পর্ব-৮
মানুষ সামাজিক জীব| মানুষ সম্পর্ক তৈরী ও তা বজায় রাখতে পছন্দ করে| সম্পর্ক দুই ধরণের হয়, একটি নামযুক্ত ও অপরটি নামহীন| নামযুক্ত সম্পর্কগুলো আসলে বেশিরভাগই জন্মগত এবং সামাজিক সূত্রে পাওয়া| প্রত্যেকটি নামযুক্ত সম্পর্কের সাথে কিছু দায়িত্ব আপনা-আপনি অর্পিত হয়| একজন মানুষ যখন সাবালক বা সাবালিকা হতে শুরু করে, তখন এই নামযুক্ত সম্পর্কের বাইরে অন্য সম্পর্ক খোঁজা শুরু করে| সেক্ষেত্রে বিপরীত লিঙ্গের দিকেই মানুষ ধাবিত হয়| বৈচিত্র্য পিয়াসী বলে নামযুক্ত নারী-পুরুষের এই সম্পর্কগুলো একসময় একঘেয়ে লাগতে শুরু করে| একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও একজন নারীর সম্পর্ক, সেটাকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, একসময় একঘেয়ে হয়ে যায়, দায়িত্ব আর কর্তব্য পালন করতে করতে, কিন্তু কখনোই হয়তো কেউই তা প্রকাশ করে না, হয়তো সামাজিকতার ভয়ে!
আমার আর অধরার সম্পর্কের কথা ধরা যাক| আমি কি অধরাকে ভালোবাসি বা অধরা আমাকে?বুঝি না, কিন্তু একটা ব্যাপার মনে হয় আমরা একজন আরেকজনকে পছন্দ করি, গল্প করতে ভালোবাসি, একসঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি| এর নাম কি ভালোবাসা? হয়তো না! এটাকে স্রেফ ভালোলাগা বলা যেতে পারে| ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার সূত্রপাত হয়!
মানুষ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রেমে পড়বে এবং ঘর বাঁধবে - এটাই আমাদের সমাজে স্বীকৃত| এর বাইরে কোনো সম্পর্ক আমাদের সমাজ এখনো স্বীকৃতি দেয়না| যদিও পশ্চিমা বিশ্বের কথা আলাদা| সেইখানে একজন নারী-পুরুষ ভালোবাসলে একত্রে বসবাস করা শুরু করে বিয়ে ব্যাতিরেকে, যেটাকে তারা লিভ-ইন বলে, এইগুলি তাদের সমাজে স্বীকৃত| আমাদের মুসলিম সমাজে এইগুলি কখনো স্বীকৃত হবে না, এর জন্য আমার অবশ্য কোনো আক্ষেপ নেই| আমি জানি একটা নির্ধারিত সময়ের পরে হয়তো আমাকেও বিয়ে করতে হবে|
এই এলোমেলো চিন্তা করতে করতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম, খেয়াল নেই| ঘুম থেকে উঠে দেখি অধরার পাঁচটি মিসকল| আমার কি তাকে কল ব্যাক করা উচিত? আমি কি এই মেয়েটির মায়ায় জড়িয়ে পড়ছি? ভাবতে থাকি| মায়ায় জড়ালে সমস্যা কি? ভাবলাম ফোন দেই|
অধরা: আপনি ঠিক আছেন? এতবার ফোন দিলাম, ফোন ধরলেন না কেন?
আমি: আমি আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, দুঃখিত!
অধরা: আমি ভাবলাম আপনার আবার কিছু হলো নাতো!
আমি: আমার আবার কি হবে? অফিস আর পড়ালেখা সব মিলিয়ে বড়োই ক্লান্ত এবং পরিশ্রান্ত|
অধরা: আপনি কি পড়ছেন, জানতে পারি কি?
আমি: তোমাকে বলা হয়নি, আমি আইবিএ - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সিকিউটিভ এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছি| পড়াশোনার যথেষ্ট চাপ আছে!
অধরা: কংগ্রাচুলেশন্স! আপনি তো আগে বলেন নাই! ঐখানে চান্স পাওয়া তো যথেষ্ট কঠিন|
আমি: আমার জন্য মনে হয় এখন যেকোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা সহজ
অধরা: কেন?
আমি: কারণ এই যে তুমি আমার সাথে আছো!
অধরা: আপনি কি আমাকে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছেন, স্যার?
আমি: জ্বি না ম্যাডাম, আমি সত্যি বলছি|
অধরা: আচ্ছা, আমি আপনার সাথে কথা বললে, বুঝতেই পারি না, যে সময় কিভাবে চলে যায়, এমন হয় কেন?
আমি: কারণ মানুষ সমাজবদ্ধ জীব এবং ভাবের আদান প্রদান করতে পছন্দ করে!
অধরা: ঠিক আছে মানলাম, কিন্তু আর কি কোনো কারন থাকতে পারে?
আমি: পারে, সেটা এখন বলবো না, সামনে সামনি হলে বলবো, ঠিক আছে?
অধরা: নো প্রব্লেমো!
আমি: তুমি আজকে ক্লাস করো নাই?
অধরা: হাঁ, করেছি, মার্কেটিং আর ফিনান্স ক্লাস ছিল!
আমি: তোমার পছন্দের কোনটি?
অধরা: মার্কেটিং, আমার ফিনান্স ভালো লাগে না, ইনফ্যাক্ট অংক করতে কোনো কালেই ভালো লাগেনাই!
আমি: আর অঙ্কই আমার ছোটবেলা থেকে পছন্দের বিষয়!
অধরা: এটাই তো স্বাভাবিক তাই না, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব?
আমি: হয়তো!
অধরা: আচ্ছা, আপনি ইঞ্জিনিয়ার না হলে আর কি হতেন?
আমি: সাহিত্য নিয়ে পড়তাম, হয়তো লেখক হয়ে আত্মপ্রকাশ করতাম!
অধরা: আপনার আব্বু-আম্মু আপনাকে পারমিশন দিতো?
আমি: না!
অধরা: এইজন্য কি আপনার কোনো দুঃখ হয়?
আমি: না, বুয়েট এ পড়তে না পারলে সারাজীবন দুঃখ বয়ে বেড়াতাম!
অধরা: কেন? ব্যাখ্যা করবেন?
আমি: ওই জায়গায় চান্স পেতে বুদ্ধি লাগে, শুধু পড়লে হয়না, আর হাস্যকর শুনালেও, ছোটবেলায় মনে হতো, ওখানে পড়তে না পারলে আমাকে সবাই বেকুব মনে করবে!
অধরা: হেসে, আচ্ছা তাই নাকি?
আমি: হুম
অধরা: আপনি গান শুনেন?
আমি: আমি যখন একা থাকি, তখনি শুনি!
অধরা: কার গান শুনেন?
আমি:ইদানিং তাহসান এর গান শুনা হয়..
অধরা: প্রেমাতাল গানটা কত সুন্দর তাই না?
আমি: হাঁ, গানের কথা তো ওর লেখা, ও সন্ধি-বিচ্ছেদ খুব ভালো পারতো মনে হয় ছোটবেলায়, গানের কথা তো তাই বলে!
অধরা: হা হা হা, আমারও তাই মনে হয়!
(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লেখার প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক এবং এই লেখা কোনো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে অপমানিত করার জন্য নয়! নিজের অজান্তে যদি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি, তাহলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ||)
(চলবে)