১ হাজার বছর আগে জাপানি ভাষায় লেখা ‘গেঞ্জি মনোগাতারি’ বা ‘দ্য টেল অব গেঞ্জি’ কে বিশ্বের প্রথম উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্রাট পুত্র হিকারু গেঞ্জির জীবন এবং রোমান্সকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন মুরাসাকি শিকিবু নামের একজন নারী। ১৯২৫ সালে আর্থার ওয়েলি এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক ভার্জিনিয়া উলফ এই অনুবাদটির রিভিউ লিখেছিলেন ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনে।
জাপানের হেইয়ান সাম্রাজ্যের সময় এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল। সেসময়ে লেখা মূল পান্ডুলিপিটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কবি আকিকো ইয়োসানো গেঞ্জি উপন্যাসটিকে আধুনিক জাপানি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।
মুরাসাকি শিকিবু জাপানের অভিজাত সম্প্রদায়ের একজন নারী ছিলেন। তিনি রাজপরিবারে লেডি-ইন-ওয়েটিং হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। মুরাসাকি শিকিবু তার আসল নাম নয়। সেসময়ের প্রথা অনুযায়ী লেডি-ইন-ওয়েটিং হিসেবে তাকে এই নাম দেয়া হয়েছিল। ফলে তার প্রকৃত নাম অজানাই রয়ে গেছে।
শিকিবু অভিজাত ফুজিওয়ারা বংশে জন্মেছিলেন। মধ্য বিশে তিনি পিতার বন্ধু ফুজিওয়ারা নো নোবুতাকাকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান ছিল। মেয়ের জন্মের দুই বছর পরে কলেরায় মারা যান তার স্বামী। এরপর শোকাহত লেডি মুরাসাকি দ্য টেল অব গেঞ্জি লিখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে লেখক হিসেবে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেসময় সম্রাজ্ঞী শোশির লেডি-ইন-ওয়েটিং বা সহচরীর দায়িত্ব পালনের জন্য মুরাসাকিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিশোরী সম্রাজ্ঞীর শিক্ষক এবং সহচর উভয়েরই দায়িত্বে ছিলেন লেডি মুরাসাকি। এজন্যই দ্য টেল অব গেঞ্জির পরবর্তী অধ্যায়ে রাজপরিবারের আভিজাত্য, সেখানকার জীবনের কথা উঠে এসেছে।
দ্য টেল অব গেঞ্জি একজন নারী লিখেছিলেন। তবে এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এটা প্রাথমিকভাবে নারীদের জন্যই লেখা হয়েছিল। ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার বিশাল এই উপন্যাসটি লিখতে বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছিল। এতে প্রায় ৪০০টির মত চরিত্র ছিল। হেইয়ান সম্রাটদের দরবারে অভিজাত নারীদের সাহিত্য রচনা তাদের মর্যাদার অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হত।
উল্লেখ্য, মুরাসাকি শিকিবু হেইয়ান আমলে জাপানি উপন্যাসিক এবং কবি ছিলেন। দ্য টেল অব গেঞ্জি তার প্রধান কীর্তি। এছাড়া তিনি অনেক কবিতাও লিখেছেন। তার লেখা ডায়েরির বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করে দ্য ডায়েরি অব লেডি মুরাসাকি নামে প্রকাশ করা হয়েছে। সম্ভবত ১০০৮ থেকে ১০১০ সালে তিনি যখন রাজপরিবারে কাজ করতেন সেসময় এই ডায়েরি লিখেছিলেন। ৯৭৮ (মতান্তরে ৯৭৩) খ্রিষ্টাব্দে জন্ম নেয়া এই নারীই ছিলেন বিশ্বসাহিত্যের প্রথম উপন্যাসিক।
সূত্র: বিবিসি, কালচারট্রিপ.কম