পোস্টস

উপন্যাস

ইছামতী’র কথোপকথন

১৪ জুলাই ২০২৪

সাফী সিদ্দিকী

বিকাল ৫ টা। কাল টিউশন থেকে দেয়া ৩০০০ টাকা দিয়ে কি কি বই কেনা যেতে পারে সেটার একটি তালিকা করতেছে অর্ণব। তালিকার প্রথমেই আছে বিভূতিভূষণের শেষ প্রকাশিত উপন্যাস ইছামতী। বইটা অনেক দিন থেকে পড়বে-পড়বে বলে আর পড়া হচ্ছিল না অর্ণবের। তাই আজ বইটি কিনার জন্য পৌর বাজারের রাকিব ভাইয়ের দোকানে গেলো সে।

ইছামতী ছাড়াও আরো কিছু বই দেখতেছিল সে। পাশ থেকে কেউ একজন বলছে, “এই যে লাল টি-শার্ট, শুনছেন? “মেয়েটার দিকে তাকানোর পর আবছা-আবছা চেনা লাগতেছিল অর্ণবের। 

“আপনাকে ঠিক চিনতে পারতেছি না” বলল অর্ণব।

প্রতি উত্তরে মেয়েটি বলল “আমি নিলা, সায়ানের স্কুল ফ্রেন্ড। “ 

“আপনার সাথেই তো বোধ হয় সেদিন জেলা স্কুলের বৃক্ষমেলায় দেখা হয়েছিল, তাইনা? “

“জ্বি”

“সরি। আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারিনি। “ 

“চিনবেন কি করে। সেদিন তো কথাই হলো না ভালো করে। “

“আসলে সেদিন খুবই বিজি ছিলাম, তাই পরিচয় হয়ে উঠে নি। বাই দা ওয়ে, আমি অর্ণব। “

“সায়ান আপনার ডিপারট্মেন্টাল ফ্রেন্ড? “

“জ্বি, এই দিকে কি বই কিনতে আসছেন? “

“হুম। “

“আপনার বই কেনা শেষ? “

“হুম। আপনার? “

“আমারও। সামনে একটা ভালো কফি সোপ আছে, কফি খেতে-খেতে কথা বলা যেতে পারে? যদি আপনার আপত্তি না থাকে। “

“কফি খেতে আমার কোনো আপত্তিনেই। “

কফি সোপে বসার পর অর্ণব বলল, “কী কফি খাবেন, ক্যাপুচিনো নাকি এসপ্রেসো? “

“ব্লাক কফি। “

রফিক ভাই দুটা ব্লাক কফি দিয়েন আর আমারটাতে এক চামুছ চিনি বাঁড়ায় দিয়েন বলে অর্ডার করলো অর্ণব।

“আপনার কি ব্লাক কফি পছন্দ? “

“হুম, আমার মতে কফির আসল স্বাদ থাকে ব্লাক কফিতে আর চায়ের আসল স্বাদ থাকে লাল চায়ে। আপনার কি মনে হয়। “

“আমারও তাই মনে হয়। ব্লাক কফিতে কফির ঘ্রাণ পাওয়া যায়, যেটা অন্য কফিতে পাওয়া যায় না। বাইদা ওয়ে, আপনি আজ কি কি বই কিনলেন? “

“আরেক ফাল্গুন আর দেয়াল। আপনি? “

“ইছামতি আর বাদশাই নামদার। “

“বাদশাই নামদার আমার একখনো পড়াহয়ে উঠে নি। “

“বেশতো, আপনি আমার কাছ থেকে ধার নিতে পারেন। “

রফিক ভাই কফির কাপ টেবিলে রাখলো।

নিলা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, “আপনার কবিতা পড়া হয়? “

“কবিতাতে আমার দৌড় জীবনান্দের দুজনঅবদি। “

“কবিতা আমার বরাবরই ভালো লাগে। বিশেষকরে জীবনানন্দের। মানুষটার নাম বড়ই অদ্ভুত, জীবন+আনন্দ। অথচ জীবনে কোনো আনন্দ নেই। শেষে ট্রামেরনিচে পরে মরতে হলো। “

“দুহাতে দুটো করে চারটে নারিকেলছিল কিন্তু। “

“আচ্ছাআপনার কি মনে হয়কেউ হাতে নারিকেল নিয়ে মরতে যাবে। “

“হয়তো ওনার অন্যরকম ভাবে মরতে ইচ্ছা করেছিলো। আর ট্রামের নিচেপরে কেউ মরে নাকি! একমাত্র উনি ছাড়া। “

“উনার প্রতি আপনার রাগ মনে হচ্ছে। “

“রাগবলতে, ওনার কবিতা দিয়েএকমেয়ে কে ইম্প্রেস করার ট্রাই করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ। “

“আচ্ছাছেলেদের মেয়েদের ইম্প্রেস করার পন্থা কি শুধু অন্যদের লেখা গান আর কবিতা? “

“আমি ইন্ট্রোভার্ট মানুষ। তাই অন্যের কবিতাই সম্বোল। আপনার বয়ফ্রেন্ড কিভাবে ইম্প্রেস করার ট্রাই করেছিল?”

“ওইযে একটা গান আছেনা, আমি এক গরিব প্রেমিক নিলা। এটা দিয়ে। “

“বেশ ইম্প্রেসিভ। “

“ইম্প্রেসিভতো বটেই। ও আমার স্কুলফ্রেন্ড ছিল। আর ওরপ্রতি আমার আগে থেকেই মায়া কাজ করতো। ও নিন্মবৃত্ত ছিল, সে জন্যহয়তো। আমাদের সাড়ে চার বছরের প্রেম ছিল আর আজসে আমার প্রাক্তন। “

“ব্রেকআপ কেন হল? “

“দূরত্ব। ও বুয়েটে পড়ে। ওর ওরক্যাম্পাসের একজনকে ভালো লাগে সাথে আমার প্রতি ইগনোরেনজ বাড়তে থাকে। “

“মানুষের জীবনে এই রকম খারাপসময় আসবে। এটাই স্বাভাবিক। “

“হুম, আজ উঠি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। “

“বইটা নিয়ে যান। পড়া শেষে সায়ানের মারফতে পাঠায় দিয়েন। “

“ধন্যবাদ। “

বেশ কিছুদিন পর সায়ানের নাম্বার ভেসে উঠলো অর্ণবের মোবাইলে।

ফোন পিক-আপ করার পর সায়ান বলল, “অর্ণব কই তুই। “

“আমি আশরাফ ভাইয়ের দোকানে। আয় এইখানে। “

আশরাফ ভাইয়ের দোকানে রোজ জমে ওদের চায়ের আড্ডা। পাঁচ মিনিট পর সায়ান আসলো আশরাফ ভাইয়ের দোকানে।

সায়ানঅর্ণবের দিকে বাদশাই নামদার বই আর একটা বিয়ের কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলল, “এইনে তোর বই আর কার্ড। “

অর্ণব বলল, “কার বিয়ের কার্ড। “

“নিলার। তোকে অবশ্যই আসতে বলেছে। “

“আচ্ছা। “