পোস্টস

প্রবন্ধ

কসবা উপজেলার জয়পুর গ্রামের নামকরণ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য

১৬ জুলাই ২০২৪

এস এম শাহনূর- কবি ও গবেষক

সংস্কৃতির রাজধানী ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলাধীন ঐতিহাসিক মূলগ্রাম ইউনিয়নের অন্তর্গত সবচেয়ে ছোট্র গ্রামের নাম জয়পুর। অদের খাল ঘেঁষা জয়পুর গ্রাম ২৫০ বছর ধরে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করে চলেছে। গ্রাম বাংলার আর দশটি গ্রামের মত হলেও তরুণ লেখক ও ছড়াকার বি এস সাইফুর রহমানের কলমের খোঁচায় গ্রামের এক ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন, 
"গ্রামটি আমার ছোট্র অতি
প্রকৃতিতে ঘেরা
ফুলে ফলে ফসলে তার 
সর্ব দিকে সেরা। "

এক নজরে জয়পুর গ্রাম:
(১) আয়তন: প্রায় ১ বর্গকিলোমিটার 
(২) জনসংখ্যা: ২৫০০ জন (প্রায়)
(৩) পুরুষ ও মহিলা অনুপাত: ৪৫ঃ৫৫
(৪) মোট ভোটার: ৮৫০জন
(৫) শিক্ষার হার: ৬৫%
(৬) দারিদ্যতার হার: ৪%
(৭) ওয়ার্ড সংখ্যা: ০১টি
(৮) মৌজার সংখ্যা:  ০১টি
(৯) বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা: ৪ জন 
(১০) বিরাঙ্গনা নারী: ০১ জন।


আরও যাকিছু রয়েছে:
✪ মসজিদ: ০১ টি
✪ ঈদগাহ ময়দান: ০১ টি
✪ কবরস্থান: ০১ টি
✪ বড় দীঘি: ১ টি। প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত এ দীঘির আয়তন ১২ বিঘা।
✪ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: ০১ টি 
✪ ক্রীড়া সংগঠন: ০১ টি 
✪ গোত্র বা গোষ্ঠী: ০৫ টি 
✪ মাজার: ০৩ টি

➤ শেরপুর-জয়পুর সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়।  এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা বিস্তারে দুই গ্রামের বাতিঘর।

সীমানা:
উত্তরে:  কাইতলা
দক্ষিণে:  মেহারী 
পশ্চিমে:  গোয়ালী ও বল্লভপুর
পূর্বে: চারগাছ গ্রাম।

পেশা:
✪ কৃষিজীবী: ২০%
✪ প্রবাসী: ১৫%
✪ চাকুরীজীবি: ২৫%
✪ ব্যবসায়ী: ২৫%  
✪ অনান্য: ১৫%

 

🇧🇩 মুক্তিযুদ্ধে জয়পুর:
৬ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী চারগাছ হতে বিটঘর যাবার পথে ৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে যারা ছিলো জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা।

 

জয়পুর গ্রামের আদি বসতি:
যে সকল ব্যক্তির হাত ধরে জয়পুর গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম কয়জন হলেন :
(১) সৈয়দ উদ্দিন ভূইয়া
(২) আইন উদ্দিন ভূইয়া 
(৩) জয়ন উদ্দিন ভূইয়া
(৪) সুরুত আলী ভূইয়া
(৫) আব্দুল কাদির পাঠান।

 

গোষ্ঠী /গোত্র /বাড়ি গুলোর নাম:
১. ভূইয়া বাড়ি বা ব্যাপারী বাড়ি নামে প্রচলিত
২. পাঠান বাড়ি 
৩. মিয়াজান বাড়ি
৪. পাছুর বাড়ি
৫. সরকার বাড়ি
৬. খন্দকার বাড়ি বা গাবৌদ্দি বাড়ি

 


জয়পুর গ্রামের নামকরণ:
কবি ও গবেষক ড. এস এম শাহনূর প্রণীত  "কসবা উপজেলার ইতিবৃত্তে"  জয়পুর গ্রামের নামকরণ বিষয়ে চমৎকার দু'টো তথ্য পাওয়া যায়।

(১) গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, "তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক এ গ্রামের নামকরণ করা হয় জয়পুর। কিন্তু ১৯১০-১২ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্রামের তালিকায় উক্ত গ্রামের নাম খোঁজে পাওয়া যায়নি। তাই এ তথ্যটি গ্রহণযোগ্য নয়

(২) আবার কারো কারো মতে, উক্ত জনপদে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি তার কাজ কিংবা কথা দ্বারা   কাইতলার জমিদার অবনী চন্দ্র রায় চৌধুরীর মন জয় করায় তিনি এ গ্রামের নামকরণ করেন জয়পুর। পুর শব্দটির অর্থ অনেক বুঝালেও স্থান নামের ক্ষেত্রে বর্তমান অর্থ গৃহ, গ্রাম বা নগর ইত্যাদি। আর জয় অর্থ আনন্দ বা উল্লাস।

 

বাউলগানের আখড়া:
যাত্রা পালা, নৌকা বাইচের পাশাপাশি সেই পাকিস্তান আমল থেকে উক্ত গ্রামে প্রতিবছর বাউল গানের আসর বসে। গ্রাম বাংলার ঐহিহ্য বাউল গানকে তারা বুকে লালন করে। তাইতো বহু বিখ্যাত বাউল শিল্পীর পদচারণায় সমৃদ্ধ হয়েছে জয়পুর গ্রামের লোক সংস্কৃতির ইতিহাস। জনপ্রিয় যেসকল শিল্পী এখানে এসেছেন, গেয়েছেন গান, তাঁরা হলেন:
✪ ফোক সম্রাজী মমতাজ বেগম (সাবেক এমপি)
✪ বাউল শিল্পী আবুল সরকার 
✪ বাউল গানের লেখক -শাহআলম সরকার
✪ বাউল শিল্পী - কাজল দেওয়ান 
✪ শিল্পী শরিফ উদ্দিন সহ অনেক।

 

পবিত্র মাজার রয়েছে ৪টি:
(১) সর্ব ত্যাগী মজনুম পাগল দয়াল বাবা আব্দুল আলীম শাহ (রঃ)
(২)  দায়াল বাবা কাদির ফকির শাহ (রঃ)
(৩) ফকির রাবেয়া খাতুন (রঃ)
(৪) দয়াল বাবা চাঁন মিয়া শাহ (রঃ)


বীর মুক্তিযোদ্ধা চারজন হলেন:
(১) বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান ভূইয়া
(২) বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ভূইয়া
(৩) বীর মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়া পাঠান
(৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম

 

নারী বিরাঙ্গনা ১ জন:
✪ হাফেজা খাতুন

 

 

➤ তথ্যঋণ:

বি এস সাইফুর রহমান  

কবি ও ছড়াকার। 

কথোপকথন-
১.জমসিদ মেম্বার 
পিতা- কাফিল উদ্দিন

২.আব্দুল হান্নান 
পিতা- নেয়ামত উদ্দিন

৩. সুদন মিয়া সর্দার
পিতা - শমসের আলী

✪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজ সংস্কৃতি (বাংলা একাডেমি)