সংস্কৃতির রাজধানী মেঘনা, তিতাস বিধৌত নবীনগর উপজেলার প্রাচীন এক জনপদের নাম বিটঘর। বড় বড়
বিটি ঘর থেকে নাম হয়েছে বিটঘর। বিটঘর গ্রামের সবচেয়ে পুরনো প্রতিষ্ঠানের নাম বিটঘর বাজার। আজ আমি আপনাদেরকে বিটঘর বাজারের ৩০০ বছরের ইতিহাস জানাবো।
প্রাচীনকালের অনেক শহরের বিকাশ ঘটেছে নদীকে কেন্দ্র করে। আমাদের সোনারগাঁ, স্বাধীন সুলতানি আমলের সাতগাঁও, বঙ্গ, জান্নাতাবাদ আরো কত কী। এর অন্যতম কারণ, তখন যাতায়াতের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বাহন ছিল নৌকা। নৌকা আমাদের বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ। আজ থেকে ৩শ বছর আগে বিটঘর বাজারের গোড়া পত্তনের পিছনেও ছিলো জলপথে সহজ যোগাযোগ। নৌকা ছিলো তার প্রধান অনুষঙ্গ।
এক সময় এ বাজার বাঁশ বেতের তৈরি জিনিস পত্রের জন্য বিখ্যাত ছিল। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত মাটির তৈরি হাঁড়ি পাতিলের যোগান দিত এ বাজার। কামারশালার জন্যও বিখ্যাত ছিল এ বাজার। ছুরি, বটি, কাঁচি, কুড়াল, কোদালের জন্য আশপাশের ১০ গ্রামের লোকজন ছুটে আসতো। নিয়ম করে বসতো সোনালি আঁশের হাট। বড় বড় ডিঙা, কোষা নৌকা এসে ভিড়ত এ বাজার ঘাটে। পাট বোঝাই করে সওদাগরের নৌকা চলে যেত কুটি কিংবা আশুগঞ্জের মোকামে উদ্দেশ্যে। এখান থেকে নবীনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে ছিলো সরাসরি নৌকা যোগাযোগের ব্যবস্থা। পুরো বর্ষাকাল জুড়ে বাজারের তিন দিকে পানি থৈথৈ করতো। শতশত নৌকা আসতো চার দিক থেকে। ছিল জেলেদের হাঁকডাক। সারা বছর পাওয়া যেত হরেক রকম মাছ। এখন জলাধার নেই, নেই সেই সুন্দর দৃশ্য।
কবি ও গবেষক ড. এস এম শাহনূর প্রণীত "বিটঘর গ্রামের ইতিবৃত্ত" থেকে জানা যায়, বিটঘর বাজার এক সময় গ্রাম থেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন ছিল। গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন এ বাজারে আসতে হলে একটি লোহার ব্রিজ পার হয়ে আসতে হতো। বাজারের ব্রিজের পশ্চিমে ছিলো মূল বাজার। সময়ের প্রয়োজনে এখন এটি উত্তর দিকে হাই স্কুল পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বিটঘর গ্রামের মানুষের সহজ যাতায়াতের জন্য গ্রামে তিনটি ব্রিজ নির্মাণ করেছিলেন। আজ আর সেই ব্রিজ নেই। আরো জানা যায়, এই গ্রামের জমিদার ভৈরব চন্দ্রের নামানুসারে বিখ্যাত ভৈরব বাজারের নাম হয়েছে। এ সকল কারণে একশ বছর আগেও এটি ছিল একটি নামকরা বাজার। যেখানে বিয়ের শাড়ি, গহনা ঘাটি থেকে শুরু করে বাতাসা, পান, সুপারি, তামাক, আতশ বাজি সবই পাওয়া যেত। সেই আদি থেকে দুধ বাজারের জন্য এটি একটি বিখ্যাত বাজার। রয়েছে মোদি, স্বর্ণকার ও মনিহারি দোকানের সমাহার।
গত শতাব্দীর আশির দশকে এ বাজারে একটি সিনেমা হল ছিল। এটি ছিলো এলাকার মানুষের জন্য বিনোদনের একমাত্র আধুনিক মাধ্যম। লোহার ব্রিজের পাদদেশে ছোট্ট একটি দ্বিতল বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলায় ছবি তোলার জন্য শাপলা স্টুডিও নামে একটি স্টুডিও ছিল। তখন কাইতলা, চারগাছ এমনকি শিবপুর বাজারেও কোনো স্টুডিও ছিলনা।
🇧🇩 বেশি দিন আগের কথা নয়। দুই হাজার সাল থেকে ধীরে ধীরে
গ্রামের মাঝামাঝি মহেশ রোডে (বিলুপ্ত) লোহার ব্রিজের উত্তর পাশে গড়ে উঠেছে আধুনিক মার্কেট। এক সময় এখানেও একটি উঁচু চমৎকার লোহার ব্রিজ ছিল।