, আমি তো তখন জানতামই না যে এরকম কিছু আছে!"
অধরা:"আহা রে! আপনার ওই সময়ের অনুভূতির কথা বলেন?"
আমি:"মেয়েটি আমার পাশে বসলে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যেত, কেমন জানি অস্থির লাগতে থাকতো!"
অধরা:"এখন কাউকে দেখে এরকম হয়?"
আমি:"না"
অধরা:"কেন?"
আমি:"হয়তো অনভুতিগুলো অনেক পরিপক্ক হয়ে গেছে, এখন সুন্দর মেয়ে আমাকে আর আকৃষ্ট করে না, বুদ্ধি এবং পরিশীলিত ব্যাক্তিত্ব যতটা করে!"
অধরা:" ওরে বাবা, অনেক কঠিন কথা বললেন!"
আমি:"আমি কঠিন কথা বলি না, যা বিশ্বাস করি তাই বলি!"
অধরা:"গুড, এইটা করতেও সাহস লাগে, সবাই করতে পারে না!"
আমি:"আমি অতটা সাহসী নই!"
অধরা:"কি যে বলেন, আমার তো মনে হয় আপনি অনেক সাহসী!"
আমি:"তাই নাকি? কেন এমন মনে হয়?"
অধরা:"বলবো, আপনার সাথে আগে দেখা হোক, তারপর!"
আমি:"তুমি কি জান আমরা কতক্ষন ফোনে কথা বলছি?"
অধরা:"না, কেন?"
আমি:"দেড় ঘন্টা চলে গেসে, তুমি কি ঘুমাচ্ছ?"
অধরা:"বলেন কি? আপনার সাথে কথা বললে টের পাই না যে সময় চলে যাচ্ছে, কেন জানি সময় আমার জন্য স্থির হয়ে যায়!"
আমি:"তোমার মনে হচ্ছে ইনফাচুয়েশন হয়ে গেছে, এই জিনিসটা ভালো না!"
অধরা:"আই ডোন্ট কেয়ার!"
আমি:"কেন?"
অধরা:"আমি যদি আপনার প্রেমে পড়ি, সেটা তো আমার সমস্যা, তাই না?"
আমি:" না দেখে কারো প্রেমে পড়া উচিত না!"
অধরা:"আমি দেখেই পড়বো, চিন্তা কইরেন না, হাসতে, হাসতে!"
আমি:"সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা করতে হয় না!"
অধরা:"আমি তো আপনার সাথে মজা করি না, যা মনে হয় তা বলি!"
আমি:"ভেরি গুড! আচ্ছা তুমি কলকাতার কোনো লেখকের বই পড়ো?"
অধরা:" না, কেন? আপনি?"
আমি:"আমি এখন পর্যন্ত একজন লেখকের বই পড়েছি উনার নাম সুনীল গঙ্গোপধ্যায়"
অধরা:"কোন বই?"
আমি:"পূর্ব-পশ্চিম, এই বইটা পড়ে দেখো..."
অধরা:"আচ্ছা, পড়বো!"
আমি:"এই আজকে রাখতে হবে, কিছু কাজ আছে!"
অধরা:"ঠিক আছে, পরে কথা হবে, ভালো থাকবেন!"
আমি: "তুমিও"
আমি লাইন কেটে দিলাম||
(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ: এই লেখার প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক এবং এই লেখা কোনো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে অপমানিত করার জন্য নয়! নিজের অজান্তে যদি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি, তাহলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ||)
(চলবে)