Posts

গল্প

এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের কাহিনী

July 26, 2024

অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী

Original Author অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী

85
View

কোনো এক গ্ৰামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বাস করতেন। নাম তাঁর অনিল চক্রবর্তী। তিনি বিবাহ করেননি।ফলে একাই থাকতেন আর বিভিন্ন লোকের বাড়িতে যদি কোনো পুজো থাকত তাহলে পুজো করতেন, এই পুজো করে যা পেতেন তা দিয়েই কোনোরকমে দিন চালাতেন।

খুব সুখে যে তাঁর দিন চলত এমন বলা যায় না আবার খুব দুঃখেও দিন চলত না। একা মানুষ থাকতেন নিজের মতো আর যা আয় হতো তাই দিয়েই কোনোমতে টেনেটুনে দিন কাটিয়ে দিতেন।

ব্রাহ্মণ মানুষটি খুব সৎ ছিলেন। সারাদিন ধরে কৃষ্ণ নামে মেতে থাকতেন। নিজে পুজো করে যতটুকু পেতেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। অতিরিক্ত চাহিদা তাঁর মধ্যে ছিল না।

একদিন পুজো করে ফিরছেন অনিল চক্রবর্তী। সেদিন তিনি চাল,ডাল, আলু, তেল ভালো পরিমাণে পেয়েছেন একটি বাড়িতে পুজো করে। মনে মনে ভগবানের জায়গান করতে করতে ফিরছেন বাড়ির পথে।

হঠাৎ দেখলেন এক জায়গায় পথের পাশে কিছু সোনার গয়না পড়ে আছে। তিনি কাছে গেলেন। একবার এদিক ওদিক তাকালেন। কাউকে দেখতে পেলেন না। ওগুলোর দিকে তাকিয়ে তিনি ভাবলেন, গয়নাগুলো যদি আমি সোনার দোকানে বিক্রি করি তাহলে তো অনেক টাকা পাব। তখন আমার বাড়িতে নূন্যতম অভাবও থাকবে না। পরক্ষণেই আবার ভাবলেন --- নাঃ, এইসব চিনি না জানি না --- কার গয়না --- না নেওয়াই ভালো। তিনি ছুঁয়েও দেখলেন না সেগুলো। 
তিনি ভাবলেন, আমার যেমন চলছে তেমনই চলুক, ভগবান চাইলে আমার অবস্থা আরও ভালো হবে। অনিলবাবু আরও ভাবলেন --- ছোটোবেলায় তো পড়েছিলাম লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। 
তিনি চলে গেলেন সেখান থেকে।

সেদিন রাতে স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে দেখলেন পরমপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বলছেন --- তুমি সত্যিই সৎ। আমি তোমার সততার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। তোমার মধ্যে কোনো লোভ নেই। এটাই আমার ভালো লেগেছে। তুমি শীঘ্রই একটি ভালো সংবাদ পাবে।

এরপর বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। তিনি একদিন তাঁর প্রতিবেশীর মুখ থেকে জানতে পারলেন যে, তাদের গ্ৰামের জমিদার বাড়িতে যে পুরোহিতটি নিত্য পুজো করত সে মারা গেছে। তাই জমিদার মশাই নতুন কোনো পুরোহিত খুঁজছেন। জমিদারবাবু খুব তাড়াতাড়ি চাইছেন কারণ তাঁর গোপালের নিত্য পুজো বন্ধ হয়ে গেছে। জমিদার বাড়ির পুরোহিতটি তিন চারদিন হলো মারা গেছেন। অর্থাৎ আর সময় নষ্ট করা উচিত হবে না মনে করে সেদিনই অনিলবাবু রওনা হলেন জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।

এরপর বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে। তিনি জমিদার বাড়ির নিত্য পুজোর কাজটি পেয়ে গেছেন। এখন তাঁর ঘরে আর কোনো অভাব নেই। প্রতিদিনই জমিদার মশাই পুজোর শেষে অনেক কিছু দেন তাঁকে।

যে সৎ যে নির্লোভ ভগবান তাকে সাহায্য করেন।

--- অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
২৬/৭/২০২৪
 

Comments

    Please login to post comment. Login